১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রধান সড়ক কিছুটা ফাঁকা থাকলেও অলিগলিতে প্রচুর জনসমাগম

মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই
এ এক অচেনা রূপ। নিত্য কোলাহলের শহর এখন প্রায় মানবশূন্য। মাঝে মধ্যে দেখা মেলে দু-একটি গাড়ি বা মানুষের। ছবিটি রাজধানীর মিরপুর রোড থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত -

সরকারের দ্বিতীয় দফায় দেয়া কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন শুক্রবার রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও অলিগলিতে ছিল প্রচুর জনসমাগম। বাজার, ছোট-বড় দোকানগুলোতে ছিল প্রচুর মানুষের উপস্থিতি। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা ও অলিগলিতে ইফতার বাজারেও বেশ জমজমাট অবস্থা দেখা গেছে। এসব স্থানে মানুষ মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই ছিল না। এ দিকে প্রধান সড়কগুলোতে যে একেবারে যানবাহনশূন্য তা নয়, অন্য দিনের চেয়ে কম থাকলেও প্রাইভেট কারের সংখ্যা ছিল বেশি। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচল করতে দেখে গেছে। প্রধান সড়কগুলোতে ছিল পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। ট্রাফিক পুলিশদের ধারণা, লকডাউনের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল গতকাল শুক্রবার হওয়ায় সেগুলোতে ছুটি চলছিল। ফলে রাজধানীতে যানবাহন ও জনসমাগম ছিল তুলনামূলক কম।
গতকাল শুক্রবার সকালে মিরপুরের শেওড়াপাড়ার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রচুর মানুষের ভিড়। শুক্রবার সকালেই বেশির ভাগ বাসার মানুষ বাজার করতে বেরিয়েছেন। তারা দোকানগুলোতে ভিড় করে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করছেন। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড বাজারে মুরগি দোকানে কথা হয় সরকারি চাকরিজীবী কবির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, বাসায় প্রয়োজনীয় খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি বাজারে এসেছেন। মাছ, মুরগি ও সবজিসহ বেশ কিছু পণ্য কিনতে হবে তাকে। তিনি বলেন, বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে কিনতে হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী রতন জানান, তার অফিস থেকে বেতন প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যে টাকা পান তা দিয়ে বাড়িভাড়া দিয়ে খাবার জন্য তেমন কিছু থাকে না। টাকার অভাবে করোনার দোহাই দিয়ে গত কয়েক দিন বাজারে আসেন না তিনি। কিন্তু গতকাল তার শিশু বাচ্চার খাবার শেষ হওয়ায় বাধ্য হয়ে নিচে নেমেছেন। অথচ বাজারে একটি পণ্যও কেনার সাধ্য নেই তার। কারণ প্রতিটি পণ্যের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুপুরের পর থেকেই এলাকাগুলোর রাস্তায় আবারো জনসমাগম শুরু হতে থাকে। এ সময় বেশির ভাগ মানুষ ইফতার কেনার জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও রাস্তার পাশে বসা ইফতারের দোকানে ভিড় করতে থাকে। সেখানে চাহিদা ও দামের সাথে মিলিয়ে ইফতার কিনছেন তারা। এসব ক্রেতার বেশির ভাগকেই মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তবে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউ। তারা খাবার কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দোকানে। একে অপরের সাথে ঠাসাঠাসি করে কেনা কাটা করছেন। এ দিকে সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি এসব দোকানে ভিড় দেখা যায় এ্যাপসভিত্তিক খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকদের। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাইসাইকেল নিয়ে লাইন দিয়ে খাবার সংগ্রহ করে ছুটছেন গন্তব্যে। কাজীপাড়ার মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবারের দিন। বাসায় পরিবার নিয়ে ইফতার করবো। তাই কিছু কিনতে বের হয়েছি। অল্প পয়সায় সবাই মিলে যাতে খাওয়া যায় এমন কিছুই কিনবেন তিনি।
এ দিকে সকালে প্রধান সড়কগুলোর বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট দেখা যায়। তবে দুপুরের পরে চেকপোস্টের ব্যারিকেড থাকলেও পুলিশ সদস্যরা কিছুটা রিল্যাক্স সময় পার করেন। সকালে মিরপুর ১০ নাম্বারে একাধিক চেকপোস্ট থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো সরে যায়। তবে ১০ নাম্বার গোল চত্বর মোড়ে গাড়ি ও রিকশা থামিয়ে পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। এ সময় কয়েকজন পথচারী তাদের আইডি কার্ডও দেখান। পুলিশ সদস্য আশরাফুল জানান, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের উপস্থিতি কম। অপ্রয়োজনে কেউ বের হলে আমরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। ট্রাফিক সার্জেন্ট রনি বলেন, আজকে গাড়ি কম। তাই চেকপোস্ট কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ মানুষ হাসপাতালে যাওয়া-আসার অজুহাত দিচ্ছে। অনেকে আবার বাজারে যাওয়ারও অজুহাত দেখাচ্ছেন। আমরা কাগজপত্র দেখে যাত্রীদের ছেড়ে দিচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement