২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

করোনাও কমাতে পারছে না মাদকের বিস্তার

ধরাছোঁয়ার বাইরে রাজধানীর অর্ধশত মূল হোতা
-

করোনাও কমাতে পারছে না মাদকের বিস্তার। অলিগলি থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্লাব সব জায়গাতেই চলছে মরণনেশা মাদক। বরাবরের মতোই মাদকের মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের খসড়া তালিকা অনুযায়ী রাজধানীতে মাদকের অর্ধশত মূল হোতা রয়েছে। তাদের বিপুল কর্মী-সহযোগী রয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক, পরিচালনা পরিষদের সদস্য, এমনকি মাদকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বে থাকা কিছু ব্যক্তিও মাদকের মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের নামে মামলা হলেও তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র মতে, মাদক মামলায় আসামি হয়ে অনেকেই পলাতক। মোহাম্মদপুর, বসিলা, দারুসসালাম, মিরপুর ও রূপনগর এলাকায় মাদকের নিয়ন্ত্রক ইসতিয়াক আত্মগোপনে থাকলেও অনেকেই বীরদর্পে রাজত্ব করছে এলাকায়। তাদের একজন গোলাম মোস্তফা শিমুল। সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় মাদক কারবারের হোতা শিমুলের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। মামলা রয়েছে একাধিক। র্যাবের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিল। ছাড়া পেয়ে আবার মাদকের হাল ধরেছে সে। এ ছাড়াও বংশালের নাছির উদ্দিন, বাড্ডার রিয়াদউল্লাহ, উত্তরার ফজলুল করিম, ভাটারার ছাব্বির হোসেন, আনোয়ারা, আসমা আহম্মেদ ডালিয়া ও রবিউল ইসলাম দম্পতি, ওয়ারীর কামাল হোসেন, যাত্রাবাড়ীর মোবারক হোসেন বাবু, কলাবাগানের শামীম আহমেদ, শামসুর রহমান, ফারজানা ইসলাম স্বপ্না, গেণ্ডারিয়ার রহিমা বেগম, মুগদার পারভীন, উত্তর মাণ্ডার শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ মাণ্ডার আলম, ডেমরার রাজু আহমেদ, মতিঝিলের লিটন, কামরাঙ্গীরচরের খুরশিদা ওরফে খুশি, চকবাজারের দুই ভাই ওমর ফারুক, সুমন, লাল মিয়া, কলাবাগানের নাজমুস সাকিব, মিরপুর-১১ এর ইমতিয়াজ। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন পরিচয়ের আড়ালে অবাধে মাদককারবার করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি মাদকবিরোধী অভিযানে মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতারা গ্রেফতার হলেও পার পেয়ে যায় মূল হোতারা।
শিমুল সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ দখল করে রাতে মাদককারবার পরিচালনা, বিদ্যালয়ের মাঠে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে চাঁদা উত্তোলন, মাঠে টর্চারসেল স্থাপন, বিদ্যালয়ের জায়গায় দোকান করে ভাড়া তোলাসহ নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত। এর প্রতিবাদ করায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ ওই বিদ্যালয়ে ঢুকে তিন শিক্ষককে মারধর করে শিমুল ও তার সঙ্গীরা। সে সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকাবাসী এর বিচার দাবি করেন। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রের শিশির এখন সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা ও সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান।
ওই এলাকার সাবেক কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল বলেন, শিমুল, শিশির চিহ্নিত মাদককারবারী ও সন্ত্রাসী। কিন্তু প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আড়ালে অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে শিশিরের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইলে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুব্রত সরকার শুভ বলেন, সামাজিক পরিচয়ের আড়ালে যারা মাদক কারবারে জড়িত তাদের বিষয়ে যথাযথ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাদের ধরার জন্য আমরা ছক পেতে থাকি, সুযোগ পেলেই আইনের আওতায় আনা হয়। জনপ্রতিনিধিসহ কাউকে ছাড়া দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, মাদককারবারীরা নানা পরিচয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। রাতারাতি বিপুল অর্থের মালিক হতে এই বাণিজ্যে জড়াচ্ছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে রক্ষা পেতে ধর্মীয় পরিচয় ও দলীয় পদ থেকে শুরু করে নানা পরিচয় ব্যবহার করে। মাদককারবারে জড়িতদের আইনের আওতায় নিতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement