১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্যাংক সেবায় গ্রাহক অসন্তোষ অভিযোগ বেড়েছে ৫৬ শতাংশ ষ

-

ফেরদৌসি জামান নামে একজন গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে পাঁচ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা খোয়া যায়। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের হিসাব থেকে এ অর্থ আত্মসাতের সাথে ১৫ ব্যাংক কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করেনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। নিরুপায় গ্রাহক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে অবশেষে ব্যাংক গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সুবাদে গ্রাহকের সেবার মান বাড়ার সাথে সাথে নানা ধরনের হয়রানিও বেড়ে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকের অভিযোগ বেড়ে যাচ্ছে। আগের বছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকের অভিযোগ বেড়েছে ৫৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পড়েছে সাধারণ ব্যাংকিংবিষয়ক ১ হাজার ৫৯৩টি। এ ছাড়া গ্রাহকসেবায় অসন্তুষ্টি ৩১৩টি, চেক জালিয়াতি ২৬টি, রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ৭১টি, এটিএম ও ক্রেডিট কার্ডবিষয়ক ৪৮৩টি ও মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়ে ১২৩টি অভিযোগ পড়ে। সবমিলিয়ে ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধ ৩৪ হাজার ৬৭৮টি অভিযোগ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই জমা হয় ৫ হাজার ৮৯৯টি অভিযোগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ টাকা জমা দিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খুলেন গ্রাহক ফেরদৌসি জামান। পরে বিভিন্ন সময়ে তিনি চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর গ্রাহকের নির্দেশে বাহক টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গেলে হিসাবটিতে পর্যাপ্ত টাকা নেই বলে মৌখিকভাবে জানিয়ে চেকটি ডিজঅনার করেন ব্যাংক কর্মকর্তা। অথচ এর আগে ব্যাংক থেকে সংগৃহীত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী ওই হিসাবে ৫ কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার ১৩৯ টাকা রয়েছে বলে অবহিত ছিলেন গ্রাহক। চেক ডিজঅনারের সংবাদ পেয়ে সাথে সাথেই গ্রাহক স্বামীসহ ওই শাখায় যান। শাখা ব্যবস্থাপক সব কাগজপত্র যাচাই করে টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তার হিসাব থেকে তুলে নেয়া হতে পারে বলে জানান। একই সাথে যত দ্রুত সম্ভব টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। পরে শাখা ব্যবস্থাপক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা বিষয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) জানান। এমডির নির্দেশে ঘটনার তদন্ত করা হয়। পরে তিনিও জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা খোয়া যাওয়ার কথা স্বীকার করে তা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সাথে গ্রাহককে ঘটনাটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়নি। কোনো উপায়ন্তর না দেখে গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেন।
এর ভিত্তিতে জবাব চাইলে ব্যাংক প্রথমেই অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানায়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন, গ্রাহকের হিসাব বিবরণী, গ্রাহকের হিসাব খোলার ফরমসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নিয়ে পর্যালোচনায় করে। এতে দেখা যায় যে, ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে ওই জালিয়াতির ঘটনায় তৎকালীন অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) ও সেন্টার ম্যানেজার সরওয়ারকে দায়ী করা হয়েছে। হিসাবটি খোলা থেকে ব্যাংকিং লেনদেনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বভার তৎকালীন এভিপির ওপর অর্পিত ছিল এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ওই হিসাবটিতে তিনি নিজে জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন করেন। এমনকি গ্রাহকের অজ্ঞাতে হিসাবে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরটিও ব্যাংকের আইটি বিভাগের সহায়তায় পরিবর্তন করা হয়। গ্রাহকের ভুয়া সম্মতি দেখিয়ে হিসাব খোলার পর থেকে চারটি চেক বই ইস্যু করা হয়েছে। অথচ গ্রাহক একটি ছাড়া অন্য কোনো চেক বই নেননি বলে জানান।
এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল ব্যাংকের ভেতরের সিসি টিভি ফুটেজের রেকর্ড পর্যালোচনা করে। এতে দেখা যায়, বর্ণিত চেক বই ব্যবহার করে সব টাকা তৎকালীন এভিপি সরওয়ার উত্তোলন করেছেন এবং ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবরের পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে ওই জালিয়াতির ঘটনায় বিভিন্ন পর্যায়ের ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ দুদকে মামলা দায়ের করার পরও ব্যাংক গ্রাহককে টাকা ফেরৎ দেয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, চেক জাল করে গ্রাহকের হিসাব থেকে অর্থ জালিয়াতি বা প্রতারণার ঘটনায় ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে নিজেদের কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত বলে প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের দাবি করা টাকা ফেরৎ দিতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংককে গ্রাহকের হিসাব থেকে আত্মসাৎ করা ৫ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেয়। এরপর ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহাদি হাসান জুয়েল নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, ব্যাংক অন্যায়ভাবে ঋণ সুদহার বৃদ্ধি করছে। ব্যাংকে অভিযোগ জানিয়েও সমাধান হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট খাতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে গ্রাহকের ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং পত্র মারফত বিষয়টি গ্রাহককে অবগত করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক খাতের তারল্য সঙ্কটের উত্তরণ ঘটলে গ্রাহকের সুদের হার হ্রাস করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক দেখতে পায় গ্রাহককে পাঠানো চিঠিতে প্রাপ্তি স্বীকার নেই। এমনকি ঠিকানাও ভুল লেখা হয়েছে। কোনো তথ্যও দিতে পারেনি ব্যাংকটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে বিষয়টির সমাধান হয়। গ্রাহক আগের সুদহারে ঋণ পরিশোধ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এখন প্রতিনিয়ত অভিযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা সংক্রান্ত। এসব অভিযোগের সবই বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে সেবা পাওয়া ও ঋণ সংক্রান্ত। এসব অভিযোগ একটু সময় লাগলেও অর্থবছরের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে পারছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল