২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীর বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার ৭০ শতাংশই ধুলা

-

রাজধানীর বায়ূদূষণ নিয়ন্ত্রণে আসছে না। দূষণ কমাতে নামমাত্র কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা কাজে আসছে না। বরং দিন দিন তা বেড়ে চলছে। গবেষণা বলছে, ঢাকার বাতাসে ধুলার পরিমাণ গত বছরের তুলনায় এবার ১০ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিদিন রাজধানীতে যে ধুলা উড়ে বেড়ায় তার পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার টন। আর বাতাসে প্রতিদিন যে বস্তুকণা ভেসে বেড়ায় তার ৭০ শতাংশই ধুলা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে রাজধানীতে বসবাসকারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। কারণ দূষিত বাতাসে রয়েছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পারদ, সিসা, ক্যাডমিয়াম, নিকেলসহ নানা ধরনের ভারী বস্তুকণা। ফলে শ^াস গ্রহণের সাথে এগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি নানান জটিল রোগের সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে এর মাধ্যমে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চলতি বছর শুরুর প্রথম মাসের ২৩ দিনে ঢাকার বায়ুমান ১৭ দিনই বিপজ্জনক ছিল। বিপদমুক্ত ছিল মাত্র ৬ দিন। যার মাধ্যমে বায়ুদূষণে রাজধানী গত পাঁচ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
বায়ু নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপস বলছে, ২০১৬ থেকে গত পাঁচ বছরে মানের দিক দিয়ে চলতি জানুয়ারি মাসে বায়ুমান সবচাইতে খারাপ অবস্থায় ছিল। এমন অবস্থায় বিশে^র অন্যান্য দেশে সাধারণত স্বাস্থ্য সতর্কতায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়।
বৈশ্বিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজুয়ালের পরিমাপে রাজধানীর সব এলাকা ধুলাদূষণে আক্রান্ত। বাতাসে ভারী বস্তুকণার দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা তালিকার শীর্ষে।
বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় স্ট্যামফোর্ড এ বিষয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে। গত মাসে পরিচালিত এ জরিপে দূষণের ভয়াবহতা উঠে আসে। এতে বলা হয়, ঢাকার বাতাসে ধুলার পরিমাণ গত বছরের চেয়ে এবার ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর ঢাকায় প্রতিদিন যে ধুলা উড়ে বেড়ায় তার পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার টন।
অন্য দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে ঢাকার বাতাসে প্রতিদিন যে বস্তুকণা ভেসে বেড়ায় তার ৭০ শতাংশই ধুলা। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালামের নেতৃত্বে দলটির পরিচালিত গবেষণায় এমন চিত্র উঠে আসে।
এ বিষয়ে স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়ক ও ভবন নির্মাণসামগ্রী থেকে তৈরি ধুলা, কয়লা ও জৈব জ্বালানি।
তিনি জানান, গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন ঢাকা শহরের গাছপালায় প্রতিদিন ৪৩৬ মেট্রিক টন ধূলিকণা জমে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ১৩ হাজার মেট্রিক টন ধুলা জমে। জমে থাকা ধুলা দিনের বেলা বাতাসের সাথে মিশে যেমন দূষণ বাড়ায়, তেমনই রাতে গাড়ির অতিরিক্ত গতির সাথে বাতাসে উড়তে থাকে। ফলে দিনের বেলার চেয়ে রাতের বেলায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়।
এতে করে রাজধানীতে বসবাসকারীদের ২৪ ঘণ্টাই বিপজ্জনক পরিবেশের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। ফলে নানান স্থাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে অনেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। কারণ তারা জানিয়েছেন, শহরে থাকলে তারা শ^াসকষ্টসহ শারীরিক নানান সমস্যায় ভোগেন। তাই এখন অনেকে শহরতলিতে বসবাসের জন্য আবাসন করছেন। এতেই প্রমাণিত মানুষের বসবাসে ঢাকা এখন অনুপযোগী। তিনি জানান, রাজধানীর দূষণরোধে সংশ্লিষ্টদের তারা কার্যকর কিছু পরামর্শ দিলেও তা কাজে লাগেনি।


আরো সংবাদ



premium cement