৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা
ঈদ বাজার- আবুল কালাম
- ০৬ মে ২০২১, ০১:৩৫
এবারের ঈদে ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। লকডাউন ও করোনা আতঙ্কের কারণে বিক্রি কমে যাওয়া, রাজধানীর বাইরে পাইকারি বিক্রি করতে না পারা এবং ঈদের জন্য দোকানে রাখা পোশাক ক্রেতার অভাবে অবিকৃত থেকে যাওয়ার কারণে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবাসায়ী নেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরের দুই ঈদ ও পয়লা বৈশাখ ঘিরেই তাদের ব্যবসার বড় টার্গেট থাকে। এ নিয়েই বছরের শুরু থেকেই প্রস্তুতি নেন তারা। সময় মতো যাতে রাজধানীসহ সারা দেশে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পোশাক সরবরাহ করা যায় সে লক্ষ্য পূরণেই ব্যস্ত থাকেন তারা। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রমজানের ঈদে। কিন্তু গত বছর থেকে তাদের লক্ষ্য পূরণ তো দূরের কথা দোকান ও স্টাফ খরচ বহন করা মুশকিল হয়ে গেছে। করোনায় বিক্রি কমে যাওয়ায় প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকার লোকশান গুনতে হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় এবারো ঈদ মার্কেটে এক-তৃতীয়াংশ বিক্রি কম হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল হক ভূঁইয়া গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, বাজারের প্রতিদিনের বিক্রির পরিসংখ্যান বলছে এবারের ঈদ বাজারে তারা ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারাবেন। তিনি জানান, প্রতি বছর পয়লা বৈশাক ও দুই ঈদ ঘিরেই তাদের প্রত্যাশা প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ ঠিক হয়। বিশেষ করে রমজানের ঈদে বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। তাই প্রতি বছর রমজান ঘিরেই তাদের প্রস্তুতি থাকে ব্যাপক। সে হিসেবে বিক্রিও হয় প্রত্যাশা অনুযায়ী। তিনি জানান, করোনা শুরুর আগে প্রতি বছর শুধু রমজানের ঈদ উপলক্ষে তাদের ব্যবসা হতো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনা শুরুর পর গত বছর থেকে তা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। এবারো অবস্থা একই। প্রতিদিন বাজার থেকে যে রিপোর্ট তারা পাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে এবার সর্বোচ্চ বিক্রি হবে ১০ হাজার কোটি টাকার। বাকি ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারাবেন তারা। তিনি বলেন, গত বছরও তারা ঈদ-বৈশাখ ঘিরে বড় প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার ছোবলে সবই এলোমেলো হয়েছিল। যার কারণে পুরো বছর লোকশান টেনে আসতে হয়েছে। কিন্তু এবার তারা আশার আলো দেখছিলেন। ধারণা ছিল এবার ঈদ-বৈশাখে ভালো ব্যবসা করবেন। কিন্তু অবস্থা একই হলো। করোনা বৃদ্ধিতে লকডাউনে প্রথম ধাক্কা নিতে হয় পয়লা বৈশাখে। আর এখন ঈদ। লকডাউনে প্রথম দোকান বন্ধ ছিল। খুলে দেয়ার পর প্রথম সপ্তাহ ক্রেতা সঙ্কট ছিল। আর এখন ক্রেতা বাড়লেও সামনে যে ক’দিন সময় আছে তাতে বিক্রি হবে তিন ভাগের এক ভাগ। এতে দোকান কর্মচারী খরচ দেয়া যাবে।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমাদের যে প্রস্তুতি ছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ করোনার প্রকোপ বৃদ্ধিতে লকডাউনে ঢাকার বাইরে পাইকারি বিক্রি হয়নি। তার মতে, ঈদে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা হলেন রাজধানীর বাইরের ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন শত কোটি টাকার কাপড় নিয়ে যান তারা। কিন্তু এবার লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় কাপড় বাইরে বিক্রি হয়নি। ফলে গুদাম ভর্তি কাপড় নিয়ে লোকসানের চিন্তায় আমাদের ঘুম হারাম। আর যারা এখন দায়ে পড়ে বিক্রি করছেন তারা মূল টাকা উঠানোর জন্য কেনা দামে মুনাফা ছাড়া বিক্রি করছেন।
এ ছাড়া রাজধানীতে করোনা আতঙ্কে ক্রেতা কমে গেছে। যারা একান্ত আসছেন তারাও তেমন কেনাকাটা করছেন না। অবস্থায় মনে হচ্ছে ক্রেতাদের হাতে টাকা সঙ্কট। তিনি বলেন, এখন সামনে যে সময় আছে তাতে বিক্রি খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর বিক্রি ভালো জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর করোনার মধ্যেই মধ্য রমজানে মার্কেট খুলে দেয়া হয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে করোনার আতঙ্ক ছিল। যার কারণে মানুষ মার্কেটমুখী ছিলেন না। ফলে সন্ধ্যার পরই মার্কেট বন্ধ করতে হতো। কিন্তু এবার করোনা থাকলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কম। ফলে গত বারের চেয়ে মার্কেট বন্ধের সময় যেমন বেড়েছে তেমনি ক্রেতার সংখ্যা কিছু বেশি। ফলে এবার লাভ না হলেও দোকান ও স্টাফ খরচ উঠে আসবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা