লোকসান গুনছেন উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ০৪ মার্চ ২০২১, ০১:৪৪
নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন এলাকায় (মিনি গ্রিড) সরকারি কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় অনেকেই ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছেন। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম হয়েছে উদ্যোক্তাদের। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন সোলার মিনি গ্রিড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এসএমএবি) নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেছেন অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ডিএম মজিবর রহমান। এ সময় সংগঠনের অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএম মজিবর রহমান বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অবহেলিত অঞ্চলে সরকারের উৎসাহে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব এলাকার অবহেলিত মানুষের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও এখন সরকারি কোম্পানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। এতে এক দিকে মিনি গ্রিডের উৎপাদিত বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অন্য দিকে জাতীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে। পাশাপাশি হতাশার মধ্যে পড়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা লোকসানের মুখে পড়ে না পারছেন ঋণ পরিশোধ করতে, না পারছেন প্রকল্প গুটিয়ে নিতে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ পাইকারি হারে কিনে নেয়ার নির্দেশনাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারের উৎসাহে দুর্গম চরাঞ্চল, দ্বীপ ও পাহাড়ে যেখানে গ্রিড বিদ্যুৎ পৌঁছানো কষ্টকর, এমন স্থানের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সোলার মিনি গ্রিডের যাত্রা শুরু হয়। গত এক দশকে ২৬টির মতো মিনি গ্রিড স্থাপিত হয়েছে। এদের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ মেগাওয়াটের মতো। আরইবি, পিডিবি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়েই ২০ বছরব্যাপী মিনি গ্রিড স্থাপনের কাজ শুরু করেন তারা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকল) কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা মিনি গ্রিড স্থাপন করেন। এরপর সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেন। এতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়। কিন্তু এসব এলাকায় সরকারি গ্রিডের বিদ্যুৎ ঢুকে পড়ায় এসব মিনি গ্রিড চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মিনি গ্রিড এলাকায় প্রাপ্ত লোড না থাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিক্রির পরিমাণও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। উদ্যোক্তারা আরো জানিয়েছেন, তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাসিক বিক্রয় মূল্য থেকে মিনি গ্রিডের পরিচালন, সংরক্ষণ ব্যয়সহ সব খরচ বাদ দিয়ে যে টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তা দিয়ে ইডকলের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়। আয় কমে যাওয়ায় ইডকলের ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। এতে তারা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। ফলে উদ্যোক্তাদের অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোড কমে যাওয়ার জন্য উদ্যোক্তারা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের (ওজোপাডিকো) মতো বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ডকে তারা দায়ী করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তারা দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে প্রত্যন্ত অফগ্রিড চর ও দ্বীপ এলাকায় মিনি গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছেন। এই বিদ্যুতের কারণে এসব এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনি গ্রিডের কারণে এসব চর ও ও দ্বীপের ২০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা কম্পিউটার শিখতে পারছে। শিল্পকারখানা স্থাপিত হচ্ছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। কিন্তু সরকারি বিতরণ কোম্পানিগুলো জোর করে বিদ্যুতায়নের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গ্রাহক হ্রাস পাওয়ায় আয় কমে গেছে। মিনি গ্রিড অ্যাসোসিয়েশন সমস্যার সমাধানে তাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের একটা ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে তা বিতরণ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কিনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।