২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় সুবিধাজনক অবস্থানে ঋণখেলাপিরা

-

করোনার প্রথম ঢেউ শেষ হওয়ার পর চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়েও সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন ব্যাংকের ঋণখেলাপিরা। গত বছরের পুরো সময়ই ঋণ পরিশোধন না করলেও কাউকে ঋণখেলাপি করা হয়নি। আর এ সুবিধা চলতি মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এতে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করেও ঋণ পরিশোধের চাপ থেকে মুক্ত রয়েছেন ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। এক দিকে ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে, বিপরীতে এসব ঋণ খেলাপিও হচ্ছে না। এতে ব্যাংকের প্রকৃত আয় না বেড়ে বরং কৃত্রিম আয় বেড়ে যাচ্ছে। আর এর ওপর ভর করেই মুনাফা বণ্টন করা হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের মধ্যেও অনেকটা নিশ্চিন্তে আছেন দেশের ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। ব্যাংক ঋণের বড় একটি অংশ দখলে রেখেছেন এসব ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। এর মধ্যে ব্যাংক পরিচালক, বড় কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ছাড় দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক থেকে। টানা ১৫ মাস কেউ ঋণ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি করা হয়নি। তাই এ সময়ের মধ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করে ঋণ নিয়মিত দেখাতে হচ্ছে না এসব ঋণখেলাপির।
সাধারণত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে খেলাপি হয়ে যান একজন ঋণগ্রহীতা। আর খেলাপি হলে, তিনি নতুন করে কোনো ঋণসুবিধা পান না। এমনকি আমদানি-রফতানির মতো কোনো বৈদেশিক বাণিজ্যেও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ নানা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করেন না। আবার সেসব ঋণ খেলাপিও দেখানো হয় না। নানা কৌশল অবলম্বন করে ঋণ নিয়মিত দেখান তারা। যেমন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি ব্যাংক পরিচালক ও প্রভাবশালী হওয়ায় বেনামে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে পুরনো ঋণ পরিশোধ দেখান। কেউবা ঋণের নামে টাকা উত্তোলন করেন, কিন্তু ঋণের অর্থ ছাড় দেখান না। কেউবা ডাউন পেমেন্ট না দিয়েই ঋণ নবায়ন করেন। আবার যেসব ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে ব্যাংকের মালিকানা নেই তারাও প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করেই বছরের পর বছর ঋণ নবায়ন করে আসছেন। এর পরেও কোনো ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে উচ্চ আদালতে রিট করে খেলাপির খাতা থেকে নিজের নাম স্থগিত করে রেখেছেন। এর বাইরে সময়ে সময়ে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ঋণ নবায়নের সুবিধা নেন এ ধরনের ব্যবসায়ী গ্রুপ। যেমন, ২০১৪ সালে ঋণ পুনর্গঠনের নামে মাত্র ১ ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৫০০ কোটি ও ১ হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণখেলাপিরা ঋণ নবায়ন করেন। ওই সময় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করেন মাত্র ১৪টি ব্যবসায়ী গ্রুপ। ঋণ নিয়মিত করে আবার শত শত কোটি টাকা বের করে নেন ব্যাংক থেকে। কিন্তু ওই ঋণ আর পরিশোধ করা হয়নি। গত বছরে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয় ১০ বছরের জন্য। এ ক্ষেত্রে সুদহারেও বড় ধরনের ছাড় দেয়া হয়। যেমন, যখন ঋণ গ্রহণ করেন তখন ঋণের সুদহার ছিল ১৭ শতাংশ। কিন্তু ২ শতাংশ সুদে ঋণ নবায়ন করলে সুদহার স্বয়ংক্রীয়ভাবে ৯ শতাংশে নেমে আসে। এভাবেই সাধারণের আমানতের অর্থঋণ আকারে নিয়ে তা পরিশোধ করছেন না বছরের পর বছর ওই অসাধু গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বর্তমান প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে ব্যাংকিং খাতে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এর বড় একটি অংশই রয়েছে এসব অসাধু ব্যবসায়ী গ্রুপের দখলে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রথমে গত বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাস ঋণ পরিশোধের ওপর শিথিলতা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্দেশনায় তখন বলা হয়েছিল ঋণ পরিশোধ না করলেও কাউকে খেলাপি করা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ছাড়ে সব ধরনের ব্যবসায়ীই বলা চলে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দেন। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ শিথিলতা আরেক দফা বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ শিথিলতা গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এভাবে ব্যাংকের এক টাকাও পরিশোধ না করে অনেক ব্যবসায়ী নির্বিঘেœ পুরো বছর পার করে দেন। এরপর কিছু ব্যবসায়ীর দাবিকে বিবেচনায় নিয়ে এ সুবিধা গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ছাড় আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন ওই সব ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এর ফলে নানা কৌশল অবলম্বন করে তাদের আর ঋণ নিয়মিত দেখাতে হবে না। তাই তারা দুর্যোগের এ সময়টিতে অনেকটা নিশ্চিন্তেই কাটাচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ শিথিলতায় গত বছর ব্যাংকিং খাতে ঋণ আদায় না বাড়লেও খেলাপি ঋণ বাড়েনি, বরং কমে গেছে। ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের হার কমে নেমেছে মোট খেলাপি ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশে। যেখানে গত জুনে ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। মার্চ মাসের খেলাপি ঋণের হিসেব এখন চূড়ান্ত করা হয়নি। করোনার কারণে সীমিত ব্যাংকিং চলাকালে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তথ্য আসতে দেরি হয়েছে। তবে চলতি মাসের শেষ দিকে খেলাপি ঋণের তথ্য চূড়ান্ত করা যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। ওই সূত্র আরো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতিমালা চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করায় মার্চ প্রান্তিকেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে না।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পরিবেশ পরিস্থিতিতে আপাতত বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত সঠিক হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমনটি করা হয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তানে। ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সামাজিকভাবে অনেকটা বয়কট করা হয়েছে তাদের। এসব পদক্ষেপের কারণে ব্যাংকিং খাতের ঋণ আদায় অনেক বেড়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা আরো বেড়ে গেছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে তেমন পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল