২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইউনিক আইডিতে আসছে দেশের সব নাগরিক

জন্মনিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্টেও ব্যবহৃত হবে একই আইডি; শিক্ষা চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা গ্রহণেও লাগবে অভিন্ন নম্বর
-

এক ব্যক্তি-একটি আইডি। আর এই আইডিতেই মিলবে সব সেবা। শিশুর জন্মগ্রহণের পর থেকে স্কুলে ভর্তি, পড়াশোনা, বিদেশ ভ্রমণ সব ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হবে এই একটি মাত্র আইডি। জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এমনকি যেকোনো ধরনের সেবা পাওয়ার জন্যও প্রয়োজন হবে অভিন্ন এই নম্বর। অর্থাৎ একটি ইউনিক আইডির আওতায় আসবে দেশের সব নাগরিক। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৯ সাল। কিন্তু করোনা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন করে প্রকল্পের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি দু’টি অংশে বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) ও বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)।
প্রকল্পের কাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্নত বিশ্বের নাগরিকদের সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি ইউনিক আইডি ব্যবহৃত হয়। শিশুর জন্মগ্রহণের পর থেকেই নামের সাথে একটি ইউনিক আইডি সংযুক্ত হয়। সেখানে তার সব ধরনের বৃত্তান্তই থাকে। পড়াশোনা, চাকরি বা ব্যবসা এমনকি তার রক্তের গ্রুপ পর্যন্ত সব তথ্যই ওই ইউনিক আইডিতে রেকর্ড থাকে। ব্যক্তির জীবদ্দশায় যেকোনো সমস্যাই হোক না কেন একটি আইডিতেই তার সহজ সমাধান করা সম্ভব হয়। সরকারের বিভিন্ন দফতরেও এই আইডি সংরক্ষিত থাকে। জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট এমনকি দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো সমস্যা হলেও তাকে ওই ব্যক্তির ইউনিক আইডি নম্বরের আলোকে সহজে সমাধান করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জন্মগ্রহণের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে অনেক শিশুই স্কুলে ভর্তিই হয় না। অথবা স্কুলে ভর্তি হলেও সে কোথায় বা কোন স্কুলে ভর্তি হলো কিংবা পড়াশোনার মাঝপথে ঝরে পড়ল কি না তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কারো কাছেই থাকে না। আবার পড়াশোনা শেষ করার পর সে কর্মজীবনে চাকরি নাকি ব্যবসায় জড়িত হলো সেই রেকর্ডও সংরক্ষিত থাকে না। আবার অনেকে বিদেশেও চলে যায়। এই অবস্থায় জন্মের পরই শিশুকালেই যদি একটি ইউনিক আইডির আওতায় প্রত্যেক নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তাহলে আজীবন একজন ব্যক্তির সব রেকর্ড সংরক্ষণ করাও সহজ হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক (ডিজি) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম নয়া দিগন্তকে জানান, দু’টি সংস্থা শিশুদের ইউনিক আইডি প্রস্তুতের জন্য কাজ করছে। একটি হলো আমাদের ডিপিইর প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন প্রকল্প। আর অন্যটি হচ্ছে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) প্রকল্প। এখানে কাজের সুবিধার্থে ডিপিই শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের শিশু ও শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে একটি সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে এন্ট্রি করছে। অর্থাৎ শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করছে ডিপিই। অন্য দিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলোকে এন্ট্রি করছে ব্যানবেইস। এ ছাড়া জন্মগ্রহণের পর সব শিশুর জন্ম নিবন্ধনে পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রে দেয়া তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখতে কাজ করছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট এনআইডি শাখা। অর্থাৎ তিনটি সংস্থার সম্মিলিত কাজের মাধ্যমেই মূলত আমাদের এই ইউনিক আইডি প্রস্তুতের কাজটি পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) মহাপরিচালক (ডিজি) হাবিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, ইউনিক আইডি প্রস্তুতের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা এখন শুধু সফটওয়্যার-কেন্দ্রিক কিছু কাজ করছি। এ জন্য কয়েকটি সফটওয়্যার কোম্পানির সাথে কাজের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের ব্যানবেইসের অংশে যে কাজ রয়েছে তার জন্য একজনকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনিই মূলত এই কাজটি দেখভাল করছেন। ব্যানবেইসের এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (আইইআইএমএস) আওতায় এই কাজটি পরিচালিত হচ্ছে।
ডিপিইর সূত্র জানায়, এই অংশের যে কাজ রয়েছে সেখানেই কাজের জটিলতা একটু বেশি। কারণ জন্ম নেয়ার পর নির্দিষ্ট একটি সময়ের পরে শিশুদের স্কুলে ভর্তি এবং এর পর তাদের জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করে পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে মিলিয়ে তার পরেই ওই শিশুকে একটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাকে একটি ইউনিক আইডি দেয়া হয়।
ডিপিইর প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন প্রকল্পের পরিচালক আ ব ম আসাদুল আলম বলেন, কাজটি জটিল মনে হলেও পুরো কাজটি শেষ হলে যখন একটি ইউনিক আইডি তৈরি হয়ে যাবে তখন এর সুবিধা পাওয়া যাবে। কাজের সময়কাল নিয়ে তিনি জানান, প্রথমে ২০১৯ সাল নির্ধারিত ছিল। তবে নানা কারণে কাজ শেষ করা যায়নি। যদিও আমাদের টার্গেট ২০২১ সালের ডিসেম্বর। তবে করোনার যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে না এই সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারব। এর পরেও আমরা চেষ্টা করব ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ করতে।
প্রকল্পের কাজের ফান্ডিং (আর্থিক জোগান) প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, প্রকল্পের পুরো কাজটি শেষ করতে প্রাথমিক অবস্থায় এক শ’ ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর পুরো অর্থই আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেই। এখানে কোনো বিদেশী বা অন্য কোনো দাতা সংস্থার কোনো অনুদান নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ডিপিই এবং ব্যানবেইসের প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের পর এর আওতায় পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা ইউনিক আইডি পাবে। আর ১৮ বছর বয়সের পর সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে রূপান্তরিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত

সকল