২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পাঁচ হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬ জনের যাবজ্জীবন

-

দেশের বিভিন্ন জেলায় গতকাল পাঁচটি হত্যা মামলার রায়ে সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬ জনকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ভ্যানচালক হত্যা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড, ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধু হত্যার দায়ে তিন যুবককে মৃত্যুদণ্ড, বগুড়ায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে একটি হত্যা মামলায় ছয়জনকে যাবজ্জীবন এবং মেহেরপুরে একটি হত্যা মামলায় ১০ ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এসব রায়ে সাতজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
খুলনায় ভ্যানচালক হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড : খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ভ্যানচালক রাশেদুল ইসলাম গাজী হত্যা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। খুলনার জেলা ও দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো: রবিউল ইসলাম, বনি আমিন শেখ ও মো: শহিদুল ইসলামকে হত্যার পর রাশিদুলের লাশ গুম করার চেষ্টার অপরাধে ২০১ ধারায় সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। তিনজনই রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট ভ্যানচালক রাশেদুল ইসলাম গাজী (১৭) বটিয়াঘাটার জয়পুর গ্রামের বাড়ি থেকে তার ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে বের হন। পরদিন ২০ আগস্ট সকালে পুলিশ আমির হামজার বাগানের পাশের একটি ডোবা থেকে তার মাথাবিহীন লাশ এবং ২১ আগস্ট সকালে সেখান থেকে মাথা উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে রাশিদুলের বাবা হালিম গাজী বাদি হয়ে বটিয়াঘাটা থানায় অজ্ঞাতদের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি রবিউলসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধু হত্যার দায়ে তিন যুবকের মৃত্যুদণ্ড : ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে রেজাউল ইসলাম নামে এক যুবককে শ্বাস রোধ করে হত্যা ও আগুনে পুড়িয়ে লাশ গোপনের চেষ্টার দায়ে তিন বন্ধুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বি এম তারিকুল কবীর এ রায় দেন। দণ্ডিতরা হলেনÑ সুইট আলম (২৯), মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ (২৯) ও হাসান জামিল (৩২)। নিহত রেজাউল দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার আন্ধারমুহা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রেজাউল ইসলাম স্থানীয় টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি ওয়ার্ল্ডভিশন-২১ নামে একটি মাল্টিলেভেল কোম্পানিতে চাকরি করত। একই সাথে চাকরি করার সুবাদে আসামিদের সাথে রেজাউলের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রেজাউলের বাজাজ মোটরসাইকেলটি নিজেরা হাতিয়ে নিতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে আসামিরা। ২০১৫ সালের ৪ মার্চ সন্ধ্যায় আসামিরা সবাই মিলে নিহত রেজাউল ইসলামকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর কৈমারী গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা মতো তারা রেজাউল ইসলামকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। পরে তার পরনের কাপড় ও বাঁশঝাড়ের শুকনা ডাল-পাতা দিয়ে লাশ আগুনে পুড়িয়ে বিকৃত করে। আসামি হাসান জামিল ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছে।
বগুড়ায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় স্ত্রী হত্যার দায়ে আব্দুল কুদ্দুস (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২-এর বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির এ রায় ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি আশেকুর রহমান সুজন জানান, আব্দুল কুদ্দুস নাটোরের সিংড়া উপজেলার ভোগা গ্রামের জাহানারা বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করে সেখানেই ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করেন। পরবর্তী সময়ে ওই একই গ্রামের মদিনা বেগম নামে আরেক নারীর সাথে তার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে আব্দুল কুদ্দুস ২০১২ সালে মদিনা বেগমকে বিয়ে করেন। এরপর দুই স্ত্রীকে নিয়ে আব্দুল কুদ্দুস নিজ বাড়ি বগুড়ার কাহালু উপজেলার লক্ষ্মীমণ্ডপ গ্রামে বসবাস শুরু করেন। পরে যৌতুকের দাবিতে দ্বিতীয় স্ত্রী মদিনা বেগমকে মাঝে মধ্যেই নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের ২০ জুলাই মদিনা বেগমকে মারধর করে হত্যা করেন আব্দুল কুদ্দুস। পরে মদিনা বেগমের মা রোকেয়া বেগম বাদি হয়ে কাহালু থানায় আব্দুল কুদ্দুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ আব্দুল কুদ্দুস ও তার প্রথম স্ত্রী জাহানারা বেগমকে অভিযুক্ত করে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দেয়। অভিযুক্ত আব্দুল কুদ্দুসের প্রথম স্ত্রী জাহানারা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাসের আদেশ দেন।
টাঙ্গাইলে হত্যা মামলায় ছয়জনের যাবজ্জীবন
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে একটি হত্যা মামলায় ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অপর ছয় আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাউদ হাসান গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেনÑ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রশিদপুর গ্রামের ওয়াজেদ ও আবুল, আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুল কাদের, চান খাঁ, শহীদ ও রূপ চান। রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
টাঙ্গাইলের পিপি এস আকবর খান জানান, ১৯৯৮ সালের ২২ নভেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রশিদপুর গ্রামের বাহাদুর খাঁ নামের এক ব্যক্তিকে দণ্ডিতরা বাড়ি থেকে অপহরণ করে পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। পরদিন নিহত বাহাদুরের ভাই আব্দুল কুদ্দুস খাঁ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মেহেরপুরে হত্যা মামলায় ১০ ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
গাংনী (মেহেরপুর) সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার করমদি গ্রামের আবু বক্কর শাহ হত্যা মামলার রায়ে ১০ ব্যক্তির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম আব্দুস সালাম এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেনÑ গাংনী উপজেলার করমদি গ্রামের এনামুল হক, জাহিদুল ইসলাম, আব্দুল বারী ও মোহাম্মদ শাহ, রমজান শাহ, সিরাজুল ইসলাম পচা, আলতাফ হোসেন, মিন্টু শাহ, হোসেন শাহ (পলাতক) ও জাকির হোসেন (পলাতক)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৪ জুন গাংনী ইপজেলার করমদি গ্রামের বশির উদ্দিনের ছেলে আবু বক্কর শাহ মাঠে ঘাস কাটছিলেন। ওই সময় পূর্বশত্রুতার জের ধরে আসামিরা আবু বক্করের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালালে আবু বক্কর মারা যান। ওই ঘটনায় আবু বক্করের ছেলে শাহাবুদ্দিন শাহ বাদি হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে গাংনী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চারজনের নাম বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট দেন এবং বিচার চলাকালে আব্দুল লতিফ নামের এক আসামি মারা যান।


আরো সংবাদ



premium cement