২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিভিন্ন স্থানে শিশু ও কলেজছাত্রীসহ ৪ জনকে ধর্ষণ

-

দেশের বিভিন্ন উপজেলায় শিশু এবং কলেজছাত্রীসহ চারটি ধর্ষণ ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বলাৎকারের ঘটনাও রয়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়ায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা, চুয়াডাঙ্গায় দাদা কর্তৃক শিশু নাতনীকে ধর্ষণের মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ধর্ষক দাদাকে গ্রেফতার করেছে। নওগাঁর বদলগাছী ও বরগুনা সদরে দু’টি পৃথক বলাৎকারের ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। ঠাকুরগাঁওয়ে ২০০৭ সালে ধর্ষণ মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে ধর্ষককে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ঘরে ঢুকে কলেজছাত্রীকে (১৮) ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী। ওই ছাত্রীর বাবা জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তিনি খাসের হাট বাজারে ছিলেন। এ সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী প্রেমলাল কৌশলে ঘরে ঢুকে পড়ার টেবিলে থাকা তার মেয়ের শ্লীলতাহানি করে। মেয়ের চিৎকারে পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা তার স্ত্রী এগিয়ে এলে প্রেমলাল দৌড়ে পালিয়ে যায়। ছাত্রীর বাবা আরো অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি বাজার থেকে বাড়িতে গিয়ে আশপাশের লোকজনকে ঘটনাটি জানান। এ সময় প্রেমলাল দাসের বড় ভাই বাবুলাল দাস কয়েকজন সহযোগী নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলে তিনি তাকে ঘটনার বর্ণনা দিলে বাবুলাল দাস ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। পরদিন সকালে তিনি বিষয়টি হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান। ভুক্তভোগী হাতিয়া আদর্শ মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং গামছাখালী গ্রামের বাসিন্দা।
হাতিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কাঞ্চন কান্তি দাস বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার রাতে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার নদাগা হরিশপুর গ্রামে সাত বছরের নাতনীকে (ছেলের মেয়ে) ধর্ষণের অভিযোগে ৫৫ বছর বয়সী দাদা গ্রেফতার হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অভিযান চালিয়ে দর্শনা থানা পুলিশ তাকে আটক করে। এর আগে বিকেল ৫টায় শিশুটির মা শ্বশুরের বিরুদ্ধে তার শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে দর্শনা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের নদাগা হরিশপুর গ্রামের ধর্ষক দাদা তার পুত্রবধূকেও কুপ্রস্তাব দিত। স্ত্রীর কাছে এমন তথ্য পেয়ে ছেলে, তার স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি উজলপুর বিলপাড়ায় এসে বসবাস শুরু করেন। তবে ওই দম্পতির সাত বছরের শিশুকন্যাটি মাঝে মধ্যেই হরিশপুর গ্রামে দাদা-দাদীর বাড়িতে বেড়াতে যায়। এরই একপর্যায়ে গত সোমবার শিশুটি হরিশপুরে দাদা-দাদীর বাড়িতে বেড়াতে গেলে গত মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে শিশুটির দাদী পুকুরে শামুক তুলতে গেলে, বাড়িতে অন্য কেউ না থাকার সুযোগে দাদা শিশু নাতনীকে ধর্ষণ করে। এ সময় ওই শিশুকে ধর্ষক দাদা কাউকে কিছু না বলতে নিষেধ করে ও বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। কিন্তু বুধবার দুপুরে শিশুটি বাড়িতে ফিরে তার মাকে সব বলে দেয়। এ ঘটনা শুনে শিশুটির মা গতকাল বিকেল ৫টায় মেয়েকে নিয়ে দর্শনা থানায় হাজির হয়ে তার শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরে বুধবারই দর্শনা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষক দাদাকে আটক করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশুটি দর্শনা থানা পুলিশের হেফাজতে ছিল।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার ওসি (তদন্ত) শেখ মাহবুবুর রহমান জানান, শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির মা বাদি হয়ে শ্বশুরের বিরুদ্ধে বুধবার দর্শনা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বদলগাছী (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর বদলগাছীতে ৯ বছরের ছেলে সন্তানকে বলাৎকার করায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলার কোলা ইউপির ভোলার পালশা গ্রামের ৯ বছরের শিশুকে বাড়িতে একা পেয়ে একই গ্রামের মৃত নীল চান মণ্ডলের ছেলে আবদুর রাজ্জাক (৫৫) বলাৎকার করে। এ সময় শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে রাজ্জাক পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে শিশুটির পিতা বাদি হয়ে বদলগাছী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সূত্রে থানার এসআই আব্দুল আজিজ আবদুর রাজ্জাককে আটক করে নিয়ে আসে এবং জবানবন্দী প্রদানের জন্য নওগাঁ নারী ও শিশু আদালতে উপস্থাপন করেন। সেখানে আবদুর রাজ্জাক বলাৎকারের বিষয়টি স্বীকার করে বলে পুলিশ জানান।
এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা বাদি আব্দুর রাজ্জাককে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন এবং আসামি আবদুর রাজ্জাককে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নে আইয়ুব আলী (৩৫) নামের এক মাদরাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তিনি সদরে অবস্থিত বুড়িরচর দাখিল মাদরাসার একজন শিক্ষক। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বুধবার রাত ৯টায় বরগুনা সদর থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযুক্ত আইয়ুব আলীর বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়। ঘটনাটি শনিবার দুপুর ঘটলেও নানাবিধ হুমকি ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তা চাপা দেয়ার চেষ্টা চলছিল বলে জানা গেছে। ওই শিশুটির বাবা জানান, শনিবার দুপুরে শিক্ষক আইয়ুব আলী শিশুর সাথে খেলার জন্য তাদের ঘরে যায়। এ সময় ওই শিক্ষক শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে শিশুটি কান্না শুরু করলে তাকে ওই অবস্থায় রেখে চলে যায়। শিশুটির মা বাড়িতে ফিরে তাকে প্যান্ট খোলা ও উল্টো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। কারণ জানতে চাইলে সে মাকে বিষয়টি জানায়।
পরে শিশুটির বাবা আইয়ুব আলীর ভাই সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইলকে ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত করেন। কিন্তু ঘটনা জানার পর ইসমাইল বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। একপর্যায়ে শিশুটিসহ ওই পরিবারকে নিজ বাড়িতে জিম্মি করে রাখে। খবর পেয়ে গণমাধ্যকর্মীরা ওই বাড়িতে গিয়ে পুলিশের সহায়তায় শিশুটিকে মা-বাবাসহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলায় রফিকুল ইসলাম (৪৬) নামের একজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ সময় অভিযুক্তকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় প্রদান করেন ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম ফারুক। দণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার দেহট্রি গ্রামের কুতুব আলীর ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে হরিপুর উপজেলার দেহট্রি গ্রামের কুতুব আলীর ছেলে রফিকুল একই উপজেলার ভবানন্দপুর গ্রামের আমিরুল ইসলামের স্বামী পরিত্যক্ত মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের বাসায় একাধিকবার ধর্ষণ করে।
নেত্রকোনায় ধর্ষণের অভিযোগে সৎবাবা গ্রেফতার
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনায় পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে রাসেল মিয়া (৩৩) নামে এক সৎবাবাকে গ্রেফতার করেছে মডেল থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার শহরের কাটলী এলাকায় এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৯ বছর আগে অভিযুক্ত ধর্ষক রাসেল মিয়ার সাথে ধর্ষিতা ওই কিশোরীর মায়ের বিয়ে হয়। একসময় ওই কিশোরীর বাড়ন্ত শরীরের প্রতি রাসেলের লোলুপ দৃষ্টি পড়লে সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকে। গত মঙ্গলবার রাতে ওই কিশোরীকে একা পেয়ে সৎবাবা রাসেল মিয়া তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কিশোরীকে উদ্ধার করে। ধর্ষিতা নিজেই বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে পুলিশ বুধবার রাতে ধর্ষক রাসেল মিয়াকে আটক করে নিয়ে যায়।

নেত্রকোনা সদর সার্কেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুর্শেদা খাতুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নয়া দিগন্তকে জানান, অভিযুক্ত সৎবাবা রাসেল মিয়াকে বৃহস্পতিবার কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement