২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা প্রণোদনায় চাকরির বয়স ৩২ বছর করার দাবি

শিক্ষিত বেকারদের সংবাদ সম্মেলন
-

করোনায় বন্ধ সব ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া। ফলে প্রায় দেড় বছর ধরেই ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছে কয়েক লাখ চাকরিপ্রত্যাশী উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী। তাই এই সময়ে অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধার দাবি না করে বরং করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানিয়েছে চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ চাই’ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাসলিমা লিমা। তিনি লিখিত বক্তব্যে করোনার এই বিভীষিকাময় সময়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ কেন করা উচিত তার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্ব আজ অদৃশ্য এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। সরকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সব সেক্টরের মানুষ করোনাকালীন প্রণোদনা পেলেও একমাত্র বঞ্চিত সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম। করোনার বিস্তার রোধে সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে যা এখনো চলমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সাথে সাথে সব প্রকার চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে যায়। তাসলিমা লিমা বলেন, প্রায় এক বছর পর ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়েছে। এ ছাড়া চাকরির বড় আর কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। অন্য দিকে সব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাগুলোও স্থগিত রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী সেশনজটের কবলে পতিত হয়েছে। অধিভুক্ত সাত কলেজগুলোতে সেশনজটের পরিধি এতই বেড়েছে যে, কলেজ থেকে অনেক শিক্ষার্থী চার বছরের স্মাতক ডিগ্রি যথাসময়ে শেষ করতে না পেরে অনেকে সাত কলেজ ছেড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন ইতোমধ্যেই।
তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলন, সিপিডি, পিআরআইসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যায়, করোনায় বেকারত্বের হার ২০ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। এডিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রথম ছয় মাস সার্কুলার হয়েছে আগের বছরের এপ্রিল থেকে ৮৭ % কম।
প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এর আগেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যখন মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৫ বছর তখন প্রবেশের বয়স ছিল ২৭, অবসরের বয়স ছিল ৫৭। ১৯৯১ সালে সেশনজটের পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রবেশের বয়সসীমা করা হলো ৩০ বছর। ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯ আর মুক্তিযুদ্ধাদের হয় ৬০। যখন গড় আয়ু ছিল ৫৭। অবসরের এই দুই-তিন বছর বাড়ার কারণে এই সময় সার্কুলার হয়নি। ১৯৯১ থেকে ২০২১ এই ২০ বছরে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৩। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়েনি। সরকারি নিয়ম অনুসরণের কারণে বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে ৩০ বছরের বেশি এমন জনবল (অভিজ্ঞতা) ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয় না। ফলে বেসরকারি চাকরিতেও সুযোগ সঙ্কুচিত হচ্ছে।
তাসলিমা লিমা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ বা আবেদনের বয়সসীমা ৩০ হলেও সহকারী বিচারকদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২, আবার বিসিএস স্বাস্থ্য তথা সরকারি ডাক্তারদের ক্ষেত্রেও ৩২। অন্য দিকে বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ৩২ বছর পরিলক্ষিত হয়। বিভাগীয় প্রার্থীরা ৩৫ বছর অবদি সুযোগপ্রাপ্ত হন। করোনার এই বিভীষিকাময় সময়ে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা কিন্তু তাদের ৩০ বছরও পাচ্ছেন না। কারণ কোভিড-১৯ ইতোমধ্যেই সবার জীবনের প্রায় দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে আমরা বেকার যুবকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement