২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খ্যাতিমান সাংবাদিক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী আর নেই

-

বরেণ্য সাংবাদিক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, আন্তর্জাতিক ও সমসাময়িক বিষয়াবলির বিশ্লেষক নয়া দিগন্তের সাবেক অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
হুমায়ুন সাদেক চৌধুরীর পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, গত ১৯ নভেম্বর থেকে তিনি জ্বর কাশিসহ শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হন। তখন থেকে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল দুপুরের দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মরহুম হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী ছিলেন একজন অজাতশত্রু ধরনের সংবাদকর্মী। সদাহাস্যোজ্বল মিশুক ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সংবাদ সম্পাদনা, অনুবাদ এবং সৃষ্টিশীল লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তার প্রথম কর্মস্থল ছিল চট্টগ্রামের দৈনিক নয়া বাংলায়। ঢাকায় তিনি প্রথমে দৈনিক দিনকালÑ পরে মানবজমিন, আমার দেশ, আমাদের অর্থনীতি, পাক্ষিক পালাবদলসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। নয়া দিগন্তে তিনি যুগ্ম বার্তা সম্পাদক এবং পরে অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাব এডিটরস কাউন্সিলের দুইবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন তিনি। ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সদস্য। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, দুইভাই, তিন বোনসহ আত্মীয়স্বজন ও বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
হুমায়ুন সাদেক চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ি গ্রামে ১৯৬০ সালের ৪ মার্চ। ছোটবেলা থেকে বইয়ের সাথে সখ্য ছিল তার। সেই সূত্রে লেখালেখির জগতে। মূলত শিশুসাহিত্যই ছিল তার অঙ্গন। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে হয়, ছড়ার রাজ্যেই তার ছিল প্রধান পদচারণা। তার প্রথম লেখা ১৯৭৬ সালে ছাপা হলেও প্রথম বই কিশোর কবিতাগ্রন্থ ‘এক কিশোরের মন’ প্রকাশ হয় তিন দশকেরও বেশি সময় পরে, ২০০৯ সালে; অ্যাডর্ন থেকে।
ফেসবুকে গত ১৭ নভেম্বর তিনি বর্তমান পরিস্থিতির ওপর একটি স্ট্যাটাস দেন। জীবনের সর্বশেষ তার স্ট্যাটাসটি ছিল এ রকম-
“চারদিকে কেবল শুনি, ''বাঁচাও, বাঁচাও!!''
কাকে বাঁচাব, কী বাঁচাব?
বন্য প্রাণী বাঁচাও, বাঘ বাঁচাও, সাপ বাঁচাও, কুত্তা বাঁচাও... এমন আরো কত কী।
কোনোটাতেই আপত্তি নেই আমার। বাঁচার ও বাঁচানোর অধিকার সবার আছে।
কিন্তু হতাশ লাগে তখনই, যখন কেউ বলে না, ‘মানুষ বাঁচাও!’
পরক্ষণেই ভাবি, কে বলবে ‘মানুষ বাঁচাও!’ বন্য প্রাণী, বাঘ, সাপ, কুত্তা কেউ তো দল বেঁধে মানুষকে মারতে আসছে না, সারা পৃথিবীতে মানুষ নিজেই নিজেকে মারছে। তাকে বাঁচাতে ডাক দেবে কে, আর সে ডাক শুনবেই বা কে!’
গত রাতেই বিশিষ্ট এই সাংবাদিকের লাশ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
শোক প্রকাশ : জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), চট্টগ্রাম সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা (সিজেএফডি), সাতকানিয়া প্রেস ক্লাব সাংবাদিক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
ডিইউজের শোক : ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সদস্য হুমায়ুন সাদেক চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম। গতকাল এক শোক বার্তায় ডিইউজের নেতৃবৃন্দ বলেন, মরহুম হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী ছিলেন একজন সরলপ্রাণ মানুষ। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এই মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement