২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হাটহাজারী মাদরাসা পরিচালনা পরিষদ প্রধানের খোলা চিঠি

মসজিদে নামাজ আদায় ও মাদরাসা উন্মুক্ত রাখার আহ্বান

-

মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগি নির্বিঘœ রাখতে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতির ওপর বিধিনিষেধ বাতিল এবং দেশের সব নাজেরা ও হেফজখানাকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি দিয়েছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের প্রধান, মুফতি আল্লামা আবদুচ ছালাম চাটগামী।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, গত বছরাধিককাল যাবত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা মহামারী পরিস্থিতি বিদ্যমান। এতে বিশ্বের বহু দেশে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ ও আক্রান্ত হয়েছেন।
আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এ সময়ে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর হার অনেক কম ছিল। উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে মসজিদ-মাদরাসা উন্মুক্ত থাকায় লাখ লাখ মাদরাসাছাত্র, উলামায়ে কেরাম ও মুসল্লিদের ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার ও দোয়ার বরকতে বাংলাদেশে করোনা মহামারীর ক্ষয়ক্ষতি অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম হয়েছে।
চিঠিতে মুফতি আবদুচ ছালাম চাটগামী আরো বলেন, বুধবার থেকে পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক শুরু হয়েছে। এই মাস ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময়। এই মাসে রোজা, নামাজ, জাকাত ইত্যাদি ফরজ আমলগুলোর সাওয়াব সত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়। এ ছাড়া সব নফল আমলের সাওয়াব ফরজের সমতুল্য হয়ে যায়। এই মাসে শ্রমিক-মজদুরসহ অধনীস্থদের কাজ সহজ করলে গুনাহ মাফ করা হয়। রোজাদারদেরকে আহার ও ইফতার করালে এক এক রোজার সাওয়াব বৃদ্ধি এবং জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি লাভ হয়। এসব কিছু আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা:-এর সিদ্ধান্ত, যেটা অনুসরণ করা সব মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। আর এসব অমান্য করা আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূল সা:-এর অবাধ্যতার শামিল। দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মুসলমানকে এর ওপর পূর্ণ আমল করার তাওফিক দান করুন; আমিন।
খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকার নতুন করে দেশব্যাপী মাদরাসাগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি মসজিদগুলোয় মুসল্লিদের উপস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এতে করে সাধারণ মুসলমানদের ওপর জামাতে নামাজ আদায়সহ শরিয়তের হুকুম-আহকাম আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ সচেতনতা বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো জনস্বার্থেই নেয়া হয়েছে বলে মনে করি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে নাজেরা ও হেফজখানা বন্ধ ও মসজিদে মুসল্লিদের সংখ্যা নির্ধারণ করে সরকারি বিধি জারি কোনোভাবেই যৌক্তিক ও প্রত্যাশিত নয়। কারণ প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের আকুতি, মহামারীর এমন ভয়াবহ বিপদ ও জীবনের অনিশ্চিত সময়ে তারা প্রাণভরে আল্লাহর ইবাদত করবেন, আল্লাহর ঘরে গিয়ে তাওবা, ইসতিগফার, নামাজ, তিলাওয়াত ও কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করবেন এবং নিজের জন্য, জাতির জন্য ও দেশের জন্য সাহায্য চাইবেন। কিন্তু তাদেরকে এটা করতে না দেয়া মানসিক নিপীড়নের শামিল। এতে আল্লাহর ক্রোধ ও মহামারীর বিপদ বেড়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা বেড়ে যায়। তা ছাড়া গত দশ মাস ধরে দেশের সব কওমি মাদরাসা এবং মক্তব ও হেফজখানা চালু থাকাকালীন কোনো মাদরাসায় করোনায় মৃত্যুর খবর দেখা যায়নি।
চিঠিতে তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী চলমান লকডাউন পরিস্থিতেও শহর এবং গ্রাম এলাকার প্রত্যেকটি বাজার, নিত্যপণ্যের দোকান ও ব্যাংকগুলোয় দীর্ঘ সময় মানুষের জনসমাগম ও উপচে পড়া ভিড় চলছে। গার্মেন্ট-সহ কলকারখানা চালু রয়েছে। অথচ আল্লাহর হুকুম ফরজ নামাজ, জুমা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবিহ আদায়ের অল্প সময়ের জন্য মুসল্লিদের মসজিদে উপস্থিতির ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ ও সংখ্যা নির্ধারণ করার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি মসজিদের জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতিসহ অন্য যেসব প্রতিবন্ধকতা জারি করা হয়েছে, তা তুলে নেয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোনোরূপ মানসিক কষ্টভোগ ও প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে ও স্বাধীনভাবে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন। পাশাপাশি দেশের সব নাজেরা ও হেফজখানা খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তাতে হাজার হাজার ছাত্রের কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকারের বদৌলতে দেশ ও জাতির ওপর আল্লাহর রহমত নাজিল হবে। অন্যথায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন এবং করোনা মহামারীর বিপদ আরো বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা তৈরি হবে। দয়া করে মুসলমানদের ধর্মীয় ইবাদত আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন না। মুসল্লিরা মসজিদে গেলে করোনা ছড়াবে না, ইনশা আল্লাহ। বরং এতে আল্লাহর রহমত ও সাহায্যের উচ্চ আশা করা যায়। বিজ্ঞপ্তি।

 


আরো সংবাদ



premium cement