২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রোড অব বোনস

-

রাশিয়ার উত্তর-পূর্বে সাইবেরিয়ার ইয়াকুটস্কের নিকটবর্তী এক হাইওয়ের যেখানে সেখানে মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। কোথাও মাথার খুলি, কোথাওবা হাত-পা বা শরীরের অন্য অংশের হাড়ের টুকরো প্রায় গোটা রাস্তাতেই ছড়িয়ে রয়েছে। এই রকম মানব-অস্থি ছড়ানো পথের নাম হয়েছে ‘রোড অব বোনস’। অবশ্য এর একটি পোশাকি নামও রয়েছে আর৫০৪ কোলাইমা হাইওয়ে। স্তালিন জমানায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে এই হাইওয়ে নির্মিত হয়েছিল। জানা যায়, এই রাস্তা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল সেভভোস্তলাগ লেবার ক্যাম্পের বন্দীদের শ্রম।
১৯৩২ সালে এই রাজপথের সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয় যা ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তা চলে। আর এতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল গুলাগ বা বন্দিশিবিরের আবাসিকদের শ্রম। অনুমান করা হয়, এই পথ তৈরি করতে গিয়ে বহু মানুষ মারা পড়েন। তাদের হাড়গোড় এই রাস্তার নিচেই চাপা পড়ে যায়। গ্রীষ্মে এই অঞ্চলটি আর্দ্র এবং অস্বাস্থ্যকর। শীতকালে অসম্ভব ঠাণ্ডার কারণেও এখানে তেমনভাবে মানববসতি গড়ে তোলা যায়নি। এই দুর্গম জায়গাতেই গুলাগে আটক মানুষের দিয়ে তৈরি করা হয় এই হাইওয়ে। সেই কারণে এই রাজপথ আজ সোভিয়েত জমানার এক লজ্জাজনক স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিবেচিত। স্তালিন জমানার গুলাগে আটক মানুষের জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মারক এই পথ আজ যেন এক জীবন্ত মিউজিয়াম। কোলাইমা অঞ্চলের গুলাগে বন্দী ছিলেন কবি ভারলাম শালামভ। মুক্তি পাওয়ার ১৫ বছর পরে তিনি সেই বন্দিজীবনের স্মৃতিকথা ধরে রাখেন ‘কোলাইমা টেলস’ নামক গ্রন্থে।
আজো রাশিয়ায় এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা স্তালিনকে ‘দেবতা’ বলে মানেন। তাদের মতে, যে নির্যাতন সাধারণের ওপরে হয়েছে, তার জন্য দায়ী পার্টি ও দলের নেতারা। শালামভের স্মৃতিকথাকেও অনেকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। আজকের স্তালিনভক্তরা তাকে আগাগোড়া কল্পিত বলে দাবি করেন। গুলাগের স্মৃতি ধরা রয়েছে আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিনের মতো সাহিত্যিকের রচনাতেও। সুতরাং গুলাগের ভয়াবহতাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। রাশিয়ার উত্তর পূর্বের শহর মাগাডানের সাথে লেনা নদীর তীরে নিঝনি বেস্টিয়াখ শহরকে সংযুক্ত করেছে ‘রোড অব বোনস’। গুলাগের ভয়াবহতাকে গণস্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য মাগাডানে রয়েছে একটি গুলাগ মিউজিয়াম। ১৯৯০ সালের দশকে প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের আমলে ‘রোড অব বোনস’-এর মুখেই তৈরি করা হয় ‘মাস্ক অব সরো’ নামের একটি কংক্রিট ভাস্কর্য। কোলাইমার অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতের স্মারক এই ভাস্কর্য। সম্প্রতি আবার গুলাগের ভয়াবহতাকে উসকে দিয়েছে ‘রোড অব বোনস’ থেকে প্রাপ্ত বেশ কিছু নরকঙ্কাল। অনুমান, ১৯১৭-১৯২২ সালের রুশ গৃহযুদ্ধের সময়ে মৃত ব্যক্তিদের কঙ্কাল সেগুলো। ইন্টারনেট।


আরো সংবাদ



premium cement