২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রিয়াদ হত্যার নেপথ্যে ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ারের সাথে দ্বন্দ্ব

সন্তান হত্যার বিচার দাবি বাবা-মায়ের
-

ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার ফাহাদের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে গায়ে অকটেন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে জুরাইনের এস আহম্মেদ (সালাউদ্দিন) ফিলিং স্টেশনে কর্মী রিয়াদ হোসেনকে (২০)। এ ঘটনায় গ্রেফতার তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জনাববন্দী দিয়েছে। তবে ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, ঘটনা তাৎক্ষণিক।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিয়াদ। এর আগে গত মঙ্গলবার স্টেশনের কয়েকজন কর্মী রিয়াদের গায়ে অকটেন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যা চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় রিয়াদের বাবা মামলা করলে গত বুধবার তিনজনকে গ্রেফতার করে শ্যামপুর থানা পুলিশ। জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবার। জুরাইনের ওই ফিলিং স্টেশনেই কাজ করতেন অনার্সের শিক্ষার্থী রিয়াদ। পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারকে সহায়তা করতে চলতি মাসেই এখানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কে জানত এই চাকরিই কেড়ে নেবে তার জীবন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাকরি শুরু করার পর থেকেই হিসাবরক্ষক ফাহাদ নানাভাবে হেনস্তা করত রিয়াদকে। ঘটনার দিন তীব্র বাগি¦তণ্ডাও হয় দুইজনের মধ্যে। এরপর রিয়াদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ফাহাদ। তার অংশ হিসেবে ২৪ নভেম্বর ফিলিং স্টেশনের স্টাফ রুমে নজেল অপারেটর ইমন ও রনি রিয়াদের গায়ে অকটেন ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। জানা গেছে, নানা অজুহাতে রিয়াদ হোসেনকে গ্রেফতারকৃত আসামিরা বিরক্ত করত। একপর্যায়ে তারা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটায়। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা: পার্থ শংকর পাল বলেন, আগুনে রিয়াদের শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে যায়। তিনি ইনস্টিটিউটের আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আগে থেকেই তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
প্রসঙ্গত, গত ৪ নভেম্বর শ্যামপুর থানা এলাকার জুরাইন মাজার গেট সংলগ্ন এস আহাম্মেদ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের নজেল অপারেটর হিসেবে যোগ দেয় রিয়াদ। সেখানে কাজ শুরুর পর থেকেই তার সাথে খারাপ আচরণ করতেন একই স্টেশনের হিসাবরক্ষক ফাহাদ আহম্মেদ পাভেল। একপর্যায়ে ফাহাদের পরিকল্পনায় মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে ফিলিং স্টেশনের স্টাফ রুমে তার গায়ে অকটেন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় স্টেশনের দুই কর্মী ইমন ও রনি। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। আগুনে তার হাঁটু থেকে গলা পর্যন্ত শরীরের বেশির ভাগ স্থান দগ্ধ হয়। পরে আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় রিয়াদের বাবার অভিযোগে ভিত্তিতে শ্যামপুর থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় মাহমুদুল হাসান ইমন (২২), ফাহাদ আহম্মেদ পাভেল (২৮) ও শহিদুল ইসলাম রনিকে (১৮) গ্রেফতার করা হয়।
এ দিকে আদরের সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা রিয়াদের বাবা-মা। এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন তারা। রিয়াদের বাবা ফরিদ হোসেন বলেন, রিয়াদ সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের শিক্ষার্থী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সে পার্টটাইম সালাউদ্দিন ফিলিং স্টেশনে কাজ করত। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল বড়। জুরাইন কমিশনার মোড়ের নবারন গলির ১৩২৭/১ নম্বর বাসায় পরিবারের সাথে থাকত রিয়াদ। রিয়াদের বাবা গাড়িচালক ফরিদ মিয়া জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ তলায় ভর্তি ছিল রিয়াদ। শুক্রবার রাতে তাকে ওয়ার্ড থেকে চতুর্থ তলায় আইসিইউতে নেয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।
ফরিদ মিয়া আরো বলেন, ইমন হলো আসল আসামি। সে অকটেন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ওর বাবা আমাকে বলে তিনি ওমুক জায়গার নেতা, শ্রমিক লীগের নেতা। এভাবে আমাকে অনেকবার ভয় দেখিয়েছে। টাকা দিয়ে আপস করতে চেয়েছে। কিন্তু আমি রাজি হইনি। একটাই চাওয়া, এ ঘটনায় যেন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। রিয়াদের মা কেঁদে কেঁদে বলেন, মরার আগেও জিজ্ঞাসা করি যে বাবা তোমার গায়ে আগুন দিয়েছে কে, বলে ইমন দিয়েছে। এরপর তিনজন মিলে দিয়েছে আগুন। ওদের বিচার হইলে কলিজায় শান্তি পাব বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, নানা অজুহাতে রিয়াদ হোসেনকে এই আসামিরা বিরক্ত করত। একপর্যায়ে তারা পরিকল্পিতভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা চালায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement