১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মুক্তির দাবি পরিবারের

কিডনি ও ডায়াবেটিস সমস্যায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কারাবন্দী রুহুল আমিন গাজী

-

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী প্রায় সাড়ে ছয় মাস ধরে কারাবন্দী রয়েছেন। হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করলেও পরে চেম্বার আদালতে তা স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে করোনার কারণে জামিন শুনানি হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ও একটি কিডনি না থাকায় কারাগারে সঙ্কটে পড়েছেন প্রবীণ এ সাংবাদিক নেতা। কারাগারে নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ না করাতে পারায় তিনি স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে তার পরিবার ও সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন। এ জন্য আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই সাংবাদিকদের এ নেতাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএফইউজে ও তার পরিবার।
বিএফইউজে ও ডিইউজের বারবার নির্বাচিত নেতা রুহুল আমিন গাজীকে গত ২১ অক্টোবর তার কর্মস্থল দৈনিক সংগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দৈনিক সংগ্রামে একটি সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকেই কারাগারে রয়েছেন তিনি। বতর্মানে রুহুল আমিন গাজীকে কাশিমপুর কারাগারে (চিত্রা-১) রাখা হয়েছে। তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক নয়া দিগন্তকে বলেন, হাইকোর্ট থেকে রুহুল আমিন গাজীকে জামিন দেয়া হয়। কিন্তু চেম্বার আদালতে সরকার পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার জামিন ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। তার জামিন শুনানি আবারো হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে হাইকোর্টে আর শুনানি হয়নি।
তার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় তার মামলার শুনানি হচ্ছে না। ভার্চুয়াল আদালতেও এ মামলার শুনানি হচ্ছে না। এ কারণে তার জামিন আটকে আছে।
রুহুল আমিন গাজীর স্ত্রী লুৎফুন নাহার নয়া দিগন্তকে বলেন, চেম্বার আদালতে তার জামিন স্থগিত করে ৮ সপ্তাহের জন্য। কিন্তু সে সময় গত মার্চ মাসের ২/৩ তারিখে শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর শুনানি হচ্ছে না। আইনজীবীদের মাধ্যমে জানতে পারলাম আদালত স্বাভাবিকভাবে চালু না হলে শুনানি হবে না। ভার্চুয়াল আদালতে তার জামিন শুনানি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, রুহুল আমিন গাজী গত বছরের ২১ অক্টোবর আটক হয়েছিলেন। আর হাজী সেলিমের ছেলে তার চার দিন পর ২৫ অক্টোবর আটক হন। হাজী সেলিমের ছেলে জামিন পেলেও রুহুল আমিন গাজীকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তিনি তো সাংবাদিক নেতা। কোনো রাজনৈতিক নেতা নন। তারপরও তার জামিন কেন স্থগিত করা হলো?
তিনি আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, রুহুল আমিন গাজীর একটি কিডনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়েছে। এখন তার মাত্র একটি কিডনি রয়েছে। এ ছাড়া তিনি পুরনো ডায়াবেটিক রোগী। তার তিন মাস অন্তর ডাক্তারি চেকআপ করতে হয়। কিন্তু কারাগারে থাকার কারণে গত সাড়ে ছয় মাস ধরে নিয়মিত ডাক্তার দেখানো ও ওষুধ ঠিক মতো পাচ্ছেন না। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। করোনার কারণে পরিবারের সাথে তার দেখাও করতে দিচ্ছে না। এ অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা চিন্তিত। ঈদের আগেই রুহুল আমিন গাজীর মুক্তি দাবি করেন লুৎফুন নাহার।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, রুহুল আমিন গাজী প্রায় ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাকে একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলায় আটক করা হয়েছে। প্রায় ২০০ দিন ধরে তিনি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। রুহুল আমিন গাজী একজন প্রবীণ ও অসুস্থ মানুষ। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। মানবিক কারণে হলেও তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি এম আব্দুল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনার মধ্যেও গত ১৪ দিনে চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় আটক থাকা সাড়ে ২৪ হাজার আসামিকে ভার্চুয়াল আদালত থেকে জামিন দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি রুহুল আমিন গাজীর মতো একজন প্রবীণ ও শীর্ষ সাংবাদিক নেতার জামিন শুনানিও হচ্ছে না। নি¤œ আদালতের পর হাইকোর্ট থেকে তাকে জামিন দিলেও চেম্বার আদালত তার জামিন স্থগিত করে দিয়েছে। একইভাবে দৈনিক সংগ্রামের বার্তা সম্পাদক সাদা’ত হোসাইন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাকেও জামিন দেয়া হচ্ছে না।
রুহুল আমিন গাজীর একটি কিডনি অপারেশন করে বাদ দেয়া হয়েছে। তার ডায়াবেটিস রয়েছে। করোনার কারণে তার পরিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারছে না। তার নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপও হচ্ছে না। ওষুধও নিয়মিত দেয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় তিনি স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিএফইউজে সভাপতি আরো বলেন, রুহুল আমিন গাজী দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু তার সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে তা অগ্রহণযোগ্য, অমানবিক ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। জামিন পাওয়া তার নাগরিক অধিকার। তিনি আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই রুহুল আমিন গাজী, সাদা’ত হোসাইনসহ সারা দেশে গ্রেফতারকৃত সব সাংবাদিককে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement