২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ৫

কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত চারজন নিজ দলের বলে দাবি করেছে তৃণমূল; গুলির ঘটনায় অমিত শাহের পদত্যাগ চাইলেন মমতা; চতুর্থ দফায় ৫ জেলায় ৪৪ আসনে ভোট পড়েছে ৭৬.১৬ শতাংশ
-

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার চতুর্থ দফার নির্বাচনে সহিংসতা ও সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজনকে নিজেদের দলের বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর একজন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও তৃণমূলের মধ্যে চলা সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ চলছে। গতকাল শনিবার সকালে রাজ্যের পাঁচ জেলার ৪৪টি বিধানসভা আসনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে বেলা অর্ধেক না গড়াতেই নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনার জেরে রাজ্যটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন পাঁচজন। আনন্দবাজার।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার শীতলকুচি বিধানসভা আসনে মাথাভাঙ্গার জোড়পাটকি ভোটকেন্দ্রে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুধু পাঁচজনই নয়, আরো বেশ কয়েকজন এ সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতেই ওই পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, কোচবিহারের শীতলকুচি আসনের জোড়পাটকি ভোটকেন্দ্রের ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে গুলিবর্ষণের এই ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। নিহতরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তা ছাড়া কোচবিহারের শীতলকুচির পাঠানটুলিতে তরুণ বর্মণ নামের ১৮ বছরের এক তরুণ প্রথম ভোট দিতে যান। এ সময় ওই কেন্দ্রে ভোট নিয়ে তৃণমূল- বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। গোলাগুলির সময় ওই তরুণ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তিনি মারা যান। এ বছরই তিনি প্রথম ভোটার হয়েছিলেন। এ দিকে মাথাভাঙ্গা হাসপাতালে নিহতদের মধ্যে তিনজনের মৃতদেহ নেয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভিড় করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এ দিকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিজেপির ভোটবাক্স ভর্তি করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপির হয়ে কাজ করছে। রাতভর মদ-গোশত খেয়ে সকালে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের কাঁধে, তাদের নির্বিচারে গুলি চালানোর অধিকার কে দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মমতার শিবির। স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘দলে দলে মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় বিনা প্ররোচনায় গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী।’ বুথের ভেতরে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল, তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
উল্লেখ্য, ভোটের কয়েক দিন আগে থেকেই উত্তপ্ত ছিল শীতলকুচি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গাড়িতে হামলার পর থেকে সেই উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায়। আর ভোটের দিন সকাল থেকে জোড়পাটকি এলাকা উত্তপ্ত হতে শুরু করে। চতুর্থ দফার পাঁচটি জেলার ৪৪টি আসনের মধ্যে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার ৯টি এবং আলিপুরদুয়ারের পাঁচটি বিধানসভা আসনের সব ক’টিতেই ভোট গ্রহণ হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি আসনের মধ্যে ১১টি, হাওড়া জেলার ১৬টির মধ্যে ৯টি এবং হুগলির ১৮টির মধ্যে ১০টি আসনেও ভোট গ্রহণ হয়। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে এই ৪৪টি আসনের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ছিল ৩৯টি। বিজেপির হাতে ছিল মাত্র একটি এবং বামদের দখলে ছিল তিনটি আসন। আর তাদের জোট শরিক কংগ্রেসের ঝুলিতে ছিল একটি আসন। শনিবার সকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পাঁচ জেলার ৪৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে চলছে ভোট গ্রহণ। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৬.১৬ শতাংশ। উত্তরবঙ্গের জেলা কোচবিহারে ভোট পড়েছে ৭৯.৫৩ শতাংশ। পাশের জেলা আলিপুরদুয়ারে ৭৩.৮৪ শতাংশ। দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলার মধ্যে হুগলিতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৭৫.৯৯ শতাংশ ভোটদাতা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। পাশের জেলা হাওড়াতে ৭৫.৩৫ শতাংশ। দক্ষিণবঙ্গের আর এক জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনাও ভোটদানের হারে তেমন পিছিয়ে নেই। বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেখানে ভোটদানের হার ৭৫.২৯ শতাংশ। রাজ্যে প্রথম তিন দফার ভোটে বিপুল সংখ্যক ভোটদাতা অংশ নিয়েছিলেন। গত ২৭ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৪.৬৩ শতাংশ। ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ৮৬.১১ শতাংশ এবং ৬ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ৮৪.৬১ শতাংশ ভোট পড়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement