২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ঘুরে আসি নীল সাগর

-

নীল সাগর নাম হলেও এটি কোনো সত্যিকারের সাগর বা সমুদ্র নয়। বরং এটি একটি দিঘি। জমির পরিমাণ ৫৩.৯০, জলাশয় ৩২.৭০ একর। নীলফামারী জেলা শহর থেকে উত্তর পশ্চিমে ১৪.৫ কিলোমিটার দূরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গায় অবস্থিত। দিঘি খননের সঠিক সন-তারিখের ইতিহাস অজানা থাকলেও অষ্টম শতাব্দীর কোনো এক তারিখে এই দিঘি খনন কার্যক্রম শুরু হয়। হিন্দু শাস্ত্র পর্যলোচনা সাপেক্ষে অষ্টম শতাব্দী থেকে নবম শতাব্দীতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধে ‘বিরাট রাজা পাণ্ডব’দের এবং রাজা ভগদত্তকৌরব যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পাণ্ডবরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শর্তানুযায়ী ১২ বছর নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। পরাজিত পাণ্ডবরা ‘বিরাট রাজা’র রাজ্যভুক্ত গো-গৃহে আজকের গোড়গ্রাম নামক স্থান নির্বাসনের জন্য মনোনীত করেন। এটা নদী বা কোনো সাগর নয়। একটি বিশাল আকারের দিঘি। সে সময় পাণ্ডবদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নীল সাগর দিঘি খনন করেন রাজা। এই দিঘির পানির গভীরতা প্রায় ২৩ থেকে ২৫ ফুট। পাড় ঘেঁষে পানির গভীরতা ৪ থেকে ৫ ফুট। নীল সাগর দিঘি কিভাবে নীল সাগর হলো সে ইতিহাস জানার প্রয়োজন রয়েছে। দিঘি খননের পর থেকে বেশ কয়েকটি নামে ইতিহাস রয়েছে। বিরাট দিঘি অপভ্রংশের কালক্রমের ইতিহাসে ‘বিরাট দিঘি’, বিল্টাদিঘি এবং সর্বশেষে ‘বিন্না দিঘি’ নামকরণে পরিচিতি ছিল। এখন এসব নামের পরিচিতি ভাটা পড়েছে। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন নীলফামারী মহকুমা প্রশাসক আ: জব্বার এ দিঘিকে পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে সংস্কার করেন। পাশাপাশি এ দিঘির নামকরণ করেন নীল সাগর। তখন থেকে দিঘিটি ‘নীল সাগর’ দিঘি নামে চারি দিকে সুপরিচিত হয়ে উঠে।

নীল সাগর দিঘির চারি পাশে মাটির তৈরি গড় বা মাটির আলি দ্বারা ব্যাষ্টিত। গড়ের চার দিকে দেশী ও বিরল প্রজাতির ফলসহ নানা রকম সবুজ গাছের শীতল ছায়া বিরাজ করছে। এসব সবুজ গাছপালা সংরক্ষণের সুব্যবস্থা রয়েছে। আনন্দ, বিণোদন ও অবকাশ যাপনে মনোমুগ্ধকর, প্রাণবন্ত পরিবেশ বিদ্যমান, যা সবার জন্য পরিবেশবান্ধব। দিঘির ৩২.৭০ একর জলাশয়ে নানা প্রজাতির দেশী-বিদেশী মাছ রয়েছে। রয়েছে আয়ের সুব্যবস্থ। নীল সাগর একটি সরকারি পর্যটক কেন্দ্র। এটি পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসককে সভাপতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) সদস্যসচিব করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে নীল সাগর পর্যটক কেন্দ্র পরিচালিত হয়ে আসছে। 

নীল সাগর পর্যটক কেন্দ্রের নানাবিধ আয়ের উৎসব রয়েছে। তবে প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছেÑ দর্শনার্থী প্রবেশ ফি ১০ টাকা, বাইসাইকেল ফি ১০, মোটরসাইকেল ৫০, কার-মাইক্রো জিপ ১০০, মিনিবাস ২০০, মৎস্য এ্যালিং ১৫০০, রেস্টহাউজ ভাড়া ১৫০০ (ভিইপি), আধা সেমি-১২০০ (সেমি ভিইপি) ও সাধারণ ১০০০ টাকা।

চিত্ত বিনোদনের জন্য রয়েছে নানা রকমের ব্যবস্থা। যেমন ঘোড়ার গাড়ি, নাগর দোলা, দোলনাসহ নানা রকমের খেলনা। এসব খেলনা উপকরণ বা সামগ্রীতে চড়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মনের আনন্দে বিনোদন উপভোগ করে। নীল সাগর পর্যটক কেন্দ্রে কেয়ারটেকার, পাহারাদার, মালিসহ প্রয়োজনীয় জনবল রয়েছে। এখানে প্রতি বছর অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত নীল সাগরে অতিথি পাখির উৎসব মেলা শুরু হয়। পাখির কলকাকলি, কিচিরমিচির গান আর দর্শানার্থীদের মনোমুগ্ধকর আনন্দে পরিবেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। ভরে উঠে সবার হৃদয় প্রাণ। তবে অক্টোবর ১৩ তারিখ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মাৎস্য এ্যালিং বন্ধ থাকে। নীল সাগর পর্যটক রেস্ট হাউজ দ্বিতলকরণ, কক্ষে শীততাপ যন্ত্র স্থাপন, বাউন্ডারি ওয়াল উঁচ্চুকরণ, দিঘির চতুর্দিকে পাকা রাস্তা নির্মাণ দীঘির সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নীলফামারী জেলা শহর থেকে ধোপাডাঙ্গা সড়ক পথে বাস, মাইক্রো, কার, মিশুকে আসা-যাওয়া করা যায়। নীল সাগরের পাশেই নীল সাগর বাজারে স্বল্প খরচে খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement