বনানীতে শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু
ধর্ষণ ও রক্তক্ষরণে মৃত্যুর ধারণা : সৎ বাবা আটক- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:৩৫
রাজধানীর বনানী কড়াইল বস্তিতে তানজিলা নামে তিন বছরের এক শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালের দিকে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর শিশুটির সৎ বাবার কথাবার্তা ও আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে আটক করেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল ও পুলিশ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, শিশুটির গালে কামরের দাগ এবং যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্নসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। শিশুটিকে ধর্ষণ এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা। আজ রোববার মর্গে শিশুটির লাশের ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে। জানা যায়, নিহত শিশুটির মা জরিনা বেগম বনানীর কড়াইল বস্তির বেলতলার এরশাদনগর এলাকায় যাদু মিয়ার বাসায় ভাড়ায় থাকেন এবং স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। নিহত তানজিলার বাবার নাম তিতু মিয়া। শিশুটি মায়ের সাথে কড়াইল বস্তির ওই বাসায় থাকত। আর জরিনার স্বামী (শিশুটির সৎ বাবা) মহিউদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরম ল গ্রামে থাকেন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। তিতু মিয়ার সাথে বিচ্ছেদ হলে তাকে বিয়ে করেন জরিনা। কয়েক দিন আগে তিনি বনানীতে স্ত্রীর কাছে আসেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তার আরো দুই সন্তান রয়েছে।
শিশুটির সৎ বাবা মহিউদ্দিনের ভাষ্য, গতকাল সকালে শিশুটির মা গার্মেন্টে কাজের জন্য বের হওয়ার সময় শিশুটিকে তার কাছে রেখে যায়। সে সময় শিশুটি গান শুনতে চাইলে তিনি টিভি ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যান। ঘুম থেকে উঠে দেখেন শিশুটি রুমে নেই। তখন খোঁজাখুঁজি করার পর একই বাসার দোতলার সিঁড়ির পাশে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন। তাৎক্ষণিক বিষয়টি বাড়িওয়ালা যাদু মিয়াকে কল করে জানালে তিনি শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যেতে বলেন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে বেলা ১১টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে মহিউদ্দিন এলোমেলো কথা বললে তার আচরণে সন্দেহ হলে ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তাকে আটক করে বনানী থানায় হস্তান্তর করে।
বাড়িওয়ালা যাদু মিয়া বলেন, শনিবার সকালে মহিউদ্দিন তাকে কল করে জানায় তানজিলা অসুস্থ এবং অচেতন অবস্থায় বাসার সিঁড়ির কাছে পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক তিনি শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। যাদু মিয়া বলেন, মহিউদ্দিন নিহত শিশুর সৎ বাবা। শিশুটির বাবা তিতু মিয়ার সাথে বিচ্ছেদ হলে জরিনা তাকে বিয়ে করেন। ১০ থেকে ১২ দিন আগে জরিনা তার বাসায় ভাড়া ওঠেন।
ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা ধারণা করেছেন।
এ বিষয়ে বনানী থানার এসআই দেলোয়ার হোসাইন জানান, শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। শনিবার যথাসময় শিশুটির মা হাসপাতালে উপস্থিত না থাকায় রোববার ময়নাতদন্ত করা হবে। এসআই বলেন, সুরতহালের সময় শিশুটির ডান গালে, যৌনাঙ্গে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছেÑ শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। তবে প্রকৃত ঘটনা জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা