২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জেলার-সুপারদের সাথে বৈঠকে আইজি প্রিজন্স

দায়িত্বে অবহেলা করলে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়

-

কারাগার থেকে বন্দী পলায়নরোধসহ কারা অভ্যন্তরে এবং প্রশাসনে আরো বেশি শৃঙ্খলা ফেরানো যায়, সেই উপায় খুঁজে বের করতে ৬৮ কারাগারে দায়িত্বরত জেল সুপার ও জেলারদের নিয়ে অনলাইনে (জুম) বৈঠক করেছেন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স তৌহিদুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সুভাষ, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার নেছার উদ্দিন, সিলেটের জেল সুপার, টাঙ্গাইল কারাগারের জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, কুমিল্লা কারাগারের জেলার আসাদসহ একাধিক জেল সুপার ও জেলাররা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত তুলে ধরেন। এদের মধ্যে একটি কারাগারের জেলার এক কারাগারে দুইজন করে জেলার পদ সৃষ্টি করা যায় কি না সে ব্যাপারে প্রস্তাব দেন।
বৈঠকের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নয়া দিগন্তকে জানান, জুম বৈঠকের শুরুতেই আইজি প্রিজন্স প্রথমে সার্বিক পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, পাঁচ মাস হয় তিনি যোগদান করেছেন। এখানে আসার পরে কাশিমপুরে একটি ঘটনা ঘটেছে, চট্টগ্রামে বন্দী পলায়নের ঘটনা ঘটেছে। নানা ঘটনার কারণে লোকজনের মনে কারাগার নিয়ে একটু বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। এখন সামনের দিনগুলোতে আমরা যাতে সবাই এক হয়ে জেল কোড মেনে সতর্কভাবে কাজ করি। যাতে এ সব ভুলভ্রান্তি আর না হয়। এরপরও যদি কোনো ভুলভ্রান্তি হয় সেক্ষেত্রে আমরাতো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তখন আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাজেই আপনারা সবাই এক হয়ে নিজেদের মধ্যে দলাদলি বা বিভেদ না করে কাজ করেন। তিনি বলেছেন, আমি যখনই আপনাদের প্রমোশন দেয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করি তখনই আপনাদের দিক থেকে নানা বিভেদের কারণে সেটা থেকে পিছিয়ে পড়ি। আমি যেমন প্রমোশনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি, তেমনি প্রশাসনের জন্যও কাজ করে যাচ্ছি। আইজি প্রিজন্স আরো বলেন, আপনাদের কার কার বক্তব্য আছে সেটা এখন বলতে পারেন।
বৈঠকে একজন ডিআইজি প্রিজন্স তার বক্তব্যর একপর্যায়ে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কারাগারে যে দুই-একটি বিছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এর দায় তারও এড়ানোর সুযোগ নেই। তবে কারারক্ষীর সংখ্যা কারাগারগুলোতে কম রয়েছে বলে তিনি জানান। কোনো কোনো কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা থেকে বন্দী আসে। তখন আমাদের কারাগারে লোকসংখ্যা থাকে না। এ কথা বলে তিনি প্রস্তাব করেন, কারাগার থেকে বন্দী এলে সাথে কারারক্ষী পাঠানো হলে সুবিধা হয়। জেল সুপারদের মধ্যে একজন আইজি প্রিজন্সকে বলেন, ‘আমরা আপনার সাথে আছি। এ সব সমস্যা থাকবে। আমরা এগুলো সব মিটমাট করব।’ টাঙ্গাইলের জেল সুপার মামুন বলেছেন, এ অবস্থার মধ্যে আমরা কি বন্দীদের নিয়ে খেলাধুলা, ডিবেট প্রতিযোগিতা শুরু করব কিনা। তখন আইজি প্রিজন্স বলেন, একটু ওয়েট করুন। আমরা আস্তে আস্তে বন্দীর কল্যাণসহ সব কিছুই শুরু করব। অনেকে বলেছেন, একেক জেলে দুইজন করে জেলার দেয়ার জন্য। একজন শুধু বন্দীর জন্য দেখবেন। আরেকজন শুধু কারারক্ষীদের দেখবেন।
আইজি প্রিজন্স, সবার সব কথা শুনে সমাপনী বক্তব্যে একটা একটা করে উত্তর দেন। তিনি বলেন, লোকবল যা লাগে আপনারা সেটা নিয়ে বসেন। আমরা করব। কিন্তু ডিসিপ্লিনের ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। ক্যান্টিনে খাবারের ব্যাপারে, দেখাশোনার ব্যাপারে, জেলখানার ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করার ব্যাপারে আপনাদের সবারই সহযোগিতা দরকার।
৬৮ কারাগারের জেল সুপার ও জেলারদের সাথে জুম বৈঠক প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে গতকাল সোমবার রাতে যোগাযোগ করা হলে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মোমিনুর রহমান মামুন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের যে ভুলক্রটি রয়েছে সেগুলো সংশোধন করে কিভাবে আরো দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে পারি, মূলত এটা নিয়েই তাদের সাথে কথা বলা। বৈঠকে যেসব বক্তব্য উঠে এসেছে সেসব ব্যাপারে তিনি বলেন, কারাগারে যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমাদের ভুলত্রুটি আছে। এই ভুলত্রুটি থেকে আমরা যেন শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে পারি। তবে ডেফেনিটলি আমি সবসময় উচ্চারণ করি, অনিয়ম-দুর্নীতি বা যারা কাজে দায়িত্বে অবহেলা করবে তাদের সাথে কখনই কম্প্রোমাইজ করব না। পাওয়া অনুযায়ী তাদের যেটা প্রাপ্য সেটা অবশ্যই পেতেই হবে।
কারা বিশ্লেষক ও সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স মেজর শামছুল হায়দার সিদ্দিকী জুম মিটিং প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো উদ্যোগ। আইজি প্রিজন্স যদি সবাইকে সম্পৃত্ত করে কাজ করতে পারেন তাহলে দ্রুত একটা রেজাল্ট পেতে পারেন তিনি। আইজি প্রিজন্স যে সবাইকে সচেতন করে তার মনোভাবটাও সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এটাও কিন্তু ভালো দিক বলে আমি মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement