১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্প

গুরুত্বসহ অনুমোদন বাস্তবায়নে গড়িমসি

জমি অধিগ্রহণের কাজই সমাপ্ত হয়নি; ২ বছরে অগ্রগতি মাত্র ৩.৪১ শতাংশ
-

অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হলেও বাস্তবায়নে চলে চরম গড়িমসি। পাস করানোর আগে যত লম্ফঝম্ফ। অনুমোদনের পর সেই গতি গুরুত্ব হারিয়ে যায়। ফলে দেখা যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন যথা সময়ে হচ্ছে না। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির সভা থেকে সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার আড়াই বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। মেয়াদ আর দুই মাস বাকি। অথচ প্রকল্পের অর্থ খরচ হয়েছে মাত্র ৩.৪১ শতাংশ বা ৬১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এখনো জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক মো: আবুল কাশেম। কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না তিনি।
মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ মেট্রিক টন সার খোলা আকাশের নিচে থাকে। ফলে জমিতে এসব সারের কার্যকারিতা কমে যায়। খোলা জায়গায় রাখার কারণে ইউরিয়া সার জমাট বেঁধে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। আর্দ্রতার কারণে সারের গুণগত মানও ঠিক থাকে না। ফলে কৃষকেরা সারের প্রকৃত সুফল পায় না। সে কারণেই সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে মজুদ নিশ্চিত করার জন্য ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে বিএডিসির ২৪টি আপদকালীন গুদাম আছে। এগুলোতে সাধারণ ও সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৪৫ হাজার ও ২ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি বছর এসব গুদাম থেকে ১৭ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। এরপরেও প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন সার খোলা আকাশের নিচে রাখতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৩টি গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে; যার প্রকল্পখরচ ৪৮২ কোটি ৪ লাখ টাকা। এই ১৩টি নির্মাণ হলে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার মজুদ রাখা যাবে। তারপরও মজুদব্যবস্থা পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না বিধায় মন্ত্রণালয় নতুন করে ৩৪টি গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এক হাজার ৯৫৩ কোটি ০৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ৩৪টি গুদাম নির্মাণ প্রকল্প ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের জন্য ৩৪ জেলায় ১৬৯.৯ একর জমির প্রয়োজন। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশে সারের মজুদ সুনিশ্চিত করে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, আপদকালীন সময়ের জন্য সার মজুদকরণ এবং দ্রুত সময়ে প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার পৌঁছানো। চলতি ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটির মাধ্যমে ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণকাজ শেষ করার কথা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ৩৪টি প্যাকেজে বিভক্ত করে স্থানীয় ঠিকাদারদের এই গুদাম দিয়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে। স্টিয়ারিং কমিটির সভায় আপত্তি তুলে বলা হয়, স্টিল স্ট্রাকচারের অবকাঠামো নির্মাণের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা স্থানীয় ঠিকাদারদের নেই। সে ক্ষেত্রে ৩৪টি বাফার গুদামকে এলাকা ভিত্তিক ৬ থেকে ৮টি প্যাকেজ করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্টিল স্ট্রাকচারের অবকাঠামো নির্মাণের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা যাদের আছে সেই সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে। এ দিকে শিল্পসচিবকে দেয়া গত ৮ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডির এক চিঠিতে বলা হয়, প্রকল্পটির এলাকা বা সাইট ৩৪টি। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৯টি জেলায়। জমির মূল্য পরিশোধের অনুমোদন পাওয়া গেছে দুইটি এলাকায়। ছয়টি জেলায় প্রাক্কলন পাওয়া গেছে। দুইটি জেলায় ৭ ধারা জারি করা হয়েছে। ছয়টি জেলায় ৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বাকি ১১ জেলায় জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান আছে। এখনো এই প্রকল্পের পূর্ত কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হলে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আইএমইডি মনে করছে।
আইএমইডির সহকারী পরিচালক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে, বর্ণিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচ্য প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা, প্রকল্প সংশোধন, ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধির পর প্রকল্প সংশোধন না করা সংক্রান্ত প্রচলিত নির্দেশনা বা অনুশাসন ইত্যাদির আলোকে পরিকল্পনা শৃঙ্খলা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিসিআইসি সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে পাঁচ মাস বিলম্ব করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিসিআইসি। এতে প্রকল্পের কাজ প্রথম থেকেই থেমে আছে। ভূমি অধিগ্রহণে ডিসিরা প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর ছাড়া কারো চিঠি গ্রহণ করেনি বলে জমি অধিগ্রহণে আরো দেরি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। অন্য দিকে অনুমোদনের চার মাস পর এসে দরপত্র আহ্বানের পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে বলে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। বিসিআইসিতে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় ক্ষোভের সাথে বলা হয়, প্রকল্পটি যতটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুততার সাথে একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে, বাস্তবায়নে ততটা গুরুত্ব বা গতি পাচ্ছে না।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো: আবুল কাশেমের সাথে গতকাল বুধবার মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার টাকা দিচ্ছে, জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান আছে। সরকারের টাকার ওপর নির্ভর করছে কবে নাগাদ প্রকল্পটি শেষ হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু

সকল