২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বরিশাল বিভাগজুড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ

হাসপাতালে জায়গা সঙ্কট
বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরে দুই ডায়রিয়া রোগী : নয়া দিগন্ত -

বরিশাল সদর হাসপাতালে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় ডায়রিয়া রোগীদের জন্য হাসপাতাল চত্বরে আলাদা প্যান্ডেল করা হয়েছে। আর সেই প্যান্ডেলের নিচে ৯টি বেড দিয়ে অতিরিক্ত রোগীদের রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে প্যান্ডেলেও জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় সরাসরি মাটিতে প্লাস্টিকের মাদুর পেতে রোগীরা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে যে পরিমাণে রোগী এসেছে তাতে জায়গা সঙ্কুলান হচ্ছে না। ফলে ডায়রিয়া রোগীদের বারান্দাসহ ওয়ার্ডের সামনের খোলা জায়গাতেও রাখতে হয়েছে। ওয়ার্ডের সামনের খালি জায়গায় যাতে রোগীদের খোলা আকাশের নিচে প্রখর রোদের মধ্যে থাকতে না হয়, সে জন্য সেখানে বাঁশ ও সাদা রঙের কাপড় দিয়ে প্যান্ডেল করে দেয়া হয়েছে। তার ওপরে ত্রিপল দেয়া হয়েছে, যাতে বৃষ্টিতেও কোনো সমস্যা না হয় রোগীদের। তবে রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, পুরো ডায়রিয়া ওয়ার্ড অপরিষ্কার। এখানে এসে নতুন করে ডায়রিয়াসহ অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে সঙ্গে রোগী ভর্তির সময় মাত্র একটি স্যালাইন সরকারিভাবে দেয়া হলেও বাকিগুলো কিনে আনতে হচ্ছে। রোগীরা ঠিকমতো সেবা না পাওয়ার পাশাপাশি ঠিকমতো ওষুধ ও স্যালাইন না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ওষুধ সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা।
মিজান নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ওয়ার্ডের ভেতরের মেঝেতে রোগীদের কারণে হাঁটা যাচ্ছে না, তার ওপর ভীষণ অপরিষ্কার। তাই তার রোগী নিয়ে ওয়ার্ডের সামনের মাঠে প্যান্ডেলের নিচে এসেছেন। এখানে বেড পেলেও স্যালাইন ঝোলানোর স্ট্যান্ড পাননি, গাছের ডাল দিয়ে স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন। তার দেখাদেখি পাশের রোগীরাও সেভাবে স্যালাইন স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার আগ পর্যন্ত এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে গত ২ সপ্তাহে এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে প্রায় ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা আক্তার জানান, সরকারিভাবে যে ওষুধ এবং স্যালাইন বরাদ্দ আছে সেগুলো রোগীদের যথাসাধ্য দেয়া হচ্ছে। আর রোগীদের চাপ থাকলেও লোকবল সঙ্কট নিয়েই ওয়ার্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা সবসময় চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের আরপি ডা: মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, জেনারেল হাসপাতালে মাত্র ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এরমধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে দু’টি শয্যা এবং দু’টি শয্যা মহিলা ওয়ার্ডে। তবে এখানে ১০টি করে মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সব কিছুতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্যান্ডেল করে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে আরও ৯টি শয্যা বসানো হয়েছে।
এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা: শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, চলতি মাসের শুরু থেকে করোনার পাশাপাশি বরিশালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ পর্যন্ত বিভাগের ৬ জেলায় ২১ হাজার ৫০০ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। মূলত সব জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি, তবে বরগুনায় আরও বেশি। এখানকার লোকজন গরমের এ সময়টাতে বাসি অর্থাৎ পান্তা ভাত খাচ্ছেন আর নদীর পানি সঠিকভাবে পরিশোধন না করেই পান করছেন। এ কারণেও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি সবাইকে নিরাপদ খাবার খাওয়ার ও পানি পানের পরামর্শ দেন।


আরো সংবাদ



premium cement