২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফাঁকা মেলায় হাহাকার

-

করোনায় এবার সরাসরি বইমেলা না করে ভার্চুয়াল মেলার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলা একাডেমি। কিন্তু প্রকাশকরা সে সিদ্ধান্ত না মেনে সরাসরি বইমেলা অনুষ্ঠানে চাপে রাখেন বাংলা একাডেমিকে। শেষমেশ প্রকাশকদের দাবিতে বইমেলা শুরুর পর এবার ফাঁকা মাঠে হাহাকার করছেন প্রকাশকরা। তাদের দাবি মেলা শুরু হলেও ক্রেতা না থাকায় প্রতিদিন লোকসানে তারা জর্জরিত। স্টল ভাড়া তোলা দূরে থাক উল্টো পকেট ভেঙে দিনের খরচ চালাতে হচ্ছে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে কোনো কোনো প্রকাশক এখন মেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলছেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর তারা স্টল চালাতে চান না। কিন্তু বন্ধও করতে পারছেন না। কারণ বন্ধ করলে আগামীতে মেলায় অংশগ্রহণে জটিলতা হতে পারে এমন আশঙ্কায় লোকসানের মধ্যেও স্টল চালু রাখতে হচ্ছে। তাই তারা চান বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে মেলা বন্ধের ঘোষণা আসুক। এতে করে অন্তত বাকি দিনের স্টল খরচটা বাঁচবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মেলায় গিয়ে দেখা যায় মাঠ একেবারে ফাঁকা। স্টলে বসে আছেন বিক্রেতারা। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ক্রেতার দেখা মেলেনি। রোদের তাপ কমে এলে ৩টার পর একজন-দুজন করে লোক মেলার মাঠে আসতে থাকেন। শেষ সময়ে কিছু লোকের আনাগোনা দেখা গেলেও তাদের মধ্যে ক্রেতা ছিলেন না। ছোট প্রকাশকরা জানান, তাদের অবস্থা আরো খারাপ। বেচাকেনা শূন্য। তারপরও প্রতিদিন স্টল খরচ প্রায় হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, বইমেলা একটা বড় ক্রেতা আসেন ঢাকার বাইরে থেকে। মেলায় বেচাকেনার একটা বড় অংশ তাদের ওপর নির্ভর করে। কারণ তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তালিকা নিয়ে ঢাকায় আসেন পছন্দের বই কিনতে। এবার তারা মেলায় আসেননি। আবার করোনার কারণে ঢাকার ক্রেতারাও মেলায় আসতে তেমন আগ্রহী হননি। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে মেলা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
এবারের মেলায় বই প্রকাশ যেমন কম হয়েছে, তেমনি বেচাকেনাও না থাকায় মেলায় লেখক, প্রকাশকদের মধ্যে এক ধরনের শূন্যতা লক্ষ করা গেছে। যদিও মহামারীর কারণে বদলে গেছে বইমেলার চিরচেনা রূপ। ফলে মেলায় শিশুদের দেখা মেলেনি। শিশুতোষ বইও প্রকাশ হয়েছে কম। নতুন বই প্রকাশের সংখ্যাও খুবই কম। তাছাড়া মেলায় শিশুপ্রহরের আয়োজনও নেই। কোনো কোনো লেখক ও প্রকাশক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সঙ্গত কারণে তারাও আর মেলায় আসছেন না।
বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা জানান, এবার তারা মেলার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু প্রকাশকদের চাপের মুখে মেলার অনুমতি মিলেছে। এখন মেলা শুরুর পর যদি প্রকাশকরা বন্ধের দাবি জানান তবে সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু বাংলা একাডেমির কাছে এখনো মেলা বন্ধের কোনো সংবাদ নেই। আর প্রকাশকরাও এ বিষয়ে লিখিত কোনো আবেদন করেননি।
মেলায় প্রথমা প্রকাশন নিয়ে এসেছে আসিফ নজরুলের বই ‘সংসার’, আনিসুজ্জামানের ‘মহামানবের সাগরতীরে’, পিয়াস মজিদের ‘বিউটি বোর্ডিংয়ের সেই আড্ডাটা’ এবং মিলন দত্তের ‘কেমন আছে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান’। বইগুলো প্রথমা স্টলে পাওয়া যাবে।
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৪৭টি। এর মধ্যে গল্প আটটি, উপন্যাস ছয়, প্রবন্ধ পাঁচ, কবিতা ১৯, গবেষণা এক, ছড়া দুই, জীবনী দুই, মুক্তিযুদ্ধ দুই, নাটক এক ও অন্যান্য একটি বই।
আজ অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিন মেলা শুরু হবে দুপুর ১২টায় এবং চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

 


আরো সংবাদ



premium cement