অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম বাওয়াছড়া
- এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
- ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০১:৫৮
বাওয়াছড়া কৃত্রিম লেক ও পাহাড়ি ঝর্ণা। উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট। সৌন্দর্যের সাথে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিতালী। পাহাড়ি ঝর্ণার মুখে বাঁধ, পাহাড়িয়া সবুজ গাছের সমারোহ, অতিথি পাখিদের কলতান। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেউ মুগ্ধ হবেন বাওয়াছড়া দেখে। এই স্নিগ্ধ সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে পর্যটকদের। মিরসরাই উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের পাদদেশে এটি অবস্থিত। অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্য। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। শাঁ শাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে পড়ছে লেকে। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। অঝোরে পাহাড়ের এ ‘কান্না’ যে কারো মনে নাড়া দেবে। যেন একটু ছুঁয়ে হাত বুলিয়ে যাই!
প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান করছেন। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধ করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়, যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝর্ণাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছেন পাহাড়ের ভেতরের অবস্থিত হরিণমারা, হাঁটুভাঙ্গা ও আমতলি ঝর্ণায়। বর্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত পর্যটক এখানে ছুটে আসেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। সবুজ শ্যামল আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে বারমাসি ছড়ার মুখে তাই লেকটির নামকরণ করা হয়েছে বাওয়াছড়া লেক। এর মধ্যে সামান্য পথ ছাড়া বাকি পথ গাড়িতে যাওয়া যায়।
টলটলে স্বচ্ছ শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। স্থানীয় লোকদের বাড়ি ও ক্ষেতের আইলের পাশে বেড়ে উঠেছে আম, কুল আর পেঁপের বাগান। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িঙের মিছিল। যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়। চলার পথে শোনা যায় হরিণের ডাক। অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে। এই লেকের ঝর্ণার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। নীল আকাশের বিশালতার নিচে সবুজের সমারোহ। এ যেন প্রকৃতির লীলাখেলা।
ঘুরতে আসা কলেজশিক্ষার্থী ফাহাদ জানান, আমি এখানে প্রথমবার এসেছি। অনেক সুন্দর জায়গা। তবে এখনো পর্যটন অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। সরকার একটু নজর দিলেই এটি হবে চট্টগ্রামের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। এ ছাড়া এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা জরুরি।
পর্যটক শওকত আজিম রিংকু বলেন, এ প্রকল্পকে ইকো ট্যুরিজমের আওতায় এনে যদি উন্নয়নমূলক কাজগুলো হাতে নেয় তাহলে ভবিষ্যতে এটি সম্ভাবনাময় একটি জায়গা হবে। বিস্তীর্ণ পাহাড় এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে কেউ যদি বাস্তবে না আসে তাহলে বুঝতে পারবে না যে, এই জায়গাটা কত সুন্দর। সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে আরো পর্যটক আসবে।
কিভাবে যাবেন : দেশের যেকোনো জায়গা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার ছোটকমলদহ বাজারের দক্ষিণ পাশে নেমে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে প্রকল্পের অবস্থান। সড়কের মূল প্রবেশ মুখে প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। যেকোনো ছোট গাড়ি নিয়ে প্রকল্প পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
থাকা-খাওয়া : লেকের ২০০ গজের মধ্যে রয়েছে ‘বাওয়াছড়া লেক রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট’। এখানে একসাথে ১০ জন থেকে শুরু করে ৩০০ জন পর্যটক একসাথে খেতে পারবেন। এ ছাড়া কমলদহ বাজারে রয়েছে বিখ্যাত ‘ড্রাইভার’ হোটেল। যে হোটেলটি খাবারের জন্য উত্তর চট্টগ্রামে খুব জনপ্রিয়। তবে এখানে থাকার ব্যবস্থা না থাকলেও প্রকল্প এলাকা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান মোড় ও অলঙ্কারে থাকার জন্য রয়েছে মায়ামী রিসোর্ট ও রোজভিও।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা