২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খেলাপি ঋণের কারণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত ব্যাংক

প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শেয়ারহোল্ডাররা
-

ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার সুদ স্থগিত করা হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের মুনাফায়। আর মুনাফা কমে যাওয়ায় শেয়ারহোল্ডাররা বছর শেষে প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি টাকা আটকে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর নিট আয় কমে গেছে। শুধু ব্যাংকগুলোর নিট লোকসানই বাড়েনি, ডজনখানেক ব্যাংকের ইতোমধ্যে মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর-ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাড়ে ৯৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে সাড়ে ৮১ হাজার কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। এ হিসাবে ১০০ টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৮৬ টাকাই মন্দ ঋণ, যা আদায় অযোগ্য বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এ মন্দ ঋণের বিপরীতে সুদ আয় স্থগিত করে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, মন্দ ঋণের বিপরীতে ধার্যকৃত সুদ ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে আলাদা করে রাখা হয়। অপর দিকে, এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে টাকা এনে শত ভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।
মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারি ব্যাংকগুলোতে হলমার্ক, বিসমিল্লাহসহ বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে। বেসিক ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে। এসব ঋণ দীর্ঘ দিন ধরে অনাদায়ী রয়েছে। মূলত ঋণ কেলেঙ্কারি বেড়ে যাওয়াতেই মন্দ ঋণ বেড়ে গেছে। মন্দ ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক আদালতে মামলা করে থাকে; কিন্তু আইনগত জটিলতায় তা বছরের পর বছর অনাদায়ী থাকে। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেয়া হয়নি।
দেশের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, কোনো নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস অতিক্রান্ত হলে তা শ্রেণিকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ হিসেবে ধরা হয়। এ খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং ভাষায় সাব স্ট্যান্ডার্ড বা নিম্নমান ঋণ বলা হয়। এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ২০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস অতিক্রান্ত হলে তা সন্দেহজনক ঋণ হিসেবে ধরা হয়। এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। আবার ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা ৯ মাস অতিক্রান্ত হলে তা মন্দ ঋণ হিসেবে ধরা হয়। এ মন্দ ঋণের বিপরীতে শত ভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।
জানা গেছে, মন্দ ঋণ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ হিসেবে ধরা হয়। আর এ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর জরিমানা বা তিরস্কার গুনতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিরস্কার বা জরিমানার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যাংকের আয় খাত থেকে টাকা এনে প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
পাশাপাশি, মন্দ ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ ব্যাংকগুলোর আয় খাতে স্থানান্তর করা হয় না। অর্জিত সুদ ব্যাংকের আলাদা হিসাবে স্থগিত করে রাখা হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর-ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাতের ৩৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার সুদ আয় খাতে আনা যায়নি। এটা ব্যাংকের আলাদা হিসাবে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, ৩০ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেশি সুদ স্থগিত করা হয়েছে সরকারি মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের। ব্যাংক ছয়টিতে আলোচ্য সময়ে ৪২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৩৯ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ রয়েছে। এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করার পরেও ১৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে।
৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ১১৯ কোটি টাকাই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। মন্দ ঋণের বিপরীতে আলোচ্য সময়ে সুদ স্থগিত করা হয়েছে ১৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। অপর দিকে, ৯ বিদেশী ব্যাংক আলোচ্য সময়ে ৩১৪ কোটি টাকা এবং দু’টি বিশেষায়িত ব্যাংক সুদ স্থগিত করেছে এক হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement