২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিদেশের শ্রম উইংগুলোকে আরো তৎপর হতে পরামর্শ বিশ্লেষকদের

মিশনগুলোর প্রবাসী কর্মী সেবায় শীর্ষে জেদ্দা
-

মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ বিশ্বের শ্রমবান্ধব দেশগুলোর বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে সৌদি আরবের জেদ্দার শ্রম কল্যাণ উইং প্রবাসী শ্রমিকদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থান করছে। গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কনসুুলেট জেনারেল জেদ্দার কাউন্সেলর (শ্রম) মো: আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ‘শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কর্মতৎপরতা : নভেম্বর ২০২০’ তৈরি করা প্রতিবেদনের মন্তব্যের ঘরে এমনই তথ্য উল্লেখ রয়েছে।
অভিবাসন বিশ্লেষক ও জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বলছেন, শ্রম উইংগুলো যদি আরো বেশি বেশি প্রবাসী শ্রমিকদের সাথে শ্রমবান্ধব আচরণ করতেন তাহলে অনেক সমস্যাই ওই সব দেশ থেকেই সমাধান হয়ে যেত। বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যাওয়া নারী-পুরুষ কর্মীদের আর অযথা দালালদের খপ্পরে পড়ে দেশে ফেরত আসতে হতো না। সে ক্ষেত্রে দেশে ফেরত আসা কর্মীদের মধ্য থেকে মানবপাচারের অভিযোগে এজেন্সির নামে হয়রানিমূলক মামলা মোকাদ্দমাও কমে যেত। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বিবেচনার অনুরোধ জানান তারা।
জেদ্দা শ্রম উইংয়ের কর্মতৎপরতা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে শ্রম আদালত, ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের ৩৮৮টি সদস্যপদ নিবন্ধনে মোট ১৫ লাখ টাকা আয় করা হয়েছে, যা বিশ্বের সব বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে জেদ্দা শীর্ষে রয়েছে বলে প্রতিবেদনের মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া সেইফ হোম ব্যবস্থাপনায় কনসুলেটের আইনি পদক্ষেপে পাঁচজন নারী গৃহকর্মীকে বাংলাদেশে প্রেরণ, ডিপোর্টেশন সেন্টারে অবস্থানরত ৯৫৩ জনকে আইনি সহায়তা দেয়া, ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে পরিচালিত টোল ফ্রি হট লাইনের মাধ্যমে দিন হাজার ৫২১টি ফোন কলের সবগুলো সমাধান করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শ্রম ক্যাম্প, কোম্পানি, হাসপাতাল, ডিপোর্টেশন সেন্টার ও জেলখানা মোট ৯৮ বার ভিজিট করা হয়েছে। তিন হাজার ৫৯০ জনকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩১৯টি স্পেশাল এক্সিটের আবেদনের মধ্যে ৩৫টি ফাইনাল এক্সিট দেয়া হয়। ১৩ জন নারী গৃহকর্মীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করা ছাড়াও শরিয়াহ আদালতে ছয়টি নিস্পত্তিকৃত মামলায় চার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের রায় পাওয়া গেছে। প্রবাসী কর্মীদের লাশ প্রক্রিয়াকরণের জন্য ১২১টি এনওসি ইস্যু করা হয়। এরমধ্যে ৮৮টি লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়। বাকি ৩৩টি লাশ বাংলাদেশে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জেদ্দা কাউন্সেলর আমিনুল ইসলাম এর তৈরি করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা রয়েছে।
গতকাল জেদ্দার কাউন্সেলর (শ্রম) আমিনুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, আগে শ্রম উইং থেকে ১২ মাসের প্রতিবেদন তৈরি করে আমরা প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতাম। আমাদের নতুন রাষ্ট্রদূত ড. জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব নেয়ার পর আমাদের বললেন, যেহেতু প্রতিবেদন ১২ মাসেরই তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে সে ক্ষেত্রে প্রতি মাসের প্রতিবেদন করলে সেটি আরো ভালো হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্বে সব মিশনের মধ্যে জেদ্দা শীর্ষে শুধু ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে। এর ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড দেয়া হচ্ছে। যারা বিদেশে আসবে তাদের ডাটাবেজের আওতায় আনার জন্য। ২০১৩ সালের আগে যারা বিদেশে এসেছেন তাদেরও তো ডাটাবেজের আওতায় আনতে হবে। সেই হিসাবে আমরা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ২২৭ জনকে ডাটাবেজের আওতায় আনতে পেরেছি। সেই হিসাবে আমাদের জেদ্দা মিশন শীর্ষ অবস্থানে আছে বলে জানান তিনি।
গতকাল জনশক্তি প্রেরণকারীদের একমাত্র সংগঠন বায়রার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আবুল বাশার নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, জেদ্দা মিশন প্রবাসীদের যেভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের দূতাবাস/হাইকমিশনের শ্রম উইংগুলো সেবা দিতে পারত, তাহলে আমার মনে হয়, অনেক সমস্যাই ওই দেশ থেকেই প্রবাসীদের সমাধান হয়ে যেত। তিনি বলেন, যারা বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ছে, তারা মিশনগুলোতে গিয়ে স্বাভাবিক সেবা না পাওয়ার কারণেই কিন্তু একপর্যায়ে ভোগান্তি নিয়ে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছে। তখন ওই কর্মীরাই ঢাকায় এসে উপায় না পেয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। কখনো কখনো তারা মামলাও করে দিচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement