২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠি

সৌদিগামীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য জরুরিভাবে দূতাবাসের সাথে বসার তাগিদ

-

সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক বিদেশগামীদের মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র সচিব বরাবর লেখা এক চিঠিতে সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় সৌদি আরব দূতাবাসের সাথে একটি সভা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অন্য দিকে, গত ২২ অক্টোবর ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে কর্মীদের ভিসা সংগ্রহকালে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে চিঠি দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
মূলত বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমদ এমপি গত ১৮ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বরাবর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই চিঠি চালাচালি। করোনাকালে ভিসাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে যেতে পারেননি প্রায় ৮৬ হাজার বিদেশগমন ইচ্ছুক। তাদের ইতোমধ্যে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সহজ করাসহ বায়রার পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রায় ৮৬ হাজার কর্মী (যার অধিকাংশই সৌদি আরবে গমন ইচ্ছুক) বিদেশ প্রেরণ করতে পারেনি। ওই কর্মীদের মধ্যে ৪৭ হাজার কর্মীর ভিসা স্ট্যাম্পিংসহ মেডিক্যাল টেস্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, বহির্গমন ছাড়পত্র এমনকি বিমান টিকিটও কনফার্ম করা হয়েছিল। অবশিষ্ট ৩৯ হাজার কর্মীর ভিসা এডভাইস মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে তাদেরকে বিদেশে প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি। ইত্যবসরে ঢাকায় রাজকীয় সৌদি দূতাবাস কর্তৃক জারিকৃত নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে যে, সব মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা সৌদি সরকার কর্তৃক বাতিল করা হয়েছে। কর্মী প্রেরণে প্রত্যাশী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সৌদির নিয়োগ কর্তা/কোম্পানিগুলো থেকে নতুনভাবে ইলেকট্রনিক ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নতুনভাবে গামকা মেডিক্যাল টেস্ট, নতুন ভিসা স্ট্যাম্পিং, নতুনভাবে বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণ এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স গ্রহণ করতে হবে। তা ছাড়া এটি নির্বাচিত কর্মীদের অভিবাসন ব্যয়ও অনেকাংশে বৃদ্ধি করে দেবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রিক্রুটিং এজেন্সি কিংবা নির্বাচিত কর্মীদের কেউই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করার মতো অবস্থায় নেই। কোভিড মহামারীর কারণে এজেন্সি কিংবা নির্বাচিত কর্মীরা অতিরিক্ত টাকা খরচে অপারগ। এ ছাড়া, অনেকের সাথে যোগাযোগ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে ইলেক্ট্রনিক ওকালা সংগ্রহ করাটা প্রায় অসম্ভব।’
বায়রার পত্রের সূত্র ধরে চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘সৌদি দূতাবাস কর্তৃক সব এজেন্সির মালিকদেরকে স্নাতক পাসের সার্টিফিকেট দূতাবাসে জমা প্রদানের জন্য নোটিশ দিয়েছে, যা অনেকের পক্ষেই অসাধ্য। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বর্ণিত উৎসগুলো নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের সাথে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনা করা দরকার। সে ক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি এবং ইস্যুকৃত ভিসা বাতিল না করাসহ চারটি ইস্যুতে সৌদি দূতাবাসের সাথে আলোচনায় বসার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।’ জরুরি ভিত্তিতে সৌদি দূতাবাসের সাথে এ বিষয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশপাশি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বায়রার প্রতিনিধিকেও আলোচনায় সম্পৃক্ত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
এর আগে ২২ অক্টোবর ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে কর্মীদের ভিসা সংগ্রহকালে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে চিঠি দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে কর্মীদের ভিসা সংগ্রকালে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপনের প্রস্তাবনা নিয়ে বিগত ২০১৯ সালের ২৫ জুন একটি আধা-সরকারি পত্র প্রেরণ করেছিলাম। এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে কি না বা কোনো অগ্রগতি আছে কি না তা জানা যায়নি।’
চিঠিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আরো বলা হয়, ‘আপনি অবগত আছেন যে, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনপূর্বক কর্মীগণকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রদান করা হয়ে থাকে। আপনি জানেন, ঢাকাস্থ রাজকীয় সৌদি দূতাবাস সৌদি আরব গমনেচ্ছুক কর্মীদের স্থায়ী ঠিকানার সংশ্লিষ্ট থানা হতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহপূর্বক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে সত্যায়িত না করা হলে কর্মীদের পাসপোর্ট ভিসার জন্য গ্রহণ করছে না। উক্ত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহে কর্মীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় এবং এতে কর্মীগণ আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারীর এই ক্রান্তিকালেও সৌদি সরকারের চাহিদামাফিক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে কর্মীগণকে সৌদি আরব যেতে হচ্ছে। সময়মতো ক্লিয়ারেন্স না পাবার কারণে তাদের ভিসার মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় তারা সৌদি আরব যেতে পারছেন না।’
চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, সৌদি আরব গমনেচ্ছুক কর্মীগণের বিড়ম্বনা কমাতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স/প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কার্যালয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই প্রস্তাবনা কার্যকর করা গেলে চলমান সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে মর্মে আমি বিশ্বাস করি। এমতাবস্থায় সৌদি আরবে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কর্মীদের দ্রুত প্রেরণের স্বার্থে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দ্রুততম সময়ে প্রদানের ব্যবস্থা করা অথবা প্রস্তাবিত ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপনের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদানের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ জানাচ্ছি।’


আরো সংবাদ



premium cement