১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারে ত্রুটিতে অনলাইন লেনদেন বাধাগ্রস্ত

আগের দিনের রেকর্ড উত্তোলনে কমে গেছে লেনদেন
-

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারের ত্রুটির কারণে গতকাল সারা দিনই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চেক লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে টাকা উত্তোলন করতে না পারায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন গ্রাহক। এ দিকে আগের দিন ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্তে গত মঙ্গলবার রেকর্ড লেনদেন হয়। পরে সিদ্ধান্তের পরিবর্তনের কারণে গতকাল ব্যাংক ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও লেনদন হয় আগের দিনের চেয়ে কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’টি সার্ভার রয়েছে। একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে, অপরটি বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি মীরপুরে। বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার লাইনে সমস্যা হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় গতকাল মঙ্গলবার একটি সার্ভার বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব গতকাল সারা দিন স্বয়ংক্রিয় চেক নিষ্পত্তি ও অনলাইন অর্থ স্থানান্তর বা ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) কার্যত্রম বন্ধ থাকে। এর ফলে এক ব্যাংকের চেক আরেক ব্যাংক নিষ্পত্তি করতে পারছে না। আগের দিন যেসব গ্রাহক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য ব্যাংক চেক জমা দিয়েছিলেন, গতকাল স্বাভাবিকভাবেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চেক নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল লেনদেন বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করতে পারেননি গ্রাহকরা। এতে এক গ্রাহকের দেয়া অর্থ লেনদেনের কমিটমেন্ট অন্য গ্রাহক ঠিক রাখতে পারেননি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সিরাজুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে চেক ক্লিয়ায়িং কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। গতকাল সারা দিনই সংশ্লিষ্টরা এ ত্রুটি মেরামতের কাজ করেছেন। আশা করা যায়, মেরামতের কাজ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। পরের কার্যদিবস থেকে এ সমস্যা থাকবে না বলে তিনি আশা করেন। কেন এ ত্রুটি এ বিষয়ে মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল লকডাউন চলাকালে ব্যাংক পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। ওই ঘোষণা অনুযায়ী সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আবার যখন ব্যাংক খোলার ঘোষণা এলো তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এটা কেটে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
ঢিলেঢালা লেনদেন : এ দিকে লকডাউন শুরু হওয়ার একদিন আগে অর্থাৎ গত ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয় ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয় ওই দিন সন্ধ্যায়। এর প্রভাবে পরের দিন ১৩ এপ্রিল ব্যাংকে গ্রাহকের উপচে পড়া ভিড় পড়ে। টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিটি ব্যাংকের শাখায় দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। পবিত্র রমজান ও লকডাউনের কারণে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও হাতে নগদ টাকা রাখতে সবশ্রেণীর গ্রাহক ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের জন্য ভিড় জমান।
এমন একটি শিল্প গ্রুপের তহবিল ব্যবস্থাপক জানান, যেহেতু এক সপ্তাহের ব্যাংক লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়, সে জন্য এক সপ্তাহ অফিস চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এক দিনেই তারা উত্তোলন করেন। যেখানে প্রতিদিন লেনদেন করা হতো। এক দিনে সাত দিনের ব্যয় পরিচালনার অর্থ উত্তোলন করতে গিয়ে তারা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন। অনেক ধকল কাটিয়ে দিন শেষে তারা অর্থ উত্তোলন করতে পেরেছিলেন। কিন্তু রাতে ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্তে তারা স্বস্তি ফিরে পেলেও আগের দিনের ধকল ঠিকই তাদের পোহাতে হয়েছে। এ জন্য গতকাল তাদের আর অর্থ উত্তোলন করতে হয়নি। এমনিভাবে অনেকেরই গতকাল ব্যাংক লেনদেনের প্রয়োজন হয়নি। এর ফলে গতকাল ব্যাংক ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও আগের দিনের চেয়ে গতকাল গ্রাহক সংখ্যা কমছিল। তবে যে পরিমাণ লেনদেন হয় তার মধ্যে সাধারণ গ্রাহক কমছিল। শুধু আমদানি-রফতানির কাজের জন্য বেশির ভাগ লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংকারদের দুর্ভোগ : গতকাল ব্যাংক খোলার দিনে প্রধান কার্যালয় থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ করে শাখায় কর্মরত ব্যাংকারদের আনার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লকডাউনের মধ্যে আফিসে পোঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক কর্মকর্তাই অফিসে আসতে নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।
পূবালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, টঙ্গী কামারপাড়া থেকে কিছু পথ হেঁটে কিছু পথ রিকশায় মতিঝিলে তার অফিসে এসেছেন। এতে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগেছে তার অফিসে আসতে। রোজা মুখে অফিসে আসতে গতকাল তার চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিনি লকডাউনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপূর্ণভাবে পরিপালনের জন্য ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement