২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উত্তাপ ছড়াচ্ছে ঈদ সেলামির নতুন নোট

-

ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারো উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজধানীর ব্যাংক পাড়ায় টাকার নতুন নোটের বাজার। শিশুদের ঈদ সেলামি দিতে নতুন টাকা সংগ্রহে অনেকে ছুটছেন গুলিস্তান কিংবা মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায়। পুরনো, ছেঁড়াফাটা নোট দিলেই মিলছে ব্যাংকের নতুন নোট। বিক্রেতারা জানান, এবার নোটের দাম প্রতি বান্ডিলে ১ শ’ থেকে ২ শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ও গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায় নতুন নোটের সারি সারি বান্ডিল নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কাউকে দেখলেই বলে উঠের ‘আসেন স্যার আসেন। কত লাগব। একেবারে নতুন’।
এ সময় ক্রেতারা দাম বেশির অভিযোগ করে জানান, ঈদ ছাড়া অন্য সময়ে যে দামে টাকার বান্ডিল কেনা হয় এখন তার দাম তিন গুণ। এ বিষয়ে বিক্রেতারা জানান, প্রতি বছরের চেয়ে এবার তারা একটু দাম বেশি নিচ্ছেন। কারণ গত বছর থেকে করোনার কারণে তাদের অবস্থা করুণ। ব্যবসা নেই। তাই এখন যেহেতু একটু সুযোগ এসেছে তাই ক্ষতি পোষাতে দাম একটু বেড়েছে।
টাকা বিক্রেতারা জানান, তারা ৫ টাকার একটি বান্ডিলের জন্য ১৫০ থেকে ২ শ’ টাকা, ১০ টাকার এক বান্ডিলে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, ২০ টাকার এক বান্ডিলে ১৮০ টাকা, ৫০ টাকার এক বান্ডিলে ২ শ’ টাকা, ১ শ’ টাকার এক বান্ডিলে ১৫০ থেকে ২ শ’ টাকা এবং ২ শ’ টাকার এক বান্ডিল ২ শ’ টাকায় বিক্রি করছেন।
এ দিকে শেষ মুহূর্তে ঈদ মার্কেটে চলছে ছাড়ের ছড়াছড়ি। ঈদ একেবারে নিকটবর্তী হওয়ায় ফুটপাথ মার্কেটে উপছে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন বিপণিবিতানের একাধিক দোকানে দেয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদে তারা যে পরিমাণ কাপড় সংগ্রহ করেছিলেন তা এবার অবিকৃত থেকে যাবে। তাই ছাড় দিয়ে হলেও তা বিক্রি করতে চাইছেন। তাদের ভাষ্য লাভ না হলেও অন্তত মূল টাকাটা ফেরত পাবেন। কারণ ঈদের পরে অবস্থা কী হবে আবার লকডাউন হয় কি না এসব নানান শঙ্কায় তারা আর মাল সংগ্রহে রেখে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
মার্কেটগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, ঈদ আনন্দ উদযাপনের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। কেউ কিনছেন নিজের জন্য আবার কেউবা আত্মীয়-স্বজন বা প্রিয়জনের জন্য।
বিক্রেতারা জানান, গত বছর ঈদে করোনা ও লকডাউনের জন্য দোকান পুরোপুরি বন্ধ থাকায় যে লস হয়েছিল এবার কিছুটা কমেছে। শেষ সময়ে ঈদ বাজার জমে ওঠায় তারা খুশি। করোনার প্রভাব বাড়ার পর আবার কিছুটা কমে আসায় ও গণপরিবহন খুলে দেয়ায় আশানুরূপ বেচা-কেনা করতে পারছেন বিক্রেতারা।
তবে ক্রেতা বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রেও সতর্কতা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারপরও ক্রেতারা অনেকে তা উপেক্ষা করছেন। মার্কেটগুলোতে প্রবেশকালে জীবাণুনাশক হাতে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। বেশির ভাগেরই মুখে মাস্ক আছে। তবে অনেকে এখনও মাস্ক পরছেন না। মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়লেও একেবারেই উপেক্ষিত সামাজিক দূরত্ব। প্রতিটি দোকানে দেখা যোয় প্রচুর ভিড়। ভিড় দেখে অনেকে ক্রেতাকে বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। আর বিক্রেতারা বলছেন তারা যত দ্রুত সম্ভব ক্রেতাদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
অন্য দিকে বিক্রি বেড়েছে ফুটপাথে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করতে ফুটপাথে ভিড় করছেন।
ক্রেতারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে খেয়ে বাঁচা দায়। কিন্তু তারপরও পরিবারের সদস্যদের ঈদ আনন্দ দিতে তারা সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করছেন। তাদের ভাষ্য, বিপণিবিতানে কাপড়ের যে দাম তাতে তাদের দ্বারা কেনাকাটা অসম্ভব। তাই ফুটপাথই তাদের ভরসা। এখানে চাহিদা অনুযায়ী কাপড় যেমন পাওয়া যায় তেমনি দামও নাগালের মধ্যে।
বিক্রেতারা জানান, লকডাউনের কারণে তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখন বাজার একটু জমেছে। এতে বিগত সময়ের লোকসান পুষিয়ে আনা সম্ভব না হলেও অন্তত আপাতত প্রাণ রক্ষা সম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement