২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
৭৬ শতাংশ মনে করেন নির্বাচনে হামাস জিতলে ফল মেনে নেবে না ফাতাহ

নির্বাচন নিয়ে ফিলিস্তিনিদের অবিশ্বাস, বিভক্তি, সন্দেহ

-

ফিলিস্তিনিদের অনেকেই দেড় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন আদৌ হবে কিনা, হলেও তা কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসবে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক সন্দিহান। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক হানাহানি, বিচ্ছিন্ন তিনটি অঞ্চল আর নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবিশ্বাসতো আছেই।
দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মধ্যে চলে আসা বিভক্তি কমিয়ে আনতে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চলতি বছরের মে তে ফিলিস্তিনে পার্লামেন্ট ও জুলাইতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। তার প্রধান প্রতিপক্ষ ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন বা হামাসও এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। আব্বাসের এ ঘোষণাকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে খুশি করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক তলানীতে পৌঁছে যাওয়ার পর ফিলিস্তিনিরা এখন বাইডেন প্রশাসনের সাথে বন্ধুত্ব জোরদারের চেষ্টা করছে। তবে আব্বাসের এ নির্বাচনের ঘোষণা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের ডিসেম্বরের এক জরিপে অংশ নেয়া ফিলিস্তিনিদের ৫২ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো নির্বাচন হলে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না বলেই মনে করছেন তারা। নির্বাচনে যদি হামাস জেতে, তাহলে আব্বাসের দল ফাতাহ ফল মেনে নেবে না বলে মনে করেন ৭৬ শতাংশ ফিলিস্তিনি; ফাতাহর জয় হামাস প্রত্যাখ্যান করবে, এমনটা বিশ্বাস করেন ৫৮ শতাংশ।
পশ্চিম তীরের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক বিশ্লেষক হানি আল-মাসরি বলেছেন, ‘আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি, কিন্তু এখনো অনেক দূর যেতে হবে। এখনো অনেক বাধা আছে, সেসব বাধা টপকাতে না পারলে এই পুরো কার্যক্রমই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।’ যেসব বাধার কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) দুই প্রভাবশালী সংগঠন হামাস ও ফাতাহর মধ্যে বৈরিতাও আছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি পর্যবেক্ষকরা। অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অংশ নিতে দেয়া হবে কিনা এবং ৮৫ বছর বয়সী অসুস্থ আব্বাস ফের নির্বাচনে দাঁড়াবেন কি না, কিনারা হয়নি এসব প্রশ্নেরও।
এ দিকে ফিলিস্তিনের কোনো সরকারে হামাস থাকলে সেই সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো ধরনের চুক্তিতে যাবে না বলেও আভাস রয়েছে। হামাস পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্য ফিলিস্তিনে নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি সংক্রান্ত মুখপাত্র বলেছেন, ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে কাজ করতে ইইউ প্রস্তুত। ইইউ একইসাথে ফিলিস্তিনের সব অঞ্চলে নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতা করতে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছে।’
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের এক মুখপাত্র বলেছেন, গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় সক্ষম হয়ে উঠতে ফিলিস্তিনিদের এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে জাতিসঙ্ঘ প্রস্তুত। নির্বাচন ‘ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আব্বাসের ঘোষণা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পূর্ব জেরুসালেমে নির্বাচন আয়োজনে আগের মতো এবারো ইসরাইল অনুমতি দেবে কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফিলিস্তিনিরা গাজা ও পশ্চিম তীরের মতো পূর্ব জেরুসালেমেও নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী।
শনিবার ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান হানা নাসির বলেছেন, ‘আমাদের অন্যান্য বিকল্পও আছে; গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জেরুজালেমের বাসিন্দাদের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা।’ সর্বশেষ ২০০৬ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হামাসের নাটকীয় জয়ের পর ফাতাহর সাথে সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটির বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একপর্যায়ে গৃহযুদ্ধ বেধে যায় এবং পরের বছরই হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। গাজা এখন হামাসের নিয়ন্ত্রণে; আব্বাসের দলের প্রাধান্য ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীরে।
দুই পক্ষ বেশ কয়েকবার আলোচনা ও বিভিন্ন ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছলেও তাদের মধ্যে বিরোধ পুরোপুরি মেটাতে পারেনি। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গত দেড় দশকে নির্বাচনের একাধিক তারিখ ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত তারা তাদের ঘোষণার দিন নির্বাচন করতে পারেনি। বিভিন্ন মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সংগঠন উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগও করে আসছে। আব্বাস বলেছেন, ২২ মে পার্লামেন্ট এবং ৩১ জুলাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০০৫ সালে হওয়ার সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আব্বাস জিতেছিলেন, তার আনুষ্ঠানিক মেয়াদ ছিল চার বছর। নির্বাচন না হওয়ায় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও এক যুগ ধরে তিনি একই দায়িত্বে আছেন।
প্রেসিডেন্টের এবারের ঘোষণায়ও ফিলিস্তিনিরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। গাজার এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘নির্বাচন বাতিলের জন্য হাজারও কারণ খুঁজে পাবে তারা। ইসরাইল, বিদ্রোহী গোষ্ঠী, ক্ষমতা ভাগাভাগি, কতকিছু। আমি আশা দেখছি না।’ করোনাভাইরাসের কারণে দেয়া লকডাউন অমান্য করায় তিনি নিজের নাম বলতে রাজি হননি। বেথেলহেমের ৫৭ বছর বয়সী চিকিৎসক জুহাইর আল-খতিব আবার ব্যাপক আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘এটা ১০০% ভালো সিদ্ধান্ত। আমাদের একটি পরিস্থিতির সূচনা করা উচিত, থাকা উচিত গণতন্ত্র।’

 


আরো সংবাদ



premium cement
সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নৈশ প্রহরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ৬ দাবিতে উত্তাল বুয়েট, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন মোরেলগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১

সকল