২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৭০ ভাগ পৌরসভায় আর্থিক সঙ্কট প্রকট

-

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে ৭০ ভাগ পৌরসভায় দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা আর্থিক সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। করোনার কারণে সব ধরনের রাজস্ব আদায় বন্ধ থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা, ঈদ ও পূজার বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পৌরসভাগুলোর নিজস্ব তহবিলে অর্থ না থাকায় এবং বেশির ভাগের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা না থাকায় সঙ্কট মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বেতনভাতা খাতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
দেশের ৩২৯টি পৌরসভায় বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। জনপ্রতিনিধিসহ তাদের মাসিক বেতনভাতা আসে ৭৫ কোটি টাকার মতো। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা নিজস্ব আয় থেকে পরিশোধ করার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ পৌরসভার রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র না থাকায় এবং অযোগ্য জনপদকে পৌরসভায় রূপান্তরিত করায় পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার ফলে বেতনভাতা পরিশোধ করতে পারে না পৌর কর্তৃপক্ষ। সরকার উন্নয়ন খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিলেও পৌর কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতনভাতা খাতে বরাদ্দ দেয় বছরে মোট চাহিদার ৫ শতাংশ; যা চাহিদার চেয়ে একেবারেই অপ্রতুল। দেশের প্রায় ৭০ ভাগ পৌরসভায় ২ থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত নিয়মিত বেতনভাতা পাচ্ছেন না চাকরিরতরা। স্থায়ী প্রায় ১০ হাজার পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি অস্থায়ী কর্মচারীরাও একই পরিস্থিতির শিকার। পৌর কর্মচারীরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বেতনভাতা পাওয়া নিয়ে তারা বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তায়। এ মুহূর্তে কর্মচারীরা কারো কাছ থেকে ধার নিয়ে সংসার চালাবেন সে পরিস্থিতিও নেই। তারা আরো বলেন, পৌরসভার আয়ের বড় খাত হচ্ছে গৃহ কর, ট্রেড লাইসেন্স, ভূমি হস্তান্তর কর, বাজার ইজারা। এ খাতে ৩২৯টি পৌরসভায় বছরে গড়ে যে আয় হয়, তা বছর শেষে ঘাটতি থাকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো। এ ঘাটতির দায়ভার চাপিয়ে দেয়া হয় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বেতনভাতা খাতে বকেয়া রয়েছে। তা ছাড়া যারা অবসরে গেছেন তাদেরও বকেয়া রয়েছে শতভাগ পৌরসভায়। এ পর্যন্ত ১১ শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেছেন। তাদের বকেয়া প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। স্থানীর সরকার বিভাগ এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিলেও তা আমলে নেন না বেশির ভাগ পৌর জনপ্রতিনিধিরা। আর এর প্রভাব পড়ে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর।
বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ম ই তুষার নয়া দিগন্তকে বলেন, এমনিতেই পৌরসভার বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে পৌরসভার রাজস্ব আদায় বন্ধ থাকায় বেতনভাতার সঙ্কট প্রবল থেকে প্রবলতর হওয়ায় এ খাতে কোনো অর্থ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দেশের প্রায় বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী। অথচ করোনা মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নসহ অন্য সব নাগরিক সেবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালন করে যাচ্ছেন পৌর জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি জানান, দুর্যোগকালীন সময়ে সঙ্কট মোকাবেলায় দেশের ৩২৯টি পৌরসভার নাগরিক সেবা সচল রাখাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা খাতে ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা বাবদ বিশেষ বরাদ্দ দিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর বরাবর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল আলীম মোল্যা। তা ছাড়া তিনি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনপ্রতিনিধি কর্তৃক হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে মামলার রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৌর কর্মচারীদের দীর্ঘ দিনের এক দফা দাবি বেতনভাতা সরকারি কোষাগার থেকে প্রাপ্তির স্থায়ী সমাধানের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement