২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুন্সীগঞ্জে থ্রি এঙ্গেলের ২০০ একর জমি দখল

-

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় নির্বিচারে ভরাট করে দখল করে নেয়া হচ্ছে স্থানীয়দের তিন ফসলি কৃষি জমি, খাল-বিল ও খাস সম্পত্তি। স্থানীয়দের অভিযোগ, থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড বালু দিয়ে ভরাট করছে এসব জমি। জমি ছাড়াও ইতোমধ্যেই বালুতে ভরাট করা হয়েছে এলাকার ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দু’টি খাল। প্রায় ২০০ একর জমি এখন কোম্পানিটি দখল করে নিয়েছে।
সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা ইমাম রাজী টুলুর স্বাক্ষরিত কাগজে দেখা যায়, থ্রি এঙ্গেল দাহ্যিক শিফ ইয়ার্ড অ্যান্ড শ্লিপওয়েজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর নামে জাল দলিলের মাধ্যমে ক্রয়কৃত সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫৩ একর।
নুর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির সম্পত্তি দখল করে নিলে প্রতিবাদ জানানোর পরে জরিমানা দেয়ার কথা বলে আশ^াস দিয়ে জমিটি দখল করে নেয়া হয়। পরে সে আশ^াসের কথা বেমালুম ভুলে গেছে কোম্পানিটি। ১৯৮৭ সালে ৯৯ বছরের বন্দোবস্ত নেয়া তার ৪৪ শতাংশ তিন ফসলি জমিটি এখন ছয় ফুট বালুর নিচে চাপা পড়েছে।
এ ছাড়া কৃষক পরিবারের ১৮১টি তিন ফসলি জমি গিলে খেয়েছে থ্রি এঙ্গেল মেরিন কোম্পানি। কুমুরিয়া খালপাড়ের ৪৯ জনের জমিও এখন ছয় ফুট বালুর নিচে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ঈমান আলী ও মুক্তিযোদ্ধা জামশেদ জানান, করোনা মহামারীর সুযোগ কাজে লাগিয়ে থ্রি এঙ্গেল কোম্পানি তাদের তিন ফসলি জমিসহ ৫০ একরেরও বেশি জবরদখল করে নিয়েছে। কৃষক তমিজ উদ্দিন জানান, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের জমি জবরদখল করে নিয়ে গেছে। এখন পরিবার ও সন্তান নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তারা। স্থানীয়রা জানান, জবরদখল করে নেয়া এসব জমিগুলোতে আলু, ধান, গম, ভুট্টা, পাটসহ সব ধরনের শাক-সবজি চাষ করা হতো।
ভুক্তভোগী আরাফাত সরকার বলেন, ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের ১ দশমিক ৯ একর জমি ভুয়া নাম ব্যবহার করে তাদের নামে খারিজ করে নিয়েছে থ্রি এঙ্গেল মেরিন। পরে আমরা জমির খাজনা দিতে গেলে জানতে পারি জমি আমাদের নামে নেই।
আরেক ভুক্তভোগী আক্তার হোসেন বলেন, কৃষি কাজ করেই আমার সংসার চলে। নয়নগর মৌজায় আমাদের ১৬৮ শতাংশ পৈতৃক জমি ছিল। জমির চার পাশে বড় বড় সীমানা পিলার ছিল। রাতের আঁধারে পিলার ভেঙে বালু ভরাট করে নিয়েছে থ্রি এঙ্গেল।
ভূমিহীন আব্দুল আজিজ বলেন, ২০১৫ সালে সরকার ভূমিহীনদের ২০ শতাংশ করে ফসলি জমি দেয়। সরকার থেকে পাওয়া ওই ২০ শতাংশ জমিতে আমি চাষাবাদ করতাম ২০১৯ সালেও। অথচ এ বছর দুই দফা জোর করে আমাদের জমি ভরাট করে নিয়েছে থ্রি এঙ্গেল। ভূমি অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানানো হলেও তাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মেলেনি।
এমনকি মৃত্যুর সাত বছর পরে জীবিত হয়ে থ্রি এঙ্গেলের কাছে জমি বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে সূর্যবান বিবি মারা যান। হঠাৎ করে ২০১১ সালে তিনি জীবিত হয়ে যান। শুধু জীবিতই হন না, জমিও বিক্রি করেন থ্রি এঙ্গেলের কাছে। সূর্যবান বিবির এনআইডি উপজেলা নির্বাচন অফিসে যাচাই করলে দেখা যায় এনআইডিটিও ভুয়া। এ জাল দলিল সম্পাদন করেন দলিল লেখক হাফেজ আহম্মদ প্রধানের সহকারী দলিল লেখক রেফায়েত উল্লাহ। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, থ্রি এঙ্গেলের অনেকগুলো দলিলই তাদের মাধ্যমে হয়েছে। তবে সূর্যবান বিবির দলিলটার বিক্রেতা জীবিত না মৃত তা তিনি জানেন না। শনাক্তকারী কারা তা-ও তার জানা নেই।
এ বছর করোনা মহামারী ও বর্ষার সময় যখন সবাই গৃহবন্দী, সেই সুযোগে থ্রি এঙ্গেল ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করে দখলে নিয়েছে এসব জমি ও খাল। বালু ভরাটে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও ওই কোম্পানির পোষা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে লাঠি-সোটার ভয় দেখায়। জীবনের ভয়ে সবাই চুপ হয়ে যায়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর মৌজার মেঘনার তীরে গড়ে তোলা থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ড কোম্পানিতে জাহাজ মেরামতের কাজ করছে শ্রমিকরা। এ ছাড়া কোম্পানির একটি পাঁচতলা ভবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
তিন ফসলি জমি রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব আতাউর রহমান বলেন, ভুয়া দলিল তৈরি করার পাশাপাশি অর্পিত জমি, খাস জমি, খাল-নদী এবং ভূমিহীনদের জমি জবর দখল করে বালু ভরাট করে নিয়েছে থ্রি এঙ্গেল। ২০১৯ সালের মে মাসে প্রাক্তন জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা থ্রি এঙ্গেল কোম্পানির কাছ থেকে অবৈধ খাল-জমি উদ্ধারের নির্দেশ দেন গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান সাদিকে। এর কিছু দিন পরেই বদলি হয়ে যান জেলা প্রশাসক। আদেশটি লুকিয়ে রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আমরা সেটি পরে জানতে পারি। এমনকি বুরযখ নদী ও কুমুরিয়া নদীর অস্তিত্বও অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান সাদী। এবারো জমি উদ্ধার করার জন্য বর্তমান জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি দেয়া হয়েছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাছে জেলা প্রশাসকের অনুলিপি নিয়ে গেলে তারা আমাদের এক প্রকার বের করে দেন। ইউএনও সাফ জানিয়ে দেন, ব্যক্তিমালিকানার জমি দেখার দায়-দায়িত্ব তাদের না। আমরা দিশেহারা হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেছি। কিন্তু এখনো প্রশাসন আমাদের জমি উদ্ধারে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান সাদি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কারো জমি ভরাট হয়ে থাকলে আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আমি নিজে ওই এলাকায় গিয়েছি। থ্রি এঙ্গেল যতটুকু জমি কিনেছিল তার চেয়ে অনেক বেশি বালু ভরাট করেছে। ব্যক্তিগত ও সরকারি জমি এবং খালসহ যতটুকু অবৈধভাবে ভরাট করা হয়েছে তার শতভাগ উদ্ধার করা হবে। অন্যায়ভাবে যে কাজ থ্রি এঙ্গেল করেছে, তার বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের পরিচালক লোকমান হোসেনের দাবি, ওই মৌজায় তাদের ৮৮ একর জমি রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬০ একর জমি তারা কিনে নিয়েছেন। তারা কারো জমি দখল করেননি। কিছু জমি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের কাছে অনেকে জমি বিক্রি করতে এসেছেন। তাদের অনেকের কাগজপত্র ঠিক নেই। আমরা তাদের কাছ থেকে জমি না কেনায় তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করছে।
খালের বিষয়ে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের পরিচালক লোকমান হোসেন বলেন, ম্যাপে দু’টি খাল থাকলেও কাগজে নেই। তবে তিনি আরো বলেন, একটি বড় প্রতিষ্ঠান করতে গেলে ব্যক্তি মালিকানা, সরকারি সব ধরনের জমি লাগে। এসব কিছুর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৭ বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে?

সকল