২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘কঠোর লকডাউনে’ মাওয়া শিমুলিয়াঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়

-

দ্বিতীয় ধাপে লকডাউন কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। গতকাল ভোর থেকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও সকাল থেকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে লকডাউনে বাড়িফেরা মানুষের চাপ বাড়তে থাকে ঘাট এলাকায়। তবে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে পদ্মা পাড়ি দিতে ফেরিগুলোতে দেখা গেছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এ ছাড়াও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক যাত্রী ট্রলারে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন।
বরিশালের যাত্রী সোলেমান বেপারী জানান, এক সপ্তাহের জন্য কঠিন লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। ঢাকা শহরে থেকে আয় করতেই পারব না; ব্যয় করতে হবে। কোথা থেকে ব্যয় করব। বাড়িতে গিয়ে না খেয়ে থাকলেও ভালো তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সময় নেই। বাড়িতে যেতে হবে। তাই ফেরিতে ঠেলাঠেলি করে উঠছি। বাড়িতে গিয়ে উঠতে পারলে আল্লাহ চালাবেন। ঢাকায় বসে থাকলে তো না খেয়ে থাকতে হবে। টাকা খরচও তিন গুণ হচ্ছে, সামাজিক দূরত্বেরও কোনো বালাই নেই। মনে হচ্ছেÑ ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় লেগে আছে মাওয়াঘাটে।
লকডাউনের আশঙ্কায় বেশির ভাগ যাত্রী বাড়ি ফিরছেন। ফলে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিগুলোতে যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
অপর দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে অসহনীয় যানজটে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। গত রোববার থেকে অসহনীয় জ্যাম শুরু হয়েছে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে প্রতিদিন অসহনীয় জ্যাম লেগে আছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই স্থানের জ্যামে নাকাল হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর থেকে শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও লৌহজং উপজেলা থেকে শ্রীনগর বাজার এবং বিভিন্ন দফতরে এই পথে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে চলাচলের প্রধান পথ হওয়ায় অটোরিকশা, বাস, পিকআপ, ট্রাকসহ আটটি রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহন চতুর্মুখী যাতায়াত করে। এ কারণে প্রয়োজনের তুলনায় সরু পথ দিয়ে কে কার আগে যাবে এমন প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই জ্যামের শুরু হয়। পরে সময়ের সাথে সাথে তা দীর্ঘ হতে থাকে।
গতকাল দুপুর ১২টার সময় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফ্লাইওভারের নিচের জ্যাম এবং একপ্রেসওয়ের দুই পাশের সার্ভিস লেনে ও শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। শ্রীনগর থানা পুলিশ শত চেষ্টা করেও জ্যামের জট খুলতে পারছে না। যাত্রীরা কেউ কেউ অর্ধ কিলোমিটার ঘুরে ঝুঁকি নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের বেড়া ডিঙ্গিয়ে রাস্তা পার হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে।
বেশ কয়েক দিন ধরে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের সময়সীমা সীমিত করার পর থেকে এই জ্যাম প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সিএনজি চালক তরিকুল বলেন, উমপাড়া থেকে ৮০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী নিয়েছেন আরধীপাড়া টেক্কা মার্কেট যাবেন বলে। এখানে এসে আটকে আছেন দুই ঘণ্টা ধরে। যাত্রী ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে গেছেন। প্রতিদিন আমার মতো অনেক অটোচালককেই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এই জ্যামের কারণে আয় নেমে এসেছে অর্ধেকে। কিন্তু প্রতিটি অটোর জন্য মালিককে দিতে হয় দিনপ্রতি ৩০০ টাকা। জমা দিয়ে নিজের হাতখরচের পর পরিবারের জন্য তেমন কিছু থাকে না।
ওই পথে চলালচকারী শ্রীনগর প্রেস ক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম শ্যামল বলেন, রাস্তাটি নির্মাণের সময় এই রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীর চাপ নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। জ্যামের এই স্থান থেকেই সামান্য দূরে রেলব্রিজের কাজ হচ্ছে। ভালোভাবে বিকল্প রাস্তা তৈরি না করেই অবিবেচকের মতো মাটি দিয়ে উঁচু-নিচু রাস্তা তৈরি করে চালিয়ে দিচ্ছে। অনেক দিন ধরেই যানবাহন চলাচল করার সময় মনে হয় ধূলি ঝড় হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রেলসেতুর নিচে বিকল্প রাস্তা ও এক্সপ্রেসওয়ের ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় নজর না দেয়ায় এই অঞ্চলের বহু মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, মাওয়াঘাটে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। কোনোভাবেই চাপ সামলানো যাচ্ছে না। কোনো স্বাস্থ্যবিধি তারা মানছে না। ফেরিতে গাদাগাদি করেই পারাপার হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়াঘাটের সহ-উপব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে ১৪টি ফেরি দিয়ে এই রুটে চলছে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার। সকাল থেকে ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে চার শতাধিক যাত্রীবাহী ছোট প্রাইভেট কার ও কয়েক শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন।

 


আরো সংবাদ



premium cement