২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুনঃঅর্থায়ন তহবিলে অনাগ্রহ ব্যাংকগুলোর

তিন ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়ার আবেদন
-

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ১০০ টাকা ধার নিতে এক থেকে দুই টাকা ব্যয় করতে হয়। সেখানে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে সহযোগিতা নিলে ব্যয় হয় সাড়ে চার শতাংশ। তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে ব্যাংকগুলো তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ইতোমধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা গ্রহণ করেছিল তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ওই টাকাও ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ফেরত দিতে চাচ্ছে। গতকাল এমন তিনটি ব্যাংক তহবিল ফেরত দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ঋণ বিতরণে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করায় প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই এখন উদ্বৃত্ত তহবিল রয়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে অনাগ্রহ থাকায় বাজারেও টাকার চাহিদা কমে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে। সরকারি আমানতের বড় একটি অংশই থাকে সরকারি ব্যাংকগুলোতে। পর্যাপ্ত তহবিল হাতে থাকলেও সরকারি ব্যাংকগুলো চলমান পরিস্থিতিতে ঋণ বিতরণ করছে না। ফলে তারা টাকা অলস বসিয়ে না রেখে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ধার দিতে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এর ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি তহবিল আসায় কলমানি মার্কেটে সুদহার ২ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।
সরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকও বড় কিছু ঋণ বিতরণ ছাড়া ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ দিচ্ছে না। তারাও টাকা অলস বসিয়ে না রেখে কলমানি মার্কেটের পাশাপাশি সরকারি খাতে ঋণ বিতরণে আগ্রহী হয়ে পড়েছে।
এ দিকে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ওই প্যাকেজ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হয়। প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে সুদহারের ওপর ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ছোট ও মাঝারি খাতের ঋণে ৯ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ এবং বড় শিল্প ও সেবা খাতের ঋণের সাড়ে চার শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়; কিন্তু এতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেনি। এর কারণ হিসেবে তহবিল সঙ্কটের কথা বলা হয় ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর তহবিল সঙ্কট মেটানোর জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেক জোগান দেয়ার ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, কেউ প্রণোদনা প্যাকেজে ঋণ দিলে ঋণের অর্ধেক তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংক সরবরাহ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আশা করেছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে ঋণ বিতরণ করবে; কিন্তু এতেও ব্যাংকগুলো তেমন সাড়া দিচ্ছে না। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে তেমন কোনো ঋণই বিতরণ করছে না ব্যাংকগুলো। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, এ পর্যন্ত ১০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করেনি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আবেদন করেছিল। এতে দেখা যায়, বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের মাত্র ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। সস্তায় তহবিল মেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার আবেদন করলেও পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গ্রহণ করে তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ওই তহবিলও ব্যাংক এখন ফেরত দিতে চাচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, তাদের হাতে পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে। এ ছাড়া সঙ্কট দেখা দিলে কলমানি মার্কেট থেকে ১ বা ২ শতাংশ হারে তহবিল জোগাড় করা যায়। সেখানে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গ্রহণ করা হলে তারা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হন সাড়ে ৪ শতাংশ। কারণ ১০০ টাকা ঋণ দিলে সরকার সাড়ে ৪ শতাংশ সুদের ওপর ভর্তুকি পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিলে ওই ভর্তুকি পাওয়া যাবে না। যেখানে ২ শতাংশ তহবিল জোগাড় করা যায়, সেখানে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ব্যবহার করলে তাদের নেট লোকসান হয় আড়াই শতাংশ। এ কারণে, বর্তমানে যেহেতু বাজারে পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে, তাই তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল ফেরত দিতে চাচ্ছেন। এমন একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল ফেরত দেয়ার জন্য তিনি আবেদন করেছেন। আগামী রোববার বা সোমবারের মধ্যেই তা সমন্বয় করা সম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজের পুরো অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করলে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ব্যবহারের প্রয়োজন হতো; কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এতে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রধান উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement