১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঈদের আমেজে বাড়ি ফেরা

রাজধানীতে তীব্র যানজট; বাজার মার্কেটে উপচে পড়া ভিড় ষ
-

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নতুন করে কঠোর লকডাউনের আগের দিন গতকাল মানুষ ও যানবাহনের উপচেপড়া ভিড়ে থমকে গিয়েছিল রাজধানীর ঢাকার প্রতিটি প্রান্ত। আজ ১৪ তারিখ রজমানের প্রথম দিন, দ্বিতীয়ত. কঠোর লকডাউনের শুরু হওয়ার কারণে কেউ কাজে, কেউ প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় আবার অনেকে ঈদের আমেজে রওনা হচ্ছেন বাড়ির পথে। ব্যাংকের লেনদেন সীমিত হওয়ার কারণে কেউ আবার নগদ টাকা তুলতে শেষ মুহূর্তে ব্যাংকেও ভিড় করছেন। শত শত মানুষ, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও অনেক পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে রাজধানীর রাস্তাগুলো ছিল কার্যত বন্ধ। তীব্র গরমের মধ্যে আধা ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগছে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। প্রতিটি সিগ্যানালেই শত শত যানবাহন আটকে থাকতে দেখা গেছে। এ দিকে গতকালও মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে ছিল ঈদ কেনাকাটার মতোই উপচেপড়া ভিড়। অনেক মার্কেটে ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে দোকানিদের।
গতকাল রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়দাবাদ ও যাত্রাবাড়ী এলাকা ছিল ঘরমুখো শত শত মানুষের দখলে। মনে হচ্ছে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন তারা। দূরপাল্লার যানবাহন না চললেও চরম ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প উপায়ে ঢাকা ছাড়ছিলেন তারা। একই লাইনের বেশ কয়েকজন যাত্রী একত্র হয়ে মাইক্রো, প্রাইভেট কার, ট্রাক পিকআপ ভ্যানসহ নানা মাধ্যমে গ্রামে ছুটছিলেন। এ সুযোগে চড়া ভাড়া আদায় করে যানবাহনের চালকরা। অতিরিক্ত ভাড়ার লোভে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে গাড়ি ভর্তি করে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে এই পরিবহনগুলো। মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেটকার থামলেই যাত্রীরা যাবেন নাকি, যাবেন নাকি বলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এ দিকে অবৈধভাবে দূরপাল্লার রুটে যাত্রী বহনকারী এসব পরিবহন আটকে ট্রাফিক পুলিশকেও মামলা দায়ের ও জরিমানা আদায় করতে দেখা গেছে। জানা গেছে, পদ্মা নদীর শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে মানুষ ঘরমুখো মানুষের ঢল রয়েছে। সকাল থেকে অপেক্ষা করে গভীর রাতেও নদী পার হচ্ছেন তারা।
গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনালে তিনটি শিশু সন্তানকে নিয়ে একটি যানবাহনের অপেক্ষা করছিলেন শাহনাজ বেগম। অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু কঠোর লকডাউনে আটকে পড়ার ভয় আবার গ্রামের বাড়িতে থাকা স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় জরুরিভাবে তাকে যশোর ফিরে যেতে হচ্ছে। তাই ভোর থেকে গাবতলীতে এসে অপেক্ষা করলেও বাস না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। কিন্তু তারপরও তাকে বাড়ি যেতেই হবে বলে জানান।
খুলনাগামী সালমান জানান, রাজধানীতে প্রায় দিনমজুরের মতোই সামান্য কাজ করে সংসার চালান তিনি। লকডাউনে তার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে যে ক’দিন ঢাকায় থাকবেন সে ক’দিন সঞ্চিত অর্থ ভেঙে খেতে হবে। কিন্তু তার সঞ্চয়ে এতটাকা নেই যে তিনি ঘরে বসে খেতে পারবেন। যার কারণে সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। অনেক কষ্ট হবে জেনেও তিনি বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। লকডাউনের মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে গাবতলী থেকে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন উবারে প্রাইভেটকারচালক মিজান। তিনি বলেন, মাথাপিছু ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় যাত্রী নিয়ে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে নামিয়ে দিচ্ছেন। এজন্য গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের দালালদের ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হচ্ছে। দালালদের মাধ্যমে যাত্রী তোলা হয় বলে জানান তিনি।
এ দিকে মিরপুর থেকে মতিঝিলে আসা হামিদুল ইসলাম জানান, তিনি অফিসে যাবেন বলে সকালে মিরপুর-১০ নম্বরের বাসা থেকে বের হন। রাস্তায় এসে তার চোখ কপালে উঠে যায়। রাস্তায় শুধু মানুষ আর মানুষ। একটি বাসেও সিট খালি নেই। অনেক সিএনজি অটোরিকশা থাকলেও একটিও খালি নেই। তিনি বলেন, মূলত মতিঝিলগামী বাসের সিট ১০ নম্বরে খালি থাকে। অথচ গতকাল তিনি প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে শিকড় পরিবহনের একটি বাসে উঠতে সক্ষম হন। এরপর প্রতিটি সিগ্যালেই তাদের যানজটে পড়তে হয়েছে বলেও জানান তিনি। যেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে মতিঝিল পৌঁছানোর কথা সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়েছে তাকে। দেখা গেছে, মহাখালী হয়ে বিজয় সরণি থেকে কাকরাইল পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ লাইন। আবার জাহাঙ্গীর গেট থেকে ফার্মগেট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত গাড়ির লম্বা লাইন। ৫-১০ মিনিট পর খুবই ধীর গতিতে গাড়িগুলো এগোচ্ছিল। মিরপুর রোড দিয়ে সায়েন্সল্যাব নিউমার্কেট এলাকায় ছিল ভয়াবহ যানজট। তার ছোঁয়ায় এলিফ্যান্ট রোড, গ্রিন রোড, পান্থপথ ছিল যানবাহনে আটকা।


আরো সংবাদ



premium cement