২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দুদকের বারান্দায় ক্ষমতাশালী অনেককেই আসতে হয়েছে : ইকবাল মাহমুদ

-

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন চাহিদা অনুযায়ী জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারিনি। তবে আমরা বার্তা দিতে পেরেছি যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। দুদকের বারান্দায় ক্ষমতাশালী অনেককেই আসতে হয়েছে। গতকাল সোমবার দুদক কার্যালয়ে বিদায়ী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের নখ-দাঁত নেই সেটি অনেক পুরাতন ও প্রাচীন কথা। এটি এখন আর নেই। দুদক যথেষ্ট ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, দুদকের সফলতা যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে জনগণ, সুশীলসমাজ, এনজিও সবাই বিচার করবে। হয়তো আমরা অনেক কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু চেষ্টা করেছি। এই চেষ্টার যদি কোনো ত্রুটি থাকে, সেই ত্রুটি আমার।
বিদায়বেলায় নিজের সম্পদের হিসাব দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, একটা প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি থেকে এই কালচার শুরু করলে হবে না। সব সরকারি কর্মকর্তাকেই সম্পদের হিসাব দেয়া দরকার। তবে সম্পদের হিসাববিবরণী কিভাবে দেবে এবং সেই বিবরণী দিয়ে কী করা হবে সেই ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনের কাঠামো করা দরকার।
কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের চাপের সম্মুখীন হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো কাজে চাপ অনুভব করিনি। কোনো মন্ত্রী-এমপি এখানে তদবির করতে আমার দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছরে আসেননি। তবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। এটি বলতে গেলে আমার নিজস্ব চাপ ছিল। সরকার কিংবা অন্য কোনো চাপে আমি এমনটি করিনি। কারণ সবার আগে আমি রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দিই।
দুদকের দুর্বলতার জায়গার ব্যাপারে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত করার মতো যোগ্য কর্মীর দুদকে অভাব রয়েছে। এখানকার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। আরো জনবল দরকার। আমাদের চেষ্টা ছিল শতভাগ মামলায় সাজা দেয়ার। তার পরও আমাদের ২০২০ সালে ৭৭ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। ২০১৯ সালে যা ছিল ৬৩ শতাংশ।
কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করি। আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা টিম রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে পাঁচ থেকে ছয় কর্মকর্তার চাকরি চলে গেছে। অনেক কর্মকর্তার পদাবনতি হয়েছে। শাস্তি হিসেবে অনেককেই অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
তবে দুদককে আরো বেশি স্বচ্ছ করতে হলে সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যারা দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে। তিনি বলেন, আমরাও একদমই স্বাধীন নই। আমাদের ওপরে আদালত রয়েছেন। সেখানে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। একটি মামলার রিপোর্ট দিলেই হবে না, যদি সেটি আদালতে প্রমাণ করতে না পারি। তবে প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা থাকবেই। সমালোচনা হচ্ছে অলঙ্কার।
মানিলন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, সবাই ভাবে সব ধরনের মানিলন্ডারিং দুদকের কাজ। একটি সময় আমাদের দায়িত্ব ছিল এটি। এখন আমরা ঘুষগ্রহণ থেকে যে মানিলন্ডারিং হয় সেটি তদন্ত করি।
দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, দুদক যথেষ্ট শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠান। দুদকের যে আইন আছে তা দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা লাগবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
একই দিনে বিদায় নেয়া দুদকের কমিশনার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যেও সততার চর্চা করেছি। আর সেই সততা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। তবে করোনার কারণে গত এক বছর মাঠপর্যায়ে সেভাবে কাজ করতে পারিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement