২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চসিক নির্বাচন

ডা: শাহাদাতের ইশতেহারে ৭৫ প্রতিশ্রুতি

-

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা: শাহাদাত হোসেন জলাবদ্ধতামুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর এবং সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম গড়াসহ ৯টি খাতে ৭৫টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে এই নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষণা করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই ইশতেহারের সেøাগান ছিল ‘চলো সবাই বাঁধো জোট, এবার দেবো আমার ভোট’। বন্দর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে ৯ ভাগে বিভক্ত করে মোট ৭৫টি প্রতিশ্রুতি এবং তা বাস্তবায়নের রূপরেখা দেয়া হয়েছে ইশতেহারে।
প্রধান ৯টি ভাগ হলোÑ জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম, স্বাস্থ্যকর চট্টগ্রাম, শিক্ষাবান্ধব চট্টগ্রাম, গৃহকর ও আবাসন, পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম, নিরাপদ চট্টগ্রাম, সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম, নান্দনিক পর্যটন নগরী ও তথ্য প্রযুক্তি।
ইশতেহার ঘোষণার সময় জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মেয়র প্রার্থী। একই সাথে নির্বাচিত হলে সাবেক সব মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়ে আলোচনা ও সুপারিশক্রমে জলাবদ্ধতা, যানজটমুক্ত, আধুনিক নগরী গড়ে তোলার কথা জানান তিনি।
ইশতেহারে ডা: শাহাদাত বলেন, অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সব খাল উদ্ধার করে খনন করা হবে এবং পানি চলাচলের ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্ষার আগে প্রতি বছর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাল, নালা-নর্দমা সংস্কারসহ পানি চলাচলের উপযুক্ত করা হবে। ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও পাহাড় কাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান তিনি।
নান্দনিক পর্যটন নগরী গড়তে বায়ুদূষণ রোধে চট্টগ্রাম করপোরেশনের উদ্যোগে ইলেকট্রিক বাস চালু করা, রাস্তাগুলোতে সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা, যানজট নিরসনে পর্যাপ্ত ট্রাক ও বাস টার্মিনাল তৈরি করা হবে বলে তিনি জানান। বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানে বিশেষ প্রকল্প নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
নির্বাচিত হলে তথ্য-প্রযুক্তিখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আইটি পার্কসহ আইটি উপ-শহর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন, সিটি করপোরেশন পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা করা হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকিসহ সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
নগরীতে অবহেলিত বিভাগগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিভাগ অন্যতম উল্লেখ করে ডা: শাহাদাতের ইশতেহারে বলা হয়, সিটি করপোরেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলোর সেবা বাড়ানোর পাশাপাশি শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে। কোভিড-১৯ সহ সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। নির্বাচিত হলে বর্তমান গৃহকরের প্রয়োজনীয় বিন্যাস ও সহনীয় রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম গড়তে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগে লোকবল বৃদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন, সংগ্রহ করা বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে কৃষি কাজে ব্যবহার উপযোগী করা, বহুতল ও আবাসিক এলাকার প্রতিটি ঘর থেকে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন তিনি।
সাম্য সম্প্রীতির চট্টগ্রাম গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডা: শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রামের হাজার বছরের ঐতিহ্যের আলোকে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ করার প্রয়াস থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে মাদকাসক্তির ঝুঁকি কমাতে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, কবরস্থান, শ্মশান ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
নান্দনিক পর্যটন নগর গড়তে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নগরীকে অল্প সময়ে বিশ্বের অন্যতম নগরীতে পরিণত করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বিরল প্রকৃতির সৌন্দর্য্যরে আলোকে পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধন করে আধুনিক আকর্ষণীয় পর্যটন নগর গড়ে তোলা হবে। নগরবাসীর সুবিধা নিশ্চিত করে পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশী পর্যটন আকর্ষণের নিমিত্তে দেশী-বিদেশী সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে।
শিক্ষাবান্ধব চট্টগ্রাম গড়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় এনে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে, স্কুলে প্রবেশ, প্রস্থান, ক্লাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও পরীক্ষার ফলাফল সবকিছু যাতে অভিভাবকরা ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে মনিটরিং করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণের ভোট কেড়ে নেয়া মানে আপনার ভোট কেড়ে নেয়া। আপনার আত্মীয়-স্বজনদের ভোট কেড়ে নেয়া। অন্তত চট্টগ্রামবাসী যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement