২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নামের মিলের খেসারত কারাভোগের সেই ১৬ মাস ফেরত চাইলেন হাসিনা

-

আসামি না হয়েও পুলিশের ভুলে বিনা দোষে ১৬ মাস কারাদণ্ডের যন্ত্রণা ভোগ করেছেন হাসিনা বেগম। গত মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের নির্দেশে অবশেষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি এর আগে দুপুরে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞা। মুক্তি পেয়ে কারাভোগের সেই ১৬ মাস ফেরত চাইলেন হাসিনা বেগম।
মুক্তি পাওয়ার পর অশ্রুসজল চোখে হাসিনা জানান, তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। তিনি বলেন, তছনছ হয়ে গেছে আমার সংসার। যারা আমার জীবন থেকে ১৬টি মাস শেষ করে দিয়েছে, তাদের শাস্তি চাই। আমার মতো নিরীহ আর কোনো মানুষকে যেন এভাবে বিনা বিচারে কারাভোগ করতে না হয়।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নগরের কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক এলাকা থেকে পুলিশ হাসিনা আক্তার, তার স্বামী হামিদ ও দুই সন্তানকে দুই হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। তদন্ত শেষে হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান তারা। পরে স্বামী-স্ত্রী আত্মগোপনে যান। আসামিরা পলাতক থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১ জুলাই পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী হামিদকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন। পরে তাদের সাজা পরোয়ানা আদালত থেকে টেকনাফ থানায় যায়। ২০১৯ সালে টেকনাফ থানার পুলিশ নামে মিল থাকায় টেকনাফ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাঈল হাজিবাড়ির হাসিনা বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। টেকনাফ থানা সূত্র জানায়, হাসিনা বেগম ও হাসিনা আক্তার, দুজনের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। দুজনের স্বামীর নামও হামিদ হোসেন। তবে শ্বশুরের নাম ও বাড়ির ঠিকানা আলাদা। হাসিনা বেগমের শ্বশুরের নাম মৃত কবির আহম্মদ। আর হাসিনা আক্তারের শ্বশুরের নাম মৃত জলিল আহমেদ। ওই সময় টেকনাফ থানার ওসি ছিলেন প্রদীপকুমার দাশ। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক মেজরকে খুন ও দুর্নীতির মামলায় বরখাস্ত হয়ে তিনি এখন চট্টগ্রাম কারাগারে।
হাসিনা বেগম আরো জানান, আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে তিনি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাকে আইনি সহায়তা দিয়েছেন আইনজীবী ও সাংবাদিক (দিগন্ত টিভির ব্যুরো চিফ) গোলাম মওলা মুরাদ। তিনি বলেন, ‘হাসিনা বেগমের জীবন থেকে ১৬টি মাস হারিয়ে গেল। আমরা ক্ষতিপূরণের জন্য আদালতে আবেদন করব। ঘটনার পর তার স্বামী তাকে ফেলে চলে যান। এক ছেলে মানুষের বাসায় কাজ করে। দুই মেয়ে নানির কাছে বড় হচ্ছে। এই দুর্ভোগের দায়ভার কে নেবে?’
আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আরো জানান, তিনি বিষয়টি গত রোববার চট্টগ্রাম চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁইয়ার আদালতের নজরে আনেন। গত মঙ্গলবার আদালত হাছিনা বেগমকে কারাগার থেকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement