২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এমন অচেনা দৃশ্য কেউ দেখেনি

রাজধানীতে বইমেলায় কেনাবেচা : নয়া দিগন্ত -

মেলায় সবই প্রতিবারের মতোই আছে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু ক্রেতা নেই। অন্যান্য বছর মেলার স্টলে স্টলে মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এবারের দৃশ্য ঠিক তার উল্টো। বলা যায় এবার শুরু থেকেই স্টলে স্টলে নিস্তব্ধতা। সারি সারি বইয়ের ছোট বড় স্টলে ব্যস্ততার বদলে বিক্রেতাদের অপেক্ষা। গতকাল মেলার শেষ শুক্রবারেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এক দিকে মেলা শেষের আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি অন্য দিকে ছুটির দিন তারপরও শেষ অবধি মেলায় ক্রেতার দেখা মেলেনি। মেলায় আগত পাঠক ও প্রকাশকরা বলছেন, এ মেলার জন্মলগ্ন থেকে তারা কেউ কোনো দিন এমন অচেনা দৃশ্য দেখেননি। এতে বইমেলায় বিগত চার যুগের রেকর্ড তৈরি হলো।
প্রথমা প্রকাশনীর সামনে দাঁড়ানো অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান মেলায় ক্রেতাহীনতার দৃশ্যে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, বইমেলার জন্মলগ্ন থেকেই তিনি অনেক কিছুর সাক্ষী। কিন্তু এমন দৃশ্য এই প্রথম দেখলেন। এমন ক্রেতাহীন মেলা তিনি কোনো দিন দেখেননি। তিনি বলেন, প্রায় চার যুগ সময় ধরে ধারাবাহিক এ মেলা চলছে। কিন্তু এই প্রথম ক্রেতাহীনতার রেকর্ড তৈরি হলো।
একই ধরনের মন্তব্য করলেন অবসর প্রকাশনীর একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অনেক বছর ধরে মেলার সাথে আছি কিন্তু এমন অচেনা দৃশ্য বিশ^াস করতে পারছি না। যত দিন বেঁচে থাকব এবারের দৃশ্য মনে রাখব।
বিক্রেতারা বলছেন, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে নানা বাধা-বিপত্তির কারণে মেলায় পাঠকের সাড়া মেলেনি। তারা জানান, লোকজন একদমই নেই। অথচ ছুটির দিনে ক্রেতা দর্শনার্থীর ভিড় থাকবে এমন প্রত্যাশা ছিল। গ্রীষ্ম ও করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্তটাই ভুল বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেন। এতে ছোট প্রকাশনীগুলোর দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে বলেও জানান তারা।
উৎস প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা সেলিম জানান, চলমান অবস্থায় এটা নিশ্চিত যে এবার স্টল ভাড়া নিয়েও ঘরে ফেরা দায় হবে। কারণ প্রতিদিন মেলায় যেসব লোকজনের আনাগোনা তারা ক্রেতা নন। মেলাকে তারা আড্ডার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যার কারণে মেলা প্রাঙ্গণে লোকজন চোখে পড়লেও ক্রেতা সঙ্কটে ভুগছেন বিক্রেতারা।
তিনি বলেন, লেখক-পাঠকদের কাছে অমর একুশে বইমেলা ভিন্ন এক আবেগের নাম হলেও এ বছর সেই উৎসাহে অনেকটাই ভাটা পড়ে গেছে। মহামারী করোনার শঙ্কায় বইমেলা শুরু হতে প্রায় দেড় মাস দেরি হয়েছে। সেজন্য মেলায় ক্রেতা আসছেন না।
করোনা সংক্রমণের মধ্যে এই বছর বইমেলা ভার্চুয়াল বা অনলাইনে করার প্রস্তাব উঠেছিল। তবে প্রকাশকদের দাবির মুখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বরে গত ১৮ মার্চ অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়। সে সময় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানিয়েছিলেন, মেলা শুরুর পর করোনা সংক্রমণ বাড়লে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে এবং মেলা স্থগিত হতে পারে।
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৮টি। এর মধ্যে গল্প-১০, উপন্যাস-৯, প্রবন্ধ-৬, কবিতা-৩৪, গবেষণা-১, ছড়া-১, শিশুসাহিত্য-২, জীবনী-৩, মুক্তিযুদ্ধ-৪, নাটক-১, বিজ্ঞান-২, ভ্রমণ-১, ইতিহাস-২, রাজনীতি-১, বঙ্গবন্ধু-৩, রম্য/ধাঁধা-২, ধর্মীয়-১, সায়েন্স ফিকশন-২, অন্যান্য-৩টি বই।
মেলায় এসেছে আহবাব চৌধুরী খোকনের ভ্রমণ কাহিনী ‘জিরো পয়েন্ট’। বইটি প্রকাশ করেছে কৈতর, সিলেট। প্রচ্ছদ করেছেন লুৎফুর রহমান তোফায়েল। হাওলাদার প্রকাশনী প্রকাশ করেছে ‘শাহরুখ খান অ্যান্ড দ্য সিডাকটিভ ওয়ার্ল্ড অব ইন্ডিয়ান সিনেমা’। এর লেখক অনুপমা চোপড়া, অনুবাদক কাউসার সারোয়ার। ইংল্যান্ড সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, লেখক ড. মুকিদ চৌধুরী, প্রকাশক অনিন্দ্য প্রকাশ। চিরকালীন নজরুল, লেখক ড. দিল আফরোজ বেগম, প্রকাশক অনিন্দ্য প্রকাশ।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল