শিক্ষার্থী অভিভাবকের ক্ষোভ লাঘবে কমছে টিউশন ফি
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
করোনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও থেমে নেই বিভিন্ন ফি আদায়। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসব বিষয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রতিবাদ। সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অযাচিত ফি মওকুফের জন্য আন্দোলনও শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে টিউশন ফি কমানোর নতুন নির্দেশনা জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগিরই তা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানিয়ে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য এর আগে গত বুধবার এইচএসসির ফরম পূরণের অব্যয়িত অর্থ ফেরতের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা বোর্ডগুলো।
সূত্র মতে, প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষাসহায়ক নানা ফি আদায়ের ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা প্রথমে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েও আশানুরূপ ফলাফল পাননি। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করেন তারা। গত জুন মাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি নিজেই প্র্রতিষ্ঠান প্রধানদের টিউশন ফি আদায়ে আরো নমনীয় ও মানবিক হওয়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু তারপরেও বন্ধ হয়নি অতিরিক্ত অর্থ আদায়। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভও প্রদর্শন করেন তারা।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা কয়েক দিন বিক্ষোভ করেছেন অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে। কয়েকজন শিক্ষার্থী নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা শুরু থেকেই টিউশনসহ অন্যান্য ফিতে ৩০ ভাগ ছাড় দাবি করেছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠান আমাদের কোনো দাবিই আমলে না নিয়ে বরং আরো কিছু অযৌক্তিক ফি চাপিয়ে দিয়েছে। তারা আরো জানান, আমরাতো সারা বছরই শিক্ষাসহায়ক যাবতীয় ফি পরিশোধ করছি। কিন্তু এখন করোনার কারণে বলেছি, আমাদের কিছু ছাড় দেয়ার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ। করোনার মধ্যে যেখানে প্রতিষ্ঠানই বন্ধ সেখানে কোন যুক্তিতে আমরা লাইব্রেরি ফি ২২৫০ টাকা, সাইন্স ল্যাব ফি ৫ হাজার টাকা, কম্পিউটার ল্যাব ফি ৩৭৫০ টাকা দেবো? এসব মিলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা করে অযৌক্তিকভাবে দাবি করছে ওই বিশ^বিদ্যালয়। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে টিউশন ফি কমানোর আশ^াস দিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান।
এ দিকে করোনা মহামারীর মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধ অবস্থায় উচ্চতর ক্লাসে প্রমোশনের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আসার আগেই বকেয়া টিউশন ফি আদায়ে অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ আছে ঢাকার বেশ কিছু নামী বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে। এতে অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, বছরের শেষ দিকে এসে টিউশনসহ বিভিন্ন নামে অন্যান্য ফি সম্পূর্ণ পরিশোধ না করতে পারলে বিদ্যালয়গুলো হয়তো তাদের সন্তানদের পরবর্তী ক্লাসে তুলবে না।
যদিও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দাবি, টিউশন ফির জন্য কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে না। বিদ্যালয় চালানো ও শিক্ষকদের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের বুঝিয়ে টিউশন ফি সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে অভিভাবকরা জানান, স্কুল থেকে বারবার ফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়ে টিউশন ফি পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। অভিভাবকরা আরো জানান, রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটসহ আরো বেশ কিছু স্কুল থেকে টিউশনসহ অন্যান্য ফি পরিশোধের চাপ দেয়া হচ্ছে
এ দিকে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি কমানোর জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করা হবে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশির) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, ফি কমাতে ঢালাওভাবে কোনো নির্দেশনা দেয়া হবে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কিছু অভিভাবক নানাভাবে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। তাদের সন্তানদের টিউশন ফি আদায়ে কিছুটা ছাড় দিতে বলা হবে। তিনি আরো জানান, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের জেলা শহরের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এমন প্রতিষ্ঠানের হার প্রায় ২০ শতাংশ হতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানে যেসব শিক্ষার্থী টিউশন ফি দিতে পারছে না তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা তৈরির কাজ শুরু করেছি। চলতি মাসের মধ্যে এটি জারি করা হবে।