১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবেশে ছিনতাই বেড়েছে

-

দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন গাড়িতে যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চলছে। এতে আতঙ্কের মধ্যে গাড়িতে চলাচল করতে হচ্ছে অনেক যাত্রীকে। বিশেষ করে মাইক্রো, হাইস, নোহা গাড়িতে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। তাই অপরিচিত এসব গাড়ি এড়িয়ে চলতে অনুরোধ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিরসরাই, বারইয়ারহাট-সীতাকুন্ডে যারা প্রতিদিন গাড়িতে যাওয়া আসা করেন তাদের টার্গেট করেন সঙ্ঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বিভিন্ন চাকরিজীবী তাড়াহুড়ো করে যাওয়া ও গাড়িতে যাত্রীদের বেশি চাপ থাকার সুযোগ নিয়ে কৌশলে ওই দিন ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটায়। কয়েকটা সঙ্ঘবদ্ধ চক্র ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের টার্গেট করছে বেশি।
মহাসড়কে চলাচলকারী চালকসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ইদানীং যাত্রীবেশে ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়ে যাত্রীরা সর্বস্ব হারাচ্ছেন, কখনো কখনো আহত হচ্ছেন। পুলিশের সাথে হাইওয়ে পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে ভুক্তভোগীরা কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছেন না। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প না থাকা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের স্বল্পতার কারণে বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে কয়েকজন ভুক্তভোগী যাত্রী বলেন, ছিনতাই রুখতে পুলিশকে আরো দায়িত্বের সাথে তৎপরতা বাড়াতে হবে।
এ দিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনে এবং রাতে ছিনতাইকারীর উৎপাত বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। কখনো গাড়িতে যাত্রীবেশে কখনো বা প্রাইভেটকার ও মারুতি মাইক্রোবাসে সঙ্ঘবদ্ধ এসব চক্রের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকেই। গত কয়েক মাসে এমন বেশ কিছু অভিযোগ শোনা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ বা মামলা করেননি। এতে করে দিন দিন মহাসড়কে বেড়েই চলেছে ছিনতাইসহ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের ফেনীর লালপোল থেকে সীতাকুন্ডের কুমিরা পর্যন্ত গত বছরে প্রায় শতাধিক গাড়িতে যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বড়তাকিয়া থেকে একটি মাইক্রোবাসে ওঠেন এক কলেজশিক্ষক। মাইক্রোতে যাত্রীবেশে আরো ছয় ছিনতাকারী ছিল। মিরসরাই সদর পার হওয়ার পর অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। এরপর তার স্ত্রীর কাছ থেকে চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার তিনটা মোবাইল, বারইয়ারহাট ডাচ্ বাংলা বুথ থেকে এক লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে ৩০ হাজার টাকা ও নগদ চার হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজশিক্ষক জানান, ওই দিন বিকেলে ৫টার দিকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য একটি সাদা মাইক্রো বাসে উঠি। মিরসরাই থানা পার হওয়ার পর জোরে শব্দ করে গান বাজিয়ে দেয়। এরপর আমি এবং আমার স্ত্রীকে জিম্মি করে সাথে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর মাইক্রোটি বারইয়ারহাট থেকে আবার বড়তাকিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এভাবে ৫টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চারবার বড়তাকিয়া-বারইয়ারহাট আসা যাওয়া করে। এই আড়াই ঘণ্টা সময়ে আমার ওপর কী পরিমাণ শারীরিক নির্যাতন করেছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। হাতুড়ি দিয়ে আমার শরীরে আঘাত করেছে। অমানুষিক নির্যাতন করেছে। একজন মাফলার দিয়ে পেছন থেকে গলা পেঁচিয়ে ধরে আমার সাথে থাকা এটিএম কার্ড নিয়ে ডাচ্ বাংলা বুথ বারইয়ারহাট থেকে এক লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে তিন হাজার টাকা উত্তোলন করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বড়তাকিয়ার উত্তর পাশে ব্র্যাক অফিসের সামনে চোখে মলম লাগিয়ে আমাদের নামিয়ে দেয়। এরপর একটি সিএনজি যোগে আমরা হাসপাতালে যাই। এ ঘটনায় মিরসরাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। এখনো আমার দুই সন্তান ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে উঠে। আমারও অপরিচিত মানুষ দখলে ভয় লাগে।
৮ জানুয়ারি রাত ৮টা সময় বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে ওঠা ইসলামী ব্যাংক বারইয়ারহাট শাখার কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন, এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে সব ছিনিয়ে নেয় মাইক্রোতে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা। সাথে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আব্দুল মোমিনের এটিএম কার্ড দিয়ে মিরসরাই সদরে অবস্থিত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে। এরপর উপজেলার ছরারকুল এলাকায় অজ্ঞান করে মাইক্রো থেকে তাদের ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত নিয়মিত যাত্রী মঈনুল হোসাইন টিপু বলেন, আমরা যারা নিয়মিত প্রতিদিন যাতায়াত করি আমরা কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অপরিচিত প্রাইভেট কার এবং মাইক্রোতে না উঠি। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় এমন কালো গ্লাসের মাইক্রোগুলো যাওয়ার জন্য ডাকে। এরা কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ আপনার গতিবিধি লক্ষ করে, নজর রাখে। তারপর টার্গেট করে, কোনোভাবে মাইক্রোতে উঠাতে পারলেই ছিনতাই করে। তাই, যতই তাড়া থাক না কেন, এসব গাড়িতে উঠবেন না।
তিনি আরো বলেন, অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে, তারপরও প্রশাসন কেন স্ব-উদ্যোগী হয়ে মাঠে নামছে না জানি না। এমন ঘটনা চলতে থাকলে এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির কর্মকর্তারা আসতে ভয় পাবেন। এবং এটা সামগ্রিকভাবে সবার জন্যই ক্ষতিকর। অচিরেই এসব ছিনতাই-ডাকাতি বন্ধ করা উচিত। আমরা নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে চাই। স্বাভাবিকভাবেই কর্মস্থলে যেতে চাই এবং ঘরে ফিরতে চাই।
এই বিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো: ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ইদানীং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বারইয়ারহাটকেন্দ্রিক সন্ধ্যার পর আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে। আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতার লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই। অপরিচিত প্রাইভেট কার বা গাড়িতে না ওঠাই উত্তম।

 


আরো সংবাদ



premium cement