২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
আগে জীবন পরে জীবিকা

করোনার এ অবস্থায় সব কোর্ট খুলে দিতে পারি না : প্রধান বিচারপতি

-

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, করোনায় যেভাবে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, এ অবস্থায় আমরা সব কোর্ট খুলে দিতে পারি না। কেননা, আগে জীবন পরে জীবিকা। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিভিন্ন মামলার শুনানি চলাকালীন আইনজীবীরা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানালে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে রোববার বিচারিক কার্যক্রম চলে।
আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল কোর্টে বিচারিক কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের জুডিশিয়াল অফিসার (বিচারিক কর্মকর্তা) দরকার দ্বিগুণ ও তিন গুণ। আইনজীবীরা যদি ভার্চুয়াল কোর্ট করেন, তাহলে একমাত্র উত্তরণের পথ আছে। তা না হলে ৩০ লাখ মামলা কোনো দিন শেষ হবে না।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘ভার্চুয়াল কোর্টের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন মাই লর্ড।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারক নিয়োগ, বিচারক ডাবল-ট্রিপল করা দরকার। বিচার বিভাগ পৃথককরণ হয়েছে ২০০৭ সালে, এখনো চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বিল্ডিংয়ের জন্য সব জায়গা অধিগ্রহণ হয়নি। গাজীপুরের মতো জায়গায় মন্ত্রী সাহেবকে বারবার বলি এটি তাড়াতাড়ি শেষ করেন।
জায়গা নিয়ে গোলমাল, দুই-তিন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে, এটি সুরাহা হয় না। ২০০৭ বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে, আজকে ২০২১। এখনো জায়গা অধিগ্রহণ হয়নি, তারপরে বিল্ডিং করতে হবে। আমি আর কত বলব ?
আদালতে ভার্চুয়ালি যুক্ত সিনিয়র আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ বলেন, বহুতলবিশিষ্ট ভবনের জন্য নির্দেশনা দিতে পারেন। এ ছাড়া উপায় নেই, কেননা আমাদের জমিও কম। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, যেভাবে মামলা বিচারাধীন, দরকার হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি জজ।
আইনজীবী মো: ওজি উল্লাহ বলেন, মামলা দায়েরের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। আগের চেয়ে এখন মামলা দায়েরের হারও বেশি। তাকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, নিম্ন আদালতে ২টার পরে আইনজীবীরা সব বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে যায়। আইনজীবী ওজি উল্লাহ বলেন, দেওয়ানি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা এটি করে থাকেন।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বলেন, রোজা, সামনে ঈদ, হাইকোর্টের বেঞ্চ বাড়ানোর বিষয়টি যদি একটু বিবেচনা করতেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমি পুরো আদালত বন্ধ করিনি। এ অবস্থায় পুরো আদালত বন্ধ থাকা উচিত ছিল, তাও কোর্ট চলছে। ধন্যবাদ জানাবেন সরকারকে যে আইনটি (আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন) করে দিয়েছে। এখনো ভারতে ও পাকিস্তানে আইন হয়নি।
আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, মি. রুহুল কুদ্দুস সমস্যা হচ্ছে কী, এখন হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ১৪০-১৪৫ জন স্টাফ আসেন। যদি হাইকোর্টে এখন ৩০-৪০ কোর্ট বা হাইকোর্ট সব ভার্চুয়ালি খুলে দেয়া হয় আমাদের যে প্রায় আড়াই হাজার স্টাফ আছে, সব চলে আসতে হবে। তা না হলে কোর্ট চালানো যাবে না।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগ চলে মাত্র ৪০ জন স্টাফ দিয়ে। ছয় বিচারপতির জন্য ৪০ জন নয় ৩৬ জন স্টাফ আসে। তাও বয়স্ক ও মহিলা বাদ দিয়ে আপিল বিভাগে ৩৬ জন স্টাফ এবং হাইকোর্ট বিভাগে আসে ১০০ জন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীদের অসুবিধা হচ্ছে এটি আমরা বুঝি। কিন্তু জীবনও তো আছে। জীবনের সাথে জীবিকাও লাগবে। দু’টি লাগবে একসাথে। জীবন-জীবিকা পাশাপাশি যায়। প্রথম জীবন তারপরে জীবিকা। করোনায় যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, এ অবস্থায় তো আমরা সব কোর্ট খুলে দিতে পারি না। আমরা যদি এ অবস্থায় হাইকোর্টে ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে যাই, তাহলে অনেক স্টাফকে সশরীরে কোর্টে আসতে হবে।
আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, প্রধান বিচারপতি তো সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন কোর্টের সংখ্যা বাড়ালে অনেক স্টাফকে কোর্টে আসতে হবে। তাদেরও তো পরিবার আছে। তাদেরকে তো আমরা ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।
আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সমিতির সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি তো বারের সেক্রেটারি। আপনি তো শুধু আইনজীবীদের বিষয়টি দেখছেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতিকে সবার দিক দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যে হাইকোর্টের চারটি ভার্চুয়াল বেঞ্চে বিচারকাজ চলছে। বিচারপ্রার্থীদের কথা ভেবে ভার্চুয়াল আদালত সংখ্যা বাড়াতে বারবার আবেদন জানিয়ে আসছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল