১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গুলিবিদ্ধ ১৩ শ্রমিককে ঢামেকে স্থানান্তর

ঈদে বর্ধিত ছুটির দাবিতে আন্দোলন টঙ্গীতে শ্রমিক-পুলিশের সংঘর্ষ

-

ঈদে বর্ধিত ছুটির দাবিতে টঙ্গীতে হামীম শিল্প গোষ্ঠীর ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে গতকাল পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে টঙ্গী শিল্প এলাকার মিল বাজার শহীদ সুন্দর আলী সড়কে ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানা ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত ১৩ শ্রমিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা হলেনÑ মামুন (২৭) পিতা রেহান উদ্দিন, রবি (২১) পিতা রমজান আলী, লতিফ (১৯) পিতা কামাল উদ্দিন, ইমরান (১৯) পিতা কবির হোসেন, রুবেল (২৪) পিতা নজরুল, রুবেল (২২) পিতা চান মিয়া, রনি (২২) পিতা রমজান আলী, এহসানুল হক (৩৫) পিতা আবুল কাশেম, রাজীবুল (২৫) পিতা জাকির হোসেন, হাসান (২৫) পিতা মিন্টু মিয়া, হাসিনা (৪০) স্বামী মিজানুর রহমান, সাব্বির (২২) পিতা ছিরু মিয়া ও সাবিনা (২৫) স্বামী হানিফ। সংঘর্ষে গুরুতর আহত পুলিশের সিটি এসবি শাখার এএসআই রুবেলকে (৩০) টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তারা আরো আগে থেকেই আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১০ দিনের ছুটির দাবি জানিয়ে আসছিলেন; কিন্তু কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সাত দিনের ছুটি দিতে রাজি হয়। পরে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে শ্রমিকরা ১০ দিনের ছুটি ভোগ করার জন্য বিগত দু’টি বন্ধের দিন কাজ করেন। ঈদের ছুটির মধ্যেই আরো একটি বন্ধের দিন পড়ায় শ্রমিকদের হিসাবে তারা মোট ১০ দিনের ছুটি প্রাপ্ত হন। কিন্তু গতকাল সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে জানতে পারেন, তাদেরকে সাত দিনেরই ছুটি দেয়া হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে ১০ দিনের ছুটির দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় কারখানায় পুলিশ মোতায়েন করা হলে শ্রমিকরা পুলিশের সাথে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ফাঁকায় শর্টগানের গুলি বর্ষণ করে। শ্রমিকদের হামলায় শিল্প পুলিশের একজন এএসপি-সহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন বলে তিনি দাবি করেন।
এ দিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের ব্যাপক কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবাল বুলেটের মুখে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে বেলা পৌনে ১টায় শ্রমিকরা পুনরায় একত্রিত হয়ে স্থানীয় মিলগেট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-ময়নসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে হটাতে পুলিশও আরো শক্তি বৃদ্ধি করে। একপর্যায়ে বেলা সোয়া ১টায় কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শর্টগানের গুলি বর্ষণ করে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পুলিশ প্রহরায় যানবাহন চলাচল শুরু হলে বেলা দেড়টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মাসুদ রানা জানান, পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত ১৯ জনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে বুলেটবিদ্ধ ১৩ জন শ্রমিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। পুলিশের একজন অফিসারকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আহত শ্রমিকদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট) বলে তিনি জানান। এ ছাড়া আহত নারী শ্রমিকদের বেশির ভাগই কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ দিকে ঈদ বোনাস, বকেয়া বেতন ও বর্ধিত ছুটির দাবিতে টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার তামিশনা পোশাক কারখানায়ও শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। কারখানাটির আন্দোলনরত শ্রমিকরা সোমবার কর্মবিরতি পালন করে। পরে কর্তৃপক্ষের সাথে সফল আলোচনার পর বেলা ৩টায় তারা কাজে যোগ দেন।
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পারভেজ হোসাইন জানিয়েছেন, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় রাবার বুলেটে আহত ২০ জন শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আহত একজন পুলিশ সদস্যকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
টঙ্গীর মিল গেইট এলাকার হামিম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মিজানুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনটি অযৌক্তিক। প্রতি বছরের মতো এবারো ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ (১০ মে) থেকেই কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, টঙ্গী মিলগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ ৯ শ্রমিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

 


আরো সংবাদ



premium cement