২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চার দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ

-

শাহবাগের মশাল মিছিল ও ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অন্য দাবি দু’টি হলো, লেখক মুশতাক আহমেদের হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খানের সভাপতিত্বে এবং ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল আহমেদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, ফারুক হাসান, মাহফুজুর রহমান, তারেক রহমান, ঢাবি শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন, যুব অধিকার যুগ্ম আহ্বায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সালেহ উদ্দিন সিফাত, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ আহসান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ'র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমানে আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি তাতে লড়াইয়ের বিকল্প নেই। বাঁচতে হলে লড়াই সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হবে না। কারণ এরা সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে ফেলছে, মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। কাজেই লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে, যার শুরুটা হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের মাধ্যমে।
নুর বলেন, যেকোনো সঙ্কটে সম্ভাবনায় সারা দেশের মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। একসময় এমপি-মন্ত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে পায়ের ধুলো নিতো। আর এখন শিক্ষকরা পদের জন্য এমপি-মন্ত্রীদের কাছে ধরনা দেন এটা আমাদের জন্য লজ্জার। দলীয়করণ করতে করতে রাষ্ট্রের সব কাঠামোকে আজকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। জোর-জুলুম করে এই অবৈধ সরকার আর বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লক্ষ্য করে নূর বলেন, নিমগাছ লাগিয়ে আঙ্গুর ফল আশা করলে তো হবে না। যে প্রক্টর মেয়র নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসের হয়ে নৌকায় ভোট চায়, সে প্রক্টরের কাছে শিক্ষার্থীবান্ধব আচরণ কিভাবে আশা করেন? যে ভিসি শিক্ষার্থীদের জঙ্গির সাথে তুলনা করেন, যার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বলতে ১০ টাকায় চা, সমুচা শিঙ্গারা বুঝায় তার থেকে কিভাবে শিক্ষার্থীবান্ধব আচরণ প্রত্যাশা করেন?
পুলিশকে লক্ষ্য করে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, পুলিশের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি করে দাঁড় করে দেয়া হয়েছে। আপনারা রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারী, আপনারা কেন আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের হয়ে কাজ করছেন? আমি এডিসি হারুনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। তিনি ছাত্রলীগের গুণ্ডা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাসে পুলিশের গাড়ি থাকবে কেন? এটাতো কোনো ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বলব ক্যাম্পাসে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিবেন প্রয়োজনে আমাকে হুকুমের আসামি করবেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, তারা সাংবাদিকদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে, তারা লেখকদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। এই আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতায় থেকে আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। তারা আমাদের হত্যা পর্যন্ত করতে চায়।
রাশেদ খান বলেন, কালো আইনের বিরুদ্ধে এই দেশের মানুষ আজো সোচ্চার হতে পারেনি। আজকে প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মতো স্বনামধন্য পত্রিকাগুলো রয়েছে এই পত্রিকাগুলোর যে হতাশা, তাদের যে অসহায়ত্ব তা আমাদের অত্যন্ত কষ্ট দেয়।
ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, গতকালকে টিএসসি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে লেখক মুশতাকের হত্যার প্রতিবাদে যখন শাহবাগে মশাল মিছিলে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা করে এবং সেখান থেকে পুলিশ সাতজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা কোনো ডাকাতি বা ধর্ষণের আসামি ছিল না। কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, পুলিশ পাঠিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখাবেন না। পুলিশ পাঠিয়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রদেরকে হয়রানি করবেন না। আপনাদের পেটোয়া বাহিনী, ডিবি তারা এসে রাজনৈতিক কারণে শিক্ষার্থীদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে আর আমরা শিক্ষার্থীরা বসে বসে আঙুল চুষব এরকম ভাবার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি আমরা আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তার পরে যদি আমরা কোন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে থাকি সেটি আমাদের পরিচয়। সুতরাং সাবধান হয়ে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জায়গাও এখন নিরাপদ নয়। যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কথা বলা হচ্ছে সেই অ্যাক্ট কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে যখন এই আইনে একজন লেখককে জেলের ভেতর হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, এর প্রতিবাদে ছাত্ররা যখন রাস্তায় নেমে আসে, তাদের ওপর নির্যাতন করে তাদেরকে আবার হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ যত শিক্ষার্থীকে বিগত দুই দিনেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সবাইকে মুক্তি দাবি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃত সবার মুক্তি দাবি করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement