প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে টিকা নেয়ার আহ্বান ডা: জাফরুল্লাহর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ০২:২১
গণমাধ্যমের সামনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করোনার টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘করোনা টিকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ আহ্বান জানান। করোনার এই টিকাটি যে কার্যকর এবং এটা যে নিরাপদ এ বিষয়ে জনগণকে আস্থায় আনতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডা: জাফরুল্লøাহ চৌধুরী বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যেহেতু আমাদের নেত্রী তাই তাকে দিয়েই টিকা দেয়ার যাত্রা শুরু হোক। তবে, ‘তালিকায় তার নাম এলে তিনি টিকা নেবেন বলেও ঘোষণা করেন।’ তিনি অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী প্রথম করোনার টিকা নিতে চেয়েছেন। তার প্রথমে টিকা নেয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি অন্য একটা কাজ করে দিতে পারেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ৪৩ বিলিয়ন (চার হাজার ৩০০ কোটি) ডলার। এ থেকে মাত্র আধা বিলিয়ন ডলার (৫০ কোটি ডলার) গবেষণা এবং টিকা উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ দিলেই হবে। এই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে আমরা নিজেরাই বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন করতে পারব এবং পাশাপাশি অন্য দেশকেও সহযোগিতা করতে পারব।
ভারত থেকে টিকা আমদানির প্রসঙ্গে ডা: জাফরুল্লাহ বলেন, ভারত থেকে টিকা আমদানির প্রসঙ্গে সরকার প্রথমে বলেছে এটা জিটুজি পদ্ধতিতে (এক সরকারের সাথে আরেক সরকারের চুক্তি) করা চুক্তি। প্রকৃতপক্ষে এটা একটি প্রাইভেট কোম্পানির সাথে আরেকটি প্রাইভেট কোম্পানির চুক্তি। বাংলাদেশ সরকার অর্থ পরিশোধের গ্যারান্টি দিয়ে ওই চুক্তিতে সাক্ষী হয়েছে মাত্র। এখানে বেক্সিমকো ফার্মা এক পয়সাও বিনিয়োগ করেনি বরং বেক্সিমকো এ থেকে যে পরিমাণ লাভ করেছে সে টাকা দিয়ে তারা ফ্রান্সের ওষুধ কোম্পানি সানোফির বাংলাদেশ অংশের ৫৪ শতাংশ তিন কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ড দিয়ে কিনে নিয়েছে। এর মধ্যে আবার ৪৫ শতাংশের মালিক ছিল বাংলাদেশ সরকার।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট ভাইথরোলথজিস্ট অধ্যাপক ডা: নজরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা: জাকির হোসেন, বিএসএমএমইউ’র ফার্মাথকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: সায়েদুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা: মহিবুল্লাহ খন্দকার, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।
টিকা আমদানি প্রসঙ্গে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, কথা ছিল ভারত যে দামে টিকা কিনবে বাংলাদেশও একই দামে পাবে। কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের দামে টিকা পায়নি। তিনি বলেন, টিকার জন্য ১২ শ’ কোটি টাকা বিনা টেন্ডারে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া দুই কোটি টাকার মামলা থেকে রেহাই পাননি। সুতরাং আপনারাও যে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়বেন না, সেই নিশ্চয়তা নেই। তাই আমি সাবধান করে দিচ্ছি, এটি একটি অন্যায় ও ভুল কাজ। সরকারের এ কাজ করা উচিত হয়নি। জাফরুল্লাহ বলেন, সারা পৃথিবীতে যে জিনিসের দাম বেশি থাকে তখন সেই জিনিসের ভেজাল ও নকল তৈরি হয়। কোনো সস্তা ওষুধ কখনোই নকল হয় না। দামি ওষুধই ভেজাল হয়। তাই সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, যতদিন পর্যন্ত সরকারের এই তিন কোটি ডোজ টিকা না দেয়া হবে, ততদিন বেসরকারিভাবে টিকা আমদানি করতে দেয়া উচিত হবে না।
আলোচনা সভায় করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বিএসএমএমইউর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা: নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে টিকাটা বিভিন্ন দেশে দেয়া হচ্ছে এটা ট্রায়াল বেসিসের একটি টিকা। এর আগে তৃতীয় দফার ট্রায়াল হয়েছে। এখন সাধারণের মধ্যে দেয়া হলে এটা চতুর্থ দফার ট্রায়াল (ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন) হবে। এখান থেকে ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে পরে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো কমিয়ে আনা হবে। এখন আমাদের হাতে সময় কম থাকায় ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, রূপান্তরিত করোনাভাইরাসেও ভ্যাকসিনের কার্যকরিতা থাকবে। তবে এই তা ছয় মাসের বেশি থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে কেউ সেরে উঠলে তার শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা খুব বেশি কাজে লাগে না নতুন করে করোনা আক্রমণের সময়। বরং এ ধরনের অ্যান্টিবডি নতুন কারো দেহে করোনা সংক্রমণ ঘটলে ওই অ্যান্টিবডিই করোনা ভাইরাসকে কোষে প্রবেশ করতে সহায়তা করে। সে কারণে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, করোনার টিকা সব ধরনের স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কাজ করবে কারণ টিকাটি সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে।