২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আলোচনায় ১১ শীর্ষ আলেম

কে হচ্ছেন হেফাজতের পরবর্তী মহাসচিব?

-

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার এক মাসের মধ্যেই ইন্তেকাল করেছেন রাজধানীর বারিধারা মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। তার মৃত্যুর পর গুরুত্বপূর্ণ পদটি পূরণ নিয়ে সংগঠনটির নেতাদের মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। এ পদের আলোচনায় ইতোমধ্যে ১০-১২ জন শীর্ষ আলেমের নাম উঠে এসেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কে মহাসচিব হতে পারেন তা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ। বর্তমান নায়েবে আমিরের তালিকায় ১ নম্বরে থাকা মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ দিকে হেফাজতের সাবেক আমির ও দেশবরেণ্য আলেম আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ এনে তার শ্যালক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৩৬ নেতার নামে মামলার আবেদন করায় বেশ বিপাকে পড়েছে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি। এ নিয়ে আজ বুধবার হাটহাজারী মাদরাসায় এক সংবাদ সম্মেলনও ডেকেছে হেফাজতে ইসলাম।
গত ১৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের আমির-মহাসচিবসহ ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আমির ও আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী মহাসচিব নির্বাচিত হন। কাসেমী মহাসচিব নির্বাচিত হয়ে চট্টগ্রাম থেকে বিমানযোগে ঢাকায় পৌঁছলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১৩ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন হেফাজত মহাসচিব। এতে দেশের আলোচিত এ সংগঠনটি মাত্র ২৮ দিনের মাথায় শীর্ষ নেতৃত্ব হারায়। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি পূরণে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে হেফাজত শীর্ষ নেতৃত্বকে। তবে হঠাৎ করেই ৩৬ নেতার নামে মামলা হওয়ায় বিপাকে পড়ছে সংগঠনটি। এ কারণে মহাসচিব হওয়ার আলোচনা চললেও বিষয়টির সুরাহা না করে গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি পূরণ করতে পারছে না হেফাজত।
জানা যায়, হেফাজত মহাসচিব হওয়ার আলোচনায় এরই মধ্যে প্রায় ১২ জনের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বর্তমান কমিটির নায়েবে আমির পদে রয়েছেন। এ ছাড়া যুগ্ম-মহাসচিব পদে থাকাদের নামও রয়েছে আলোচনায়। গত সম্মেলনে মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী ও মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী মহাসচিব হওয়ার সর্বাধিক আলোচনায় ছিলেন। এবারো তাদের নাম জোরেশোরে আলোচনা চলছে। তারা দু’জনই এখন নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বর্তমান নায়েবে আমিরদের মধ্যে মাওলানা সালাহ্উদ্দিন নানুপুরী, মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা সাজিদুর রহমান, ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন ও মাওলানা আব্দুল আওয়ালও আলোচনায় আছেন। বেফাকের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের নাম আলোচনায় থাকলেও তার সম্ভাবনা খুবই কম। উপদেষ্টাদের মধ্যে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। হেফাজতের বর্তমানে চারজন যুগ্ম-মহাসচিব থাকলেও প্রথম দু’জন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব ও মাওলানা মামুনুল হকের নামও স্বল্প পরিসরে আলোচনায় রয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নায়েবে আমিরের তালিকায় ১ নম্বরে থাকা মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীই হতে পারেন হেফাজতের পরবর্তী মহাসচিব। এ ব্যাপারে নুরুল ইসলাম জিহাদী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি নিজে কোনো পদের জন্য চেষ্টা করি না। আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কোনোভাবেই আমি আমার নাম বলিনি। আমার সাথে এ ব্যাপারে হেফাজতের আমিরের সাথেও কোনো আলোচনা হয়নি। হেফাজত মহাসচিব কে হতে পারেন তা বৈঠক হলেই জানা যাবে।
হেফাজতের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন মহাসচিব নির্বাচন করতে আর কাউন্সিল হবে না। শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে পদটি পূরণ করা হতে পারে। তিনি জানান, হেফাজত মহাসচিব হওয়ার আলোচনায় ১০-১২ জনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে।
এ দিকে হেফাজতের সাবেক আমির ও হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা শফীকে মানসিক নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে সম্প্রতি চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেছেন আল্লামা শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন। মামলায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও নাছির উদ্দিন মুনিরসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজানা আরো ৮০ থেকে ৯০ জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
হেফাজতের নেতাদের নামে এ মামলার আবেদন করায় বেশ বিপাকে পড়েছে সংগঠনটি। এ জন্য মহাসচিব পদটি পূরণেও দেরি হচ্ছে। এ দিকে মামলার বিষয়ে কথা বলতে আজ বুধবার বেলা ১১টায় হাটহাজারী মাদরাসায় হেফাজতে ইসলাম ও হাটহাজারী মাদরাসার যৌথ উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে স্থান না-পাওয়া অংশটির উদ্যোগেই এই মামলা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন। তারা এ ব্যাপারে বলেছেন, আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক।


আরো সংবাদ



premium cement