২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পুঁজিবাজার নিয়ে ডিএসই চেয়ারম্যান

আইটিতে অনেক দুর্বলতা, তবু বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না

-

শতভাগ অটোমেশন হিসেবে ঢাকা স্টকের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) অবকাঠামো যেমনটি হওয়া উচিত ছিল সেটা নেই স্বীকার করছি। আইটির ক্ষেত্রে আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে। তার পরও পুঁজিবাজারে যে ঘটনাগুলো ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে ঘটেছিল সেগুলোর পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মো: ইউনুসুর রহমান। তিনি বলেন, আইটিকে উন্নত করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আগামী জুনের মধ্যে ডাটা সেন্টার সম্পন্ন হবে।
রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নিজস্ব ভবনের ট্রেনিং সেন্টারে গতকাল সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ ডিএসইর বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে, সাবেক সভাপতি মো: রকিবুর রহমান ও শাকিল রিজভী।
ঢাকা স্টকের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, আমি তিন বছর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং সিনিয়র সচিব ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের বলতে পারি ১৯৯৬ ও ২০১০ সাল পর্যন্ত আমাদের লিগ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অত্যন্ত দুর্বল ছিল। আমাদের আইন-কানুনের যথেষ্ট অভাব ছিল। ২০১০ সালের পর আমাদের লিগাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। এখন আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করতে পারি, যে ঘটনাগুলো ১৯৯৬ ও ২০০৯-১০ সালে হয়েছিল, তেমন ঘটনা সামনের দিনে আর ঘটবে না। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এখন সার্ভিলেন্স অনেক শক্তিশালী। চীন আমাদের সাপোর্ট দেবে। তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের ট্রেড যে হারে হচ্ছে, ক্যাপাসিটি সেটা ছিল না।
চেয়ারম্যান বলেন, শতভাগ অটোমেটেড এক্সচেঞ্জ হিসেবে আমাদের আইটি স্ট্রাকচার যেমন হওয়ার কথা ছিল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি স্ট্রাকচার সেই অবস্থায় নেই। এটা আমরা জেনেছি তিন থেকে চার মাস আগে। আপনারা কি চিন্তা করতে পারেন এমন একটি স্টক এক্সচেঞ্জে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট নাই। এর ফল কত খারাপ হতে পারে? জানার পরপরই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা অনেকটা কাজ এগিয়ে নিতে পেরেছি। আমাদের কনসালট্যান্ট নিয়োগ হয়ে গেছে। কনসালট্যান্ট প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে। এটা পরীক্ষা করার পর ফাইনাল রিপোর্ট হবে। এরপর টেন্ডারে গিয়ে আধুনিক একটা ডাটা সেন্টার স্থাপন করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা করি এ বছরের জুনের আগেই এটা হয়ে যাবে। যেটা আরো আগে হওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।
ইউনুসুর রহমান বলেন, যেখানে আইটি ব্যবহার করা হয় সেখানে নিয়মিত অডিট করতে হয়। অডিট করলে জানা যায়, আইটির কোন জায়গাটা দুর্বল আছে, কোনটা সবল। আমরা এখন একটা আইটি অডিট টিম নিয়োগ করার কাজ চূড়ান্ত করেছি। শিগগিরই আইটির অডিটর নিয়োগ হয়ে যাবে। আরো ছোট ছোট অনেক কাজ আমাদের করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশির একটি স্টেকহোল্ডার যে মানের অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থাকে, আমরা ওই মানের একটি অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিয়ে ২৫০টির মতো স্টেকহোল্ডারকে সেবা দিচ্ছি। তাহলে বুঝতেই পারছেন জিনিসটা আমাদের জন্য কতটা কষ্টকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ২০২১ সালের শেষে অথবা ২০২২ সালে চীনের টেকনোলজি কিভাবে গ্রহণ করব, সেটার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন নাসডাক এবং ফ্লেক্সট্রেডের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নাসডাকের সাথে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে ব্যবসার ভলিয়ম বেড়ে গেলে ফ্লেক্সট্রেডের সাথে কিছু কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে রকিবুর রহমান বলেন, গত ২০০৯-১০ সালে আমরা বিনিয়োগকারীদের বলেছিলামÑ আপনারা ঋণ করে পুঁজিবাজারে আসবেন না, স্বর্ণ অলঙ্কার বিক্রি বা বন্ধক দিয়ে আসবেন না। বিদেশে কর্মরত ভাইদের টাকা নিয়ে আসবেন না, অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ নিয়ে আসবেন না। তখন তারা আমার কথা শুনেননি। উল্টো আমার বিরুদ্দে মিছিল করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের টেনশন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিয়ে। উনারা না বুঝে বিনিয়োগ করেন। গত ২০০৯-১০ সালে শেয়ার কিনে আমি ৪৫ শতাংশ লোকসানে ছিলাম। সেই শেয়ার আমি বিক্রি করিনি, ধরে রেখেছি। সেই শেয়ারে আমি আজকে প্রফিট করেছি। কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তো ধরে রাখতে পারবে না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বলব আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করবেন।
শাকিল রিজভী বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোন সেক্টরে বা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান করা হয় না। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করার আহ্বান করা হয়। তবে কোনো কোনো সেক্টরে যদি মেনুপুলেট হয়, তাহলে বিএসইসির সহায়তায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভিলেন্স টিমের উচিত সেটা ধরা। তবে বিনিয়োগকারীদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। বাজার বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। বাজারে গুজব থাকবেই।


আরো সংবাদ



premium cement