২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুভাষের কচুরিপানার হস্তশিল্প যাচ্ছে বিদেশে, হচ্ছে কর্মসংস্থান

সুভাষের কচুরিপানার হস্তশিল্প যাচ্ছে বিদেশে, হচ্ছে কর্মসংস্থান -

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা। ভৌগোলিকভাবে যার দুই-তৃতীয়াংশই চর। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। নদীভাঙনের কারণে চর থেকে অনেকেই অবস্থান নিয়েছে সরকারি বাঁধ ও স্থাপনায়। চারদিকে যখন স্বপ্নের বেড়াজালে মানুষের জীবন দোল খাচ্ছে তখন সেই স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা করছেন সুভাষ চন্দ্র বর্মণ। পৃথিবীর মানুষ স্বার্থের পেছনে ছুটছেন শুধু নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য, আর অনেকেই শুধু শোনাচ্ছেন ভাগ্য পরিবর্তনের গান। সুভাষ তার ব্যতিক্রম, শুধু নিজের ভাগ্য পরিবর্তন নয়, সবার ভাগ্যের পরিবর্তনও করতে চান তিনি। এসব নিম্ন আয়ের মানুষের কাজ দিয়ে তাদের জীবনে পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন তিনি। জেলার সদর উপজেলার তালতলা, দাড়িয়াপুর ও ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়ায় তিনি গড়ে তুলেছেন কচুরিপানাভিত্তিক হস্তশিল্প পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণ নিয়ে চারটি গ্রামের আড়াই শ’ দরিদ্র নারী যুক্ত হয়েছেন এই পেশায়। তালতলা, দাড়িয়াপুর কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষানচর, মদনেরপাড়া, বাগুড়া গ্রামের সবুজে ঘেরা প্রতিটি বাড়ির উঠানে এখন নারীদের মিলনমেলা। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই গোল হয়ে আঙ্গিনায় বসে কি করছেন তারা। কাছে গেলে দেখা যায় গবাদিপশুর খাদ্য কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করছেন ফুলের টব, ঝুড়ি, ভ্যানিটি ব্যাগ মাদুরসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন সৌখিন সামগ্রী।
ফেলে দেয়া পচনশীল, গবাদিপশুর খাদ্য এবং শুকনা কচুরিপানাকে নান্দনিক রূপ দিয়েছেন গাইবান্ধার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা। তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে সৌখিন ঘর সাজানোর সামগ্রী। বিক্রি হচ্ছে দেশ পার হয়ে বিদেশের মাটিতে। আর এ কাজ করে নারীরা এগিয়ে নিচ্ছেন তাদের স্বল্প আয়ের সংসারকে ।
গাইবান্ধা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়ার নিভৃত পল্লীতে ২৫-৩০ জন মহিলা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করছেন ফুলের টব, ঝুড়ি, ভ্যানিটি ব্যাগ, মাদুর। সেখানে কথা হয় মৌসুমী আকতার তমা নামে এক কারিগরের সাথে। তিনি বলেন, কচুরিপানা দিয়ে সুন্দর সুন্দর ব্যাগ, ফুলের টব, ঝুড়ি তৈরি করা যায় তা শুনেছেন একজন প্রতিবেশীর কাছে। এতে তার মনের ভেতরে আগ্রহ জন্মে। কচুরিপানার হস্তশিল্প শেখার জন্য তিনি মদনেরপাড়া সুভাষ চন্দ্র বর্মণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যান এবং কাজ শেখেন। কাজ শেখার পর তিনি এই হস্তশিল্পের কাজ শুরু করেন। সাংসারিক কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে কচুরিপানা দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে দৈনিক আড়ই শ’ থেকে তিন শ’ টাকা আয় করেন।
এই ইউনিয়নের ভাষানচরে হঠাৎপাড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ষাট-সত্তর জন নারী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেখানে কথা হয় কিশামত ফলিয়া গ্রামের হস্তশিল্পের ট্রেইনার আশুরার সাথে। তিনি বলেন, এ কেন্দ্রে যারা কাজ শিখছেন তারা এ বিষয়ে অবগত নন। হাত ধরে তাদের কাজ শিখাতে হচ্ছে, অনেকেই কাঁচামাল নষ্ট করছেন, তারপরও তো শিখাতে হবে। তিনি আরো জানান, প্রথমে এক সপ্তাহ প্রশিক্ষণার্থীরা ভুল করে, পরে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। প্রথমে শিখাতে খারাপ লাগলেও, শেখার পর যখন তারা আয় করতে পারেন তখন খুব ভালো লাগে। এ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফারজানা আকতার ববি। তিনি জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ শিখছি। এ কেন্দ্রে পাঁচ দিন হলো আমি প্রশিক্ষণ নিচ্ছি, মোটামুটি কাজ শেখা প্রায় শেষ। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গত দুই দিন থেকে ২০০-২৫০ টাকার কাজ করতে পারছি। তিনি বলেন, মেয়েরা পড়াশোনার ফাঁকে অবসর সময়ে এ কাজ করে অর্থ আয় করতে পারবেন। বাগুয়া গ্রামের মোর্শেদা বেগম বলেন, সংসারের কাজকর্ম করার পর অবসর সময়ে এ কাজ করি। তারপরও আমার মাসে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা আয় হয়। হাতের কাছে কাজ তাই সমস্যা হয় না।
কচুরিপানার হস্তশিল্প কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সুভাষ চন্দ্র বর্মণ জানান, ২০০০ সালে গাজীপুর পুবাইলে একটি গার্মেন্ট কারখানায় তিনি চাকরি নেন। কিছু দিন পর তার মা দুর্ঘটনার শিকার হন। চাকরির পাশাপাশি মায়ের চিকিৎসাসেবা করেন। অনেক চেষ্টা করেও মাকে তিনি বাঁচাতে পারেননি। তার মা মারা যাওয়ার এক মাস পর তার চাকরিটি চলে যায়। একপর্যায়ে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকেন। এক দিন এক সাইন বোর্ডে দেখতে পান হস্তশিল্প তৈরির কারখানা। সেখানে গিয়ে কথা বলে কাজ শেখেন এবং দৈনিক ইনকাম করা শুরু করেন। ওই কারখানায় প্রায় পাঁচ বছর কাজ করার পর চলে আসেন ২০১৬ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে। প্রথমে ২৫ জন মহিলা দিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন তার চারটি কারখানায় দৈনিক ১০০ জন কর্মী কাজ করছেন। পণ্যর আকারের ওপর ভিত্তি করে মজুরি দেন। প্রতিটি পণ্যসামগ্রী তৈরিতে ২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দেন। তার কারখানার তৈরিকৃত পণ্যসামগ্রী গাজীপুর সেনাকল্যাণ ইকোবাংলা জুট মিল কোম্পানিতে বিক্রয় করেন। বর্তমানে প্রতি মাসে দশ থেকে বারো লাখ টাকার কচুরিপানার হস্তশিল্প পণ্যসামগ্রী বিক্রি করেন। ইকোবাংলা জুট মিল থেকে এসব পণ্য নেদারল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। সুভাষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে এ হস্তশিল্পের প্রসার ঘটিয়ে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
চীনা কোম্পানি বেপজা অর্থনৈতিক জোনে ১৯.৯৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মৃত মায়ের গর্ভে জন্ম নিলো নতুন প্রাণ দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ মারা যায়নি : পুলিশ সুপার হামাসকে কাতার ছাড়তে হবে না, বিশ্বাস এরদোগানের জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তার উদ্যোগ ভালো লেগেছে : সীতাকুন্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১০ দেশের অংশগ্রহণে সামরিক মহড়া শুরু করল আরব আমিরাত গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা?

সকল