২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দরপতন অব্যাহত শেয়ারবাজারে

-

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস গতকাল সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
এ দিন লেনদেনের শুরু থেকেই শেয়ারবাজারে সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও, এক ঘণ্টার মধ্যে ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে সূচকের পতনের মাত্রা। সেই সাথে পতনের খাতায় নাম লেখায় একের পর এক প্রতিষ্ঠান। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৭৬টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ২০২টির। আর ৮১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৮৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৫৮৫ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল এক হাজার ৪৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এই হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার ১৫২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে ডিএসইতে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ রবি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, সামিট পাওয়ার, জিবিবি পাওয়ার, সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক এবং পাওয়ার গ্রিড।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১০৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৬টির এবং ৪৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সাত দিনে রবির নেই ৮ হাজার কোটি টাকা : শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর প্রথম ১৫ কার্যদিবস টানা দাম বাড়লেও এখন টানা দরপতনের মধ্যে রয়েছে নতুন তালিকাভুক্ত রবি আজিয়াটার শেয়ার। গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দাম কমার শীর্ষ তালিকায় নাম লেখানো রবির শেয়ার দাম চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই কমেছে। এতে সাত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে আট হাজার কোটি টাকারও বেশি কমে গেছে।
নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং আইপিও খরচের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) শেয়ার ছেড়ে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করা রবি গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম দিন থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৫ কার্যদিবস দাম বাড়ে কোম্পানিটির। এর মধ্যে ১৪ কার্যদিবসেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে তারা। এতে ১০ টাকা দামের শেয়ার দেখতে দেখতে ৭০ টাকা ১০ পয়সায় উঠে যায়। এরপরও কোম্পানিটির শেয়ারের ক্রেতা থাকলেও একপ্রকার বিক্রেতাসঙ্কট ছিল।
তবে গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ১৭ জানুয়ারি প্রথম দরপতনের কবলে পড়ে রবি। ওই দিন লেনদেনের শেষ দিকে বিনিয়োগকারীরা দফায় দফায় দাম কমিয়ে রবির শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছিল না। একই চিত্র দেখা দেয় ১৮ জানুয়ারিও। অবশ্য ২০ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ার দাম আবার বাড়ে। এরপরও গত সপ্তাহে রবি আজিয়াটার শেয়ার দাম কমে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে আট টাকা ৪০ পয়সা।
এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও কোম্পানিটির শেয়ার দরপতনের মধ্যে পড়ে। সেই সাথে দেখা দেয় ক্রেতার অভাব। গত রোববারের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও বড় দরপতন হয় কোম্পানিটির। এতে চলতি সপ্তাহের দুই কর্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার দাম কমেছে সাত টাকা।
অথচ এর আগে কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্কও করা হয়। এ বিষয়ে ডিএসই থেকে বলা হয়, রবির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ৪ জানুয়ারি কোম্পানিটিকে নোটিশ করা হয়। জবাবে কোম্পানিটি জানিয়েছেÑ সম্প্রতি শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই।
লুব-রেফের আইপিও আবেদন শুরু আজ : বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পাওয়া ‘বিএনও’ ব্র্যান্ডের লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন আজ থেকে শুরু। আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা আজ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি, সোমবার পর্যন্ত কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন।
ব্যবসা সম্প্রসারণ (নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও প্রতিস্থাপন), ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ মেটাতে কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে কোম্পানিটি যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে বিডিং সম্পন্ন করেছে। বিডিংয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা কাট অব প্রাসই নির্ধারণ করেছেন ৩০ টাকা। অবশ্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দিয়ে কোম্পানিটির শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেয়া হয় বিডিংয়ে।
যোগ্য বিনিয়োগকারীদের তলব করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি একই কমিশন সভায় লুব-রেফকে আইপিওতে শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন দেয় বিএসইসি। সেই অনুমোদন বলেই এখন কোম্পানিটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement