সঙ্কটে না’গঞ্জের হোসিয়ারি শিল্প
লকডাউনে আসতে পারছেন না পাইকার; গোডাউনে পণ্যের স্তূপ- কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ
- ০৫ মে ২০২১, ০১:৩৬
করোনা দুর্যোগ ও লকডাউনের কারণে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি শিল্প। এবারের ঈদ মওসুমে অনেক ব্যবসায়ীর মাথায় হাত। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসতে পারছে না পাইকাররা। ফলে ঈদকেন্দ্রিক বাণিজ্যে ধস নেমেছে এ শিল্পে। সঙ্কটে পড়ে মালিক-শ্রমিকের নীরব কান্না শুরু হয়েছে। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন মালিকরা, ফলে সবাই রয়েছেন সমস্যায়।
দেশের বৃহৎ হোসিয়ারি পল্লী নারায়ণগঞ্জে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ ও ঈদকেন্দ্রিক জমজমাট থাকা এ শিল্পে এখন করুণ দশা। কাজ না থাকায় এ খাতের দেড় লাখ শ্রমিকের ঈদ আনন্দ তো দূরের কথা অনেকের ঘরে খাবারও নেই। অন্য দিকে পয়লা বৈশাখ ও ঈদ মওসুমে বিক্রি করার আশায় আগ থেকেই পণ্য তৈরি করে গোডাউন বোঝাই করে রেখেছেন হোসিয়ারি মালিকরা কিন্তু করোনার কারণে বিক্রি করার মতো কোনো ক্রেতা নেই। এ ছাড়া দোকান ভাড়া, শ্রমিকদের বেতন, নিজেদের সংসারÑ সব কিছুর আর্থিক জোগান দিতে গিয়ে চরম সঙ্কটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির সভাপতি নাজমুল আলম সজল জানান, করোনার কারণে মহাসঙ্কটে পড়েছে হোসিয়ারি শিল্প । কারণ হোসিয়ারি পণ্য দেশের ভেতরে সরবরাহ করা হয়। লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসতে পারেননি। অন্য দিকে মালামাল তৈরি করে গোডাউন স্তূপ করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিক্রি তো নাই।
তিনি জানান, হোসিয়ারি ব্যবসায়া মূলত সিজন কেন্দ্রিক। বিশেষ করে পয়লা বৈশাখ ও দুই ঈদে বেচাকেনা করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোনো মতে টিকে থাকেন। এবার করোনার কারণে পয়লা বৈশাখের ব্যবসা ধস নেমেছে। লকডাউনের কারণে পাইকাররা আসাতে পারেননি। ফলে বকেয়া টাকা পাননি মালিকরা। অন্য দিকে সামনে ঈদের ব্যবসাও নেই। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা মহাসঙ্কটে আছে। পাশাপাশি লোকসানে মুখে এ শিল্পের কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। এভাবে চলতে থাকালে দেউলিয়া যাবেন ৩ হাজার হোসিয়ারি মালিক।
নারায়ণগঞ্জ শহরের একজন হোসিয়ার ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ। শহরের দেওভোগে তার হোসিয়ারি কারখানাটি বাসাতেই। বাসায় কারখানাতে মাল তৈরি করে মার্কেটে পাইকারি সাপ্লাই দেয়। শিশুদের গেঞ্জি ও প্যান্ট তৈরি করে। তিনজন কারিগর নিয়ে নিজে কারখানা চালায়। দু’জন কারিগর লকডাউনের সময় বেতন নিয়ে গ্রামে চলে গেছে। একজন কারিগরকে তিনবেলা খাওয়াতে হয়।
তিনি জানান, ‘আমার সব শেষ। মাল (হোসিয়ারি পণ্য) বানাইয়া ঘরে স্টক করছি। এক পিসও বিক্রি নেই। আগে তিনজন কারিগর আছিল। এখন একজন। এই একজনেরও বেতন দিতে পারতাছি না। কেমনে সংসার চলব। সমিতি থেকে কিস্তিতে টাকা নিয়ে মাল বানাইছি। ঘরে দেড় টাকার মাল। বেচতে না পারলে মইরা যামুগা।’
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে চলছে লকডাউন। ঈদ ঘিরে মার্কেটগুলো জমজমাট থাকে, এবার নেই। রেডিমেড পোশাকের একটি বিশাল অংশ তৈরি করে নয়ামাটিসহ অন্যান্য এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, ফ্যাক্টরি বন্ধ, উৎপাদন নেই, চাহিদাও নেই। পাইকার আসছে না। হোসিয়ারি পল্লীতে যেন সুনশান নীরবতা। নারায়ণগঞ্জে তিন হাজার হোসিয়ারি কারখানা বন্ধ আছে। বেকার হয়ে পড়েছেন দেড় লাখ হোসিয়ারি শ্রমিক।
স্টকের মাল (হোসিয়ারি পণ্য) বিক্রি করা না গেলে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাবেন। বড় বড় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে সারা বছর মাল তৈরি করেছেন রমজানের সিজনের আশায়। কিন্তু পাইকাররা নাই। এভাবে চলতে থাকলে দেউলিয়া হয়ে যাবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। মাঝারি ব্যবসায়ীর পুঁজি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। ছোট ব্যবসায়ীরা ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। ২ লাখ টাকা নিয়েও ব্যবসা করছেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
জানা গেছে , ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা, কুমিল্লা, পাবনা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত প্রায় তিন হাজার হোসিয়ারি শিল্প ইউনিট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। এ শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক লাখ শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন। বছরে প্রায় ১৫-১৬ শত কোটি টাকা স্থানীয়ভাবে হোসিয়ারি উৎপাদিত পণ্যের টার্নওভার অর্জিত হয় এবং অন্য দিকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হোসিয়ারি পণ্য দেশের সর্বস্তরের জনগণের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়।
নয়ামাটি এলাকার হোসিয়ারি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, আমাদের ব্যবসা মূলত ঈদে বেশি। রমজানের আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসেন। নিজেদের পছন্দের মতো পোশাক কেনাকাটা করে নিয়ে যান। এবার লকডাউনের কারণে তারা আসতে পারননি। ফলে নুতন মাল বিক্রি নেই বললেই চলে। পাইকাররা আসতে পারলে বকেয়া টাকাও পেতাম। নতুন মাল বিক্রি করারও সুযোগ হতো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা